Share Market, MF এর যুগেও সবাই এত GOLD কেনে কেন? কারণটা অবাক করবে

হলুদ, সূর্যের মতো ঝলমলে। মানুষের সভ্যতার সবচেয়ে পুরনো 'মোহে'র তালিকা করা হলে, তাতে সোনা নিঃসন্দেহে প্রথম ১০ এ থাকবে। আসলে আজ আমরা যে টাকা বা ডিজিটাল কারেন্সিতে লেনদেন করি, সেটা পারতপক্ষে নতুন কনসেপ্ট। এ যুগে সবাই টাকার পিছনে ছোটে।

Advertisement
Share Market, MF এর যুগেও সবাই এত GOLD কেনে কেন? কারণটা অবাক করবে সোনার দামের আসল কারণটা বুঝুন।
হাইলাইটস
  • হাজার হাজার বছর আগেকার 'রিপু' এখনও মানব মস্তিষ্কের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গাঁথা।
  • সোনা যে বেশ বিরল, তা বলাই বাহুল্য।
  • এই সোনার প্রায় ৪৫ শতাংশ ব্যবহৃত হয় অলঙ্কার তৈরিতে।

হলুদ, সূর্যের মতো ঝলমলে। মানুষের সভ্যতার সবচেয়ে পুরনো 'মোহে'র তালিকা করা হলে, তাতে সোনা নিঃসন্দেহে প্রথম ১০ এ থাকবে। আসলে আজ আমরা যে টাকা বা ডিজিটাল কারেন্সিতে লেনদেন করি, সেটা পারতপক্ষে নতুন কনসেপ্ট। এ যুগে সবাই টাকার পিছনে ছোটে। কিন্তু সেই হাজার হাজার বছর আগেকার 'রিপু' এখনও মানব মস্তিষ্কের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গাঁথা। কিন্তু এই সোনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণের কারণ কী? পৃথিবীতে সোনা এলই বা কীভাবে?

যদি মানব সভত্যার খনন করা সব সোনা একসঙ্গে জড়ো করা হয়, তাহলে তা দিয়ে মাত্র ২১ মিটার দৈর্ঘ্যের এক ঘনক্ষেত্র(Cube) বানানো যাবে। পৃথিবীর মোট সোনার পরিমাণ এইটুকুই। ফলে সোনা যে বেশ বিরল, তা বলাই বাহুল্য।

এই সোনার প্রায় ৪৫ শতাংশ ব্যবহৃত হয় অলঙ্কার তৈরিতে, হার, বালা, কানের দুল, এমনকি সোনার মূর্তিও।

কিছু অংশ ব্যবহৃত হয় শিল্পকারখানায়, ইলেকট্রনিক যন্ত্রে, দাঁতের ফিলিংয়ে। কিন্তু বাদবাকিটা? পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক সোনাই পড়ে আছে বিভিন্ন গোপন ভল্টে। মূলত নিউ ইয়র্ক, লন্ডন বা ফোর্ট নক্সের মতো জায়গায়।

কিন্তু এই ধাতু পৃথিবীতে এল কোথা থেকে? বিজ্ঞানীরা বলেন, কোটি কোটি বছর আগে কোনও বিস্ফোরিত নক্ষত্র থেকে ধাতুসমৃদ্ধ এক অ্যাস্টেরয়েড পৃথিবীতে এসে পড়েছিল। তার মধ্যেই ছিল সোনা। এটি পৃথিবীর ভূত্বকে কোটি-কোটি বছর ধরে লুকিয়ে ছিল। নদী ও বৃষ্টির ফলে তা ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে। আর এক সময় তা মানুষের নজরে আসে।

মানুষ দেখল, দেখতে তো সুন্দর বটেই, এই ধাতু বেশ ভারীও। আবার এত ভারী হওয়া সত্ত্বেও নরম। সবচেয়ে বড় কথা এতে লোহার মতো মরচে ধরে না। যেন অমর ধাতু! সেই থেকেই মানুষের সোনার প্রতি আকর্ষণের সূত্রপাত।

মিশরে ফ্যারাওদের সোনার কফিন, ইনকা সভ্যতার মন্দিরে সোনার দেয়াল, এমনকি ভারতীয় ঋষিমুনিদের আয়ুর্বেদিক ওষুধ, সর্বত্রই ছিল সোনার অবাধ বিচরণ। ইনকারা বলত, 'সোনা হল সূর্যের ঘাম।' ধীরে ধীরে সেই বিশ্বাসই একদিন বদলে দিল সভ্যতার ইতিহাস। সোনা হয়ে উঠল বিনিময়ের মাধ্যম, অর্থাৎ ‘টাকা’।

Advertisement

এর আগে মানুষ গরু বা নুনের মতো জিনিসের মাধ্যমে লেনদেন করত। কিন্তু ভ্যালু, বা ‘মূল্য’ বিষয়টি যেন শেখালই সোনা।

মজার বিষয়টি কী জানেন? অন্য যে কোনও ধাতু ভাবুন। লোহা, নির্মাণ, অস্ত্র তৈরির মতো কাজে লাগে। তামা বিদ্যুতশিল্পে অপরিহার্য। কিন্তু সোনা? সোনা কিন্তু কারও বিশেষ কোনও কাজে লাগে না। হ্যাঁ, আজকাল হয় তো সোনা বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে লাগছে, কিন্তু সেটাও যথেষ্ট নতুন ব্যাপার। তাহলে ভাবুন, এমন একটা ধাতু, যার সেযুগে তেমন কোনও প্রয়োজনই ছিল না, তাকেই সবাই সবচেয়ে মহার্ঘ্য ভাবতে শুরু করল। সবাই এক বাক্যে মেনে নিল যে সোনার 'দাম' আছে। আর সেই বিশ্বাস থেকেই জন্ম হল মুদ্রার। পরে সেই বিশ্বাসই কাগজে ছাপা টাকায়, আর আজ ডিজিটাল স্ক্রিনের সংখ্যায় রূপান্তরিত হয়েছে।

আজও যখন বিশ্ব অর্থনীতি টলমল করে, মানুষ ফিরে যায় সেই সোনায়। আসলে, সোনায় তো 'মরচে' পড়ে না। সরকার, বিনিয়োগকারী, এমনকি সাধারণ মানুষ, সবাই অনিশ্চয়তার দিনে সেই সোনাতেই আশ্রয় খোঁজে। কারণ যতই ডলার, বিটকয়েন বা ক্রিপ্টো আসুক, সোনার 'দামে'র প্রতি মানুষের বিশ্বাস চিরকাল থেকেই যাবে।

আসলে অর্থনীতি বদলায়, কিন্তু বিশ্বাসের বদল হয় না। আর সেই বিশ্বাসের নামই হল সোনা।

POST A COMMENT
Advertisement