Aokigahara, Suicide Forest: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘প্রিভেন্টিং সুইসাইড: অ্যা সোর্স ফর মিডিয়া প্রফেশনালস ২০১৭’ সমীক্ষা বলছে, প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করেন। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একটি করে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। আরও একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, গত ৪৫-৫০ বছরে আত্মহত্যার ঘটনা ৬০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষ কেন এত আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন? কেনই বা ক্রমশ বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অবসাদ, হতাশা, আত্মবিশ্বাসের অভাব বা হেনস্থার শিকার হয়ে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু জাপানের ফুজি পর্বতমালার উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অওকিগাহারা (Aokigahara Forest) জঙ্গলে এসে কেন প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০০ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন, তা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না সেখানকার প্রশাসনিক কর্তা থেকে মনোবিজ্ঞানীরা!
আত্মহত্যার সংখ্যার নিরিখে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অওকিগাহারা জঙ্গল
আত্মহত্যা থেকে বিরত থাকার নানা পরামর্শ বা সতর্কবার্তায় একাধিক সাইন বোর্ড ঝোলানো রয়েছে এই অওকিগাহারা (Aokigahara Forest) জঙ্গলের আনাচে কানাচে। তবুও এখানে এসে মানুষের আত্মহত্যা রোখা যাচ্ছে না। একাধিক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, আত্মহত্যার সংখ্যার নিরিখে অওকিগাহারা জঙ্গল বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। আত্মহত্যায় প্রথম আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন ব্রিজ।
এই জঙ্গলে কাজ করে না মোবাইল ফোন, জিপিএস
রয়েছে এই অওকিগাহারা (Aokigahara Forest) জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে পড়লে মোবাইল ফোন, জিপিএস প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে, ঠিক মতো কাজ করে না কম্পাসও। তাই দিক ভুল করে বা কোনও ভাবে এই জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে পথ হারিয়ে গেলে সাহায্যের জন্য ফোন করে কাউকে ডাকাও এখানে প্রায় অসম্ভব! বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অওকিগাহারা জঙ্গলের মাটি চৌম্বকীয় আয়রনে সমৃদ্ধ, যা মোবাইল ফোনের পরিষেবা, জিপিএস সিস্টেম এবং এমনকি কম্পাসগুলিকে অকেজো করে দিতে পারে। তাই এখানে আসা পর্যটক-গবেষকরা উজ্জ্বল রঙের প্লাস্টিকের টেপ দিয়ে গাছের গায়ে বিশেষ চিহ্ন দিয়ে রাখেন, যাতে জঙ্গলে ঢুকে পথ হারাতে না হয়।
শতাব্দী প্রাচীন ‘উবাসুতে’ রীতি
শোনা যায়, উনবিংশ শতাব্দীতে এই অওকিগাহারা এলাকায় ‘উবাসুতে’ নামে এক বিচিত্র রীতি পালিত হতো। এই রীতি অনুযায়ী, মৃত্যু শয্যায় থাকা প্রবীণ মানুষদের এই জঙ্গলে এসে ছেড়ে চলে যেতেন তাঁদের পরিবারের লোকজন। এর পর এখানেই তাঁদের মৃত্যু হতো। স্থানীয়দের মধ্যে এখনও অনেকের বিশ্বাস, অওকিগাহারা জঙ্গলে ওই মৃত ব্যক্তিদের আত্মা এখনও ঘুরে বেড়ায়। কোনও জীবিত ব্যক্তি এখানে এলে তাঁকেও নানা ভাবে প্রভাবিত করে এই আত্মারা।
দুটি বই জনপ্রিয় হতেই এই জঙ্গলে আনাগোনা বাড়ে মানুষের
শোনা যায়, ১৯৬০ সালে সেইকো মাতসুমোতো নামের এক জাপানি লেখকের দুটি উপন্যাস প্রকাশের পর থেকেই স্থানীয় মানুষের মধ্যে এখানে এসে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। কারণ, এই উপন্যাসের দুটি চরিত্র পরিবার ও সন্তানের শুভ কামনায় এই বনে এসে আত্মহত্যা করেছিল। রহস্য উপন্যাস লেখক সেইকো মাতসুমোতোর ১৯৬০ সালের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘টাওয়ার অফ ওয়েভস’-এ এর নায়ক এই জঙ্গলে এসেই আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে, ওয়াতারু সুরুমির ১৯৯৩ সালের বিতর্কিত বই ‘দ্য কমপ্লিট ম্যানুয়াল অফ সুইসাইড’-এ অওকিগাহারা জঙ্গলকে ‘মৃত্যুর উপযুক্ত জায়গা’ বলে উল্লেখ করা হয়। এর পর থেকেই এই জঙ্গলে এসে মানুষের আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে যায় বলে মনে করেন সেখানকার অনেক মানুষ।
জানা গিয়েছে, ১৯৮৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত গড়ে প্রতি বছর ১০০ জন অওকিগাহারা জঙ্গলে এসে আত্মহত্যা করেছেন। তবে ২০০৪ সালের পর থেকে স্থানীয় প্রশাসন অওকিগাহারা জঙ্গলে পাওয়া মৃতদেহের সংখ্যা প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয়।