
মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণার ঘটনা ভাইরাল।Father Buys Scooter for Daughter: নিজের একটা ছোট্ট স্কুটার। এটুকুই আবদার ছিল মেয়ের। আর তা পূরণও করলেন বাবা। তবে যেভাবে তিনি স্কুটারটি কিনলেন, তা সত্যিই দেখার মতো। স্কুটারের দামের পুরোটাই দিলেন বহুদিনের জমানো খুচরো টাকা-কয়েন দিয়ে। মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার ঘটনা এখন দেশজুড়ে খবরের শিরোনামে। মেয়ের স্বপ্ন পূরণে চার বছর ধরে ১০ টাকার কয়েন জমিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা ব্লকের মৌলা গ্রামের চা-বিক্রেতা বাচ্চু চৌধুরীর কাণ্ড এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। সঞ্চয় করলে ও ধৈর্য্য ধরলে যে সীমিত আয়েই স্বপ্নপূরণ সম্ভব, সেটাই প্রমাণ করলেন তিনি।
বাচ্চুবাবু জানালেন, আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগেই তাঁর ছোট মেয়ে একটি স্কুটারের আবদার করেছিলেন। কিন্তু চায়ের দোকানের রোজগারে সেই সময় স্কুটার কেনা সম্ভব ছিল না। তবে মেয়েকে সরাসরি না-ও বলেননি। খালি একটু সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। চা দোকানেই কাউন্টারের পাশে একটি বড় ড্রাম নিয়ে গিয়ে রাখেন। তারপর ধীরে ধীরে সেখানে ১০ টাকার কয়েন ফেলতে শুরু করেন। রোজকার দোকানদারির ফাঁকেই হাতে ১০ টাকার কয়েন এলেই সেখানে ফেলে দিতেন। এভাবে প্রায় চার বছর ধরে অল্প অল্প করে সেই ড্রাম ভরিয়ে ফেলেন বাচ্চুবাবু।

এরপর শনিবার সকালে বাচ্চু চৌধুরী ওই ড্রামটি নিয়ে চলে আসেন চন্দ্রকোনা টাউনের গোসাই বাজারের একটি মোটরবাইক শোরুমে। বেশ কিছু স্কুটার দেখার পর একটি পছন্দও করে ফেলেন। তবে এরপরেই বের করেন সেই ড্রাম। কয়েন ভর্তি সেই ড্রাম দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় শোরুমের সকলের। সেই শোরুমেরই এক কর্মী অরিন্দম জানালেন, 'ড্রামটি এতই ভারী ছিল যে আমরা চারজন মিলে তুলতে পারছিলাম না। পরে ৮ জন কর্মী মিলে ড্রামের কয়েন মাটিতে ঢেলে গোনা শুরু করি।'

প্রায় দুই ঘন্টা ২৫ মিনিট ধরে চলে টাকা গোনা। দেখা যায় ড্রামের ১০ টাকার কয়েন ও আরও কিছু নোট মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা রয়েছে। সেই টাকা দিয়েই মেয়ের জন্য স্কুটি কেনেন বচ্চু চৌধুরী।
স্কুটি হাতে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন বাচ্চুবাবুর মেয়ে। বাবার এই চেষ্টায় আবেগে আপ্লুত তিনি। অন্যদিকে বাবা বলছেন, 'মেয়ের মুখের এই হাসিই যথেষ্ট। আমার চার বছরের সঞ্চয় সার্থক।'
আপ্লুত শোরুম কর্মীরাও। তাঁরা বলছেন, আজকাল সামর্থ্য না থাকলেও অনেকে দ্রুত স্বপ্নপূরণ করতে EMI তে স্কুটার নিয়ে নেন। কিন্তু এভাবে ধৈর্য্য ধরে যে টাকা জমানো সম্ভব, তা ভাবতেও পারছেন না তাঁরা।
প্রশংসা করছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরাও। তাঁরা বলছেন, বাইক, স্কুটার, গাড়ি সাধারণত 'ডেপ্রিশিয়েটিং' অ্যাসেট। অর্থাৎ শোরুম থেকে বের করার সঙ্গে সঙ্গে এগুলির দাম প্রতিনিয়ত কমতে থাকে। ফলে এগুলিতে বাড়তি সুদ ও মাসিক কিস্তি দেওয়া খুব একটা ভাল বিনিয়োগ নয়। তাছাড়া প্রতিমাসে একটি বড় অঙ্ক কিস্তি হিসাবে দেওয়ার টেনশনও থাকে। তাই তৎক্ষণাত প্রয়োজন না থাকলে, একটু ধৈর্য্য ধরে বাচ্চুবাবুর মতো টাকা জমিয়ে কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।