দেশ জুড়ে আচমকাই ভাইরাল 'I Love Muhammad' । সাদার উপর লাল ও কালো কালিতে এই স্লোগান লেখা পোস্টার হাতে পথে নেমেছেন অসংখ্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। মূলত উত্তরপ্রদেশের কৌশাম্বী, লখনউ, মহারাজগঞ্জ, তেলঙ্গানার হায়দরাবাদ ও উত্তরাখণ্ডের কাশীপুরে এই আন্দোলন চলছে। তাদের এই আন্দোলন ঘিরে কোনও কোনও অঞ্চলে অশান্তিও ছড়িয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও বেঁধেছে। সপ্তাহ জুড়ে এই চিত্রের পর বুধবার সকালে আবার পাল্টা ভাইরাল হল 'I love Mahadev' পোস্টার। 'মহম্মদ' ভক্তদের উদ্দেশে কি তবে কাউন্টার প্রোটেস্ট শুরু করল 'মহাদেব' অনুগামীরা? কেসটা কী?
সূত্রপাত
চলতি মাসের শুরুতে গত ৪ সেপ্টেম্বর ঘটনার সূত্রপাত। ইদ মিলাদ-উল-নবি পরবের সময়ে অর্থাৎ হজরত মহম্মদের জন্মতিথিতে 'I Love Muhammad' লেখা পোস্টার দেখা যায় কানপুরের রওয়াতপুরে। সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি ওঠে হিন্দু গোষ্ঠীদের পক্ষ থেকে। অভিযোগ ওঠে, যে এলাকায় হিন্দু এবং মুসলিম দুই সম্প্রদায়েরই বাস এবং রাম নবমীর মতো পরব অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে ইচ্ছাকৃত মুসলিমরা এই পোস্টার নিয়ে পথে নেমেছে। দুই ধর্মের গোষ্ঠীর সদস্যরাই একে অপরের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক আচরণের অভিযোগ তোলে। হিন্দুদের বক্তব্য, তাদের একাধিক পোস্টারও নষ্ট করেছে মুসলিমরা। পাল্টা মুসলিমদের দাবি, তাদের টার্গেট করা হচ্ছে এবং কেবলমাত্র হজরত মহম্মদের প্রতি ভালোবাসা ব্যক্ত করতেই এই পোস্টার তাদের।
ভাইরাল পোস্টার
সোশ্যাল মিডিয়ায় হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পেন। #ILoveMuhammad ট্রেন্ড করতে শুরু করে। অনেক নেটিজেনই নিজের ডিপি বদলে ফেলেন এবং এই স্লোগান শেয়ার করতে শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেন রাজনৈতিক নেতারাও। AIMIM সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, 'I Love Muhammad বলা কোনও অপরাধ নয়। এটি সংবিধানের ২৫ ধারা অনুযায়ী সকলেরই অধিকার।'
বিতর্ক
এই আন্দোলন নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে যখন ইত্তেহাদ-ই-মিল্লাত কাউন্সিলের নেতা নাফেসের একটি ভিডিও ভাইরাল হতেই। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি কানপুরের কিলা পুলিশ স্টেশন ইনচার্জ সুভাষ কুমারকে শাসিয়েছেন। I Love Muhammad লেখা পোস্টার সরালে তাঁর হাত কেটে নেওয়া হবে এবং উর্দি খুলে নেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে নাফিসের বিরুদ্ধে। পুলিশ নাফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। শহরের এসপি মানুষ পারেখ জানান, কোনওমতেই আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে দেওয়া যাবে না।
পাল্টা আন্দোলন
বারাণসীতে পাল্টা আন্দোলন শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। জানা গিয়েছে, এটি একটি সিম্বলিক রিপ্লাই। মঙ্গলবার ধর্মীয় গুরুরা মিছিল করে বারাণসী শহর প্রদক্ষীণ করেন। হাতে ছিল পোস্টার, ব্যানার। যেখানে লেখা 'I Love Mahadev'। যা ভগবান শিবকে উৎসর্গ করা হয়েছে বলেই জানিয়েছেন তারা।
মূলত জগৎগুরু শঙ্করাচার্য নরেন্দ্রনন্দের অভিযোগ, 'I Love Muhammad' আন্দোলন দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার লক্ষ্যেই করা হচ্ছে। ধর্মীয় ভাবাবেগের আড়ালে আদতে এটি উস্কানি দিচ্ছে। সরকার এবং সমাজের ক্ষতি করার জন্যই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অভিযোগ শঙ্করাচার্যের।
কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে এই বিতর্ক
এই বিতর্ক আর কেবলমাত্র যোগী রাজ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। মুম্বইয়ের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা মালভানিতে ধর্মীয় গুরু এবং নেতারা স্থানীয় থানায় পৌঁছয় এবং কানপুরের ঘটনা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। পোস্টার সরিয়ে দিয়ে মুসলিমদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। অথচ হিন্দু গোষ্ঠীকে একই পদ্ধতিতে পোস্টার হাতে কীভাবে আন্দোলন করতে দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
ট্রেন্ডিং
সোশ্যাল মিডিয়ায় #ILoveMahadev এবং #ILoveRam ট্রেন্ড করতে শুরু করেছে। হাজার হাজার নেটিজেন এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে শিব এবং রামের ছবি এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করতে শুরু করেছেন। পোস্ট করা হচ্ছে গণেশের ছবিও। কেউ বলছেন, 'এবার হিন্দু ঐক্য দেখানোর পালা।' কারও আবার বক্তব্য, 'এই দেশে হিন্দুদেরই একাত্ম হয়ে থাকা দরকার। সমস্ত জাত-পাতের ঊর্ধ্বে উঠে এক হতে হবে।' 'হর হর মহাদেব' এবং 'জয় শ্রীরাম' স্লোগানও উঠতে শুরু করেছে।