Aadesh Kamra serial killer: ৮ বছর ধরে ৩৩টি খুন। দিনের বেলা দর্জি, আর রাত হলেই ভয়ঙ্কর খুনি। এমনই ছিল মধ্যপ্রদেশের আদেশ কামরার জীবন। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আদেশ কামরা ৩৩ জনকে খুন করে। বর্তমানে ভোপালের সেন্ট্রাল জেলে যাবজ্জীবন সাজায় দন্ডিত। আজব বিষয়টি হল, আদেশের ছেলে শুভম কামরাও এখন খুনের মামলায় জেলে।
আদেশ কামরা উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুর জেলার। তবে তার পরিবার এখন মধ্যপ্রদেশের মাণ্ডীদীপ এলাকায় থাকে। সে দিনে দর্জির কাজ করত, কিন্তু রাত নামলেই সে ট্রাকচালক ও সাফাইকর্মীদের 'শিকার' করত। পুলিশ জানায়, আদেশ আগে তাদের মাদক মেশানো খাবার খাইয়ে অচেতন করত, তারপর খুন করে লাশ ফেলে দিত নির্জন জায়গায়। খুনের পর তাদের ট্রাক বিক্রি করত বিহার ও উত্তরপ্রদেশে।
লোকের কাছে সে ছিল হাসিখুশি একজন দর্জি। তার সেলাইয়ের দক্ষতা ও ব্যবহার দেখে কেউ বুঝতেই পারত না, সে এত ভয়ঙ্কর খুনি। কিন্তু সে-ই রাত নামলেই পরিণত হত কসাইয়ে। ৮ বছরে ৩৪টি খুন করে সে।
২০১৮ সালে ভোপালের আশোকা গার্ডেন থানার তৎকালীন ইনচার্জ সুনীল শ্রীবাস্তব আদেশকে সুলতানপুরের এক জঙ্গল থেকে গ্রেফতার করেন। পুলিশি জেরায় আদেশ খুনের কথা স্বীকার করলেও একটুও ভয় দেখায়নি। সে দিব্যি তামাক খেয়ে উত্তর দিত।
সূত্রপাত ২০১০ সালে
২০১০ সালের পর হঠাৎ উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে একের পর এক ট্রাকচালক ও ক্লিনারের লাশ পাওয়া যেতে থাকে — মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড় ও ওড়িশায়। কোথাও কোনও সিসিটিভি না থাকায় পুলিশের কাছে কোনও তথ্য ছিল না। এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়েও পুলিশ কিছু করতে পারেনি।
ঘটনার মোড় ঘোরে ভোপালের কাছে বিলখিরিয়ায় এক ট্রাকচালকের মৃতদেহ উদ্ধারের পর। পুলিশের হাতে আসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র এবং ধরা পড়ে এক সন্দেহভাজন। তার জবানবন্দিতে উঠে আসে আদেশ কামরার নাম — যিনি দিনে দর্জি, রাতে খুনি।
তবে গ্রেফতারের আগেই আদেশ পালিয়ে যায় সুলতানপুরের এক জঙ্গলে। ভোপাল পুলিশ একটি বিশেষ দল গঠন করে, যার নেতৃত্ব দেন SP ক্রাইম, বিট্টু শর্মা। অবশেষে জঙ্গল থেকেই আদেশকে ধরা হয়।
পুলিশি জেরায় আদেশ জানায়, সে মানুষ খুন করত তাদের ‘মুক্তি’ দেওয়ার জন্য। তার বিশ্বাস ছিল, ট্রাকচালক ও ক্লিনারদের জীবন দুর্বিষহ, তাই সে তাদের কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে চায়।
আদেশের ‘গুরু’ ছিল তার মুখে বলা কাকা — আশোক খামরা, যিনি ৮০-র দশকে ট্রাক ডাকাতিতে দাপট দেখিয়েছিলেন। সেখান থেকেই আদেশ শেখে অপরাধ, প্রমাণ লোপাট আর পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার কৌশল।
এখন আদেশ ভোপালের সেন্ট্রাল জেলে বন্দি। সে ধর্মগ্রন্থ পড়ে এবং কারাবিধি মেনে চলে। তার স্ত্রী ও ছেলে মাঝেমধ্যে দেখা করতে আসে, কিন্তু আর কেউ আসে না।
এখন তার ছেলে শুভম কামরাও খুনের অপরাধে গ্রেফতার। ভোপালের মিসরোদ এলাকায়, মাণ্ডীদীপ ব্রিজের কাছে, একটি তর্কাতর্কির জেরে শুভম ও তার ৪ বন্ধু মিলে এক সহকর্মীকে বেধড়ক মারধর করে হত্যা করে। মৃত ব্যক্তির নাম কৃপারাম রাজপুত। শুভম এখন পুলিশের হেফাজতে।
এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, খুন কি উত্তরাধিকারেও শেখা যায়? আদেশ কামরার মতোই কি হয়ে উঠছে শুভম কামরা? সময়ই দেবে উত্তর।