বিমান জটে আটকে বেহাল দশা যুবকেরইন্ডিগো-র বিপর্যয়ের জেরে দেশজুড়ে বিমান পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। বিমানবন্দরে আটকে পড়ছেন বহু যাত্রী। কারণ প্রতিদিনই শ'য়ে শ'য়ে ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে। হাজার হাজার বিমানের উড়ান দেরিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। কোথাও দেখা যাচ্ছে, লাইনে দাঁড়িয়ে মহিলারা কাঁদছেন। আবার কোথাও দেখা যাচ্ছে, বর নিজের বিয়েতেই যেতে পারছেন না।
এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যখন কেউ তাঁদের প্রিয়জনকে শেষবারের মতো দেখতে পাচ্ছেন না। আবার কেউ বাবার অস্থি নিয়ে যেতে যেতে বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন। কেউ নিজের বিয়েতে যেতে পারছেন না। আবার কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা এবং ক্যারিয়ারের সুযোগ মিস করছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে এক যুবক বলছেন, "আমি বিয়ে করছি, আমিই বর, কিন্তু আমি আমার নিজের বিয়েতে যেতে পারছি না।" একই রকম ঘটনা ভাইরাল হয়েছে কর্ণাটকের হুবলি থেকেও। এক নবদম্পতিকে ভিডিও কলের মাধ্যমে নিজেদের রিসেপশন পার্টিতে যোগ দিতে হয়েছে। কনে মেধা ক্ষীরসাগর এবং বর সঙ্গম দাসের বেঙ্গালুরু থেকে হুবলিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০ ঘন্টা দেরির কারণে ফ্লাইট বাতিল করা হয়। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে ভিডিও কলের মাধ্যমেই নিজেদের রিসেপশন পার্টিতে যোগ দিয়েছেন বর-বউ।
বেঙ্গালুরুর বিমানবন্দর থেকে আরও একটি মন খারাপ করা ঘটনা সামনে এসেছে। সেখানে নমিতা নামে এক যাত্রী জানান, তিনি বাবার অস্থি বিসর্জন দিতে হরিদ্বারে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ফ্লাইট বাতিলের ফলে তিনি বিমানবন্দরেই আটকা পড়ে যান।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে ইন্ডিগোর বিমান যাত্রীদের চরম নাজেহাল হতে হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এয়ারপোর্টে শত শত যাত্রীরা বিমান ধরার জন্য অপেক্ষা করছেন। এদের মধ্যে বহু যাত্রী রয়েছেন যাদের এমার্জেন্সি কারণে সফর করতে হচ্ছিল। কিন্তু বিমান বিভ্রাটের কারণে আটকে পড়তে হয়েছে অনেককেই। বৃহস্পতি, শুক্রবারের পর শনিবারও চলছে ভোগান্তি।
এই পরিস্থিতির জন্য অনেকেই দায়ী করছেন DGCA-র নয়া নিয়মকে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে পাইলট ও বিমানকর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় তাঁদের কাজের সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল DGCA। ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস’ নামের ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল-
১) পাইলট ও বিমানকর্মীদের ৪৮ ঘণ্টার সাপ্তাহিক বিশ্রাম দিতেই হবে। আগে এই সময় ছিল ৩৬ ঘণ্টা।
২) প্রতি সপ্তাহে রাতে মাত্র ২টি বিমান অবতরণ করতে পারবেন পাইলটরা। আগে এই সংখ্যা ছিল ৬টি।
৩) পাইলট ও বিমানকর্মীদের নাইট ডিউটি সপ্তাহে পরপর দু'দিন একবারই দেওয়া যাবে।
৪) পাইলটরা 'লিভ' বা 'ছুটি' নিলে তা সাপ্তাহিক বিশ্রামের আওতায় আসবে না। যদিও এই নিয়মটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, এই বিধি নির্দেশিকা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আনা হলেও, বিমান কোম্পানিগুলির বারংবারং অনুরোধে তা লাগু করা থেকে পিছিয়ে আসছিল DGCA। কিন্তু সম্প্রতি এই বিধি কার্যকর করার জন্য খোদ দিল্লি হাইকোর্ট DGCA-কে নির্দেশ দেয়। এরপরই জুন ও নভেম্বর মাসে দুই দফায় এই নির্দেশিকা কার্যকর করতে শুরু করে দেশের উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
কেন IndiGo-ই সবচেয়ে বেশি সমস্যায়?
দেশীয় আভ্যন্তরীণ উড়ান পরিষেবার ক্ষেত্রে ইন্ডিগো তুলনামূলক অনেকটাই সস্তা। ফলে এই এয়ারলাইন্সটির উপরে এমনিতেই যাত্রীচাপ বেশি থাকে। পরিসংখ্যান বলে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও একাধিক এয়ারলাইন্সের থেকে এগিয়ে রয়েছে ইন্ডিগো। দেশের প্রায় ৯০টি এয়ারপোর্টে পরিষেবা রয়েছে এই সংস্থার। এছাড়াও, ইন্ডিগোর প্রচুর সংখ্যক বিমান রাতে চলাচল করে। নয়া বিধিনিষেধে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে রাতের বিমান চলাচলেই। যার জেরে ভুগতে হচ্ছে IndiGo-কে। কারণ নিয়ম মেনে পরিষেবা দিতে যে পরিমাণে পাইলটের প্রয়োজন, তা এখনও ইন্ডিগোর কাছে নেই।
শুক্রবার ইন্ডিগোর CEO পিটার এলবার্স ভিডিও বিবৃতিতে যাত্রীদের কাছে বিশৃঙ্খলা ও অসুবিধার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি জানান, বিগত কয়েক দিনে ১,০০০-রও বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ইন্ডিগো পরিষেবা স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। ইন্ডিগোর স্বাভাবিক ফ্লাইট অপারেশন ১০–১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ ভাবে আগের ছন্দে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।