করোনার তৃতীয় ঢেউ যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে স্বাস্থ্যবিধির দফারফা করে মাঝরাত পর্যন্ত চলল নবীনবরণ ও ইংরেজি বর্ষবরণের এবং জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠান।
তারপর থেকে প্রতিদিনই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে একেরপর এক পড়ুয়া, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে। তবে বিষয়টি জানানেই হাসপাতালের সুপারের।
করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে না হতেই আবার দোর গড়ায় করোনার নতুন ঢেউ। দক্ষিণবঙ্গে গত এক সপ্তাহে হু হু করে বেড়েছে আক্রান্তের গ্রাফ। উত্তরবঙ্গ গত কয়েক আক্রান্তর গ্রাফ আবার ঊর্ধ্বমুখী। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পড়ুয়া চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে আক্রান্তর সংখ্যা পেরিয়েছে ৭০।
তবে এর পিছনে অন্য কারণ দেখছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাংশ। জানা গিয়েছে করোনার আক্রান্তের গ্রাফ নিয়ে যেখানে চিন্তিত বিশেষজ্ঞ মহল, সেখানে খোদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্বাস্থ্যবিধির দফারফা করে মোচ্ছবে মাতল পড়ুয়া, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাই।
হাসপাতালের একাংশের সূত্রে জানাগেছে গতমাসের ৩০ ও ৩১ তারিখ কলেজের অডিটোরিয়ামে নবীন বরণ,ইংরেজি নতুন বছর আর জন্মদিন পালন উৎসবের আয়োজন করেছিল ছাত্র সংসদ। মাঝরাত পর্যন্ত চললো নবীন বরণ উৎসব, চললো নাচ গান। ইতিমধ্যে এই অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে কারোর মুখে কোন মাস্ক নেই। আর স্বাস্থ্যবিধির তো কোনো বালাই নেই। আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে গলা জড়িয়ে চললো উদ্দাম নাচ৷ শুধু তাই নয় এদিন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পালিত হয় রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিভাগের উত্তরবঙ্গের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি সুশান্ত রায়ের। ফলে অনুষ্ঠানে ওই রাতে উপস্থিত ছিলেন ওএসডি, হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও পড়ুয়ারা।
তবে অনুষ্ঠানের পর গত কয়েকদিন ধরে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল একের পর এক বাড়ছে আক্রান্তের গ্রাফ। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহা, চিকিৎসক কল্যাণ খাঁ, মধুমিতা নন্দী, স্টুডেন্ট এফেয়ার্সের ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত, সহ মোট ৭৪ জন করোনা আক্রান্ত। তবে উত্তরবঙ্গ মেডিকেলে এতসংখ্যক চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্তের জন্য নবীন বরণ উৎসব, নিউ ইয়ার পার্টি আর জন্মদিন পালনকেই দায়ী করছে। প্রশ্ন উঠছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে। কি করে করোনার স্বাস্থ্যবিধিকে উপেক্ষা করে এই ধরণের অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হল তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, " জন্মদিন পালনের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি শুধু নবীন বরণ উৎসবের ব্যাপারে জানতাম"।এত সংখ্যক চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মী এবং পড়ুয়া করোনা আক্রান্ত হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের চিকিৎসা পরিষেবার দেওয়া নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। যার ফলে এখন গোটা স্বাস্থ্য পরিষেবাই প্রশ্নের মুখে এসে দাড়িয়েছে। মেডিকেলে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভেঙ্গে পড়লে নাজেহাল হতে হবে উত্তরবঙ্গের কয়েক লাখ দরিদ্র মানুষকে।