পাড়ায় গলির মধ্য়ে একটি ছোট রেস্তোরাঁ। এমনি সময় সব স্বাভাবিক থাকলে সারাদিনে খরচ উঠে যায়। লক ডাউনে তাও বন্ধ বহুদিন।
রেস্তোরাঁ ছোট হলেও হৃদয় তো বড় হতেই পারে। তাই তো রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
সামর্থ্য সীমিত। তাই আপাতত শক্তিবর্ধক প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর দিকে ঝুঁকেছেন তাঁরা। তৈরি করছেন চিকেন স্টু।
গরম গরম চিকেন স্টু তৈরি করে তা প্যাকেটজাত করে নিয়ে বাইকে করে ছুটছেন, কখনও হাকিমপাড়া, কখনও মাটিগাড়া, কখনও চম্পাসারি।
প্রথমে চার পাঁচটি থেকে শুরু করে সংখ্যা পৌঁছেছে খান পঞ্চাশে। কাউকেই ফেরাচ্ছেন না তাঁরা। সোস্যাল সাইটে দেওয়া রয়েছে নম্বর।
সেখান থেকেই চাহিদা আসছে। তা নিয়েই তাঁরা ছুটছেন জনা দুই। সঙ্গে কয়েকজন তাঁদের উৎসাহ দেখে এগিয়ে এসেছেন সাহায্য করতে।
দেশবন্ধুপাড়ার ফ্লেভার্স ক্যাটারার ও রেস্তোরাঁর কর্ণধার দুর্জয় ঘোষ প্রথমে একাই শুরু করেছিলেন। তারপর তাঁর উৎসাহ দেখে এগিয়ে আসেন
সুপ্রিয়া সেনচৌধুরী, মিহির সরকার, অনির্বান মুখার্জি, উত্তম মুখার্জিরা সাহায্য করছেন তাঁকে। ব্যস আর কি চাই! পূর্ণ উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তাঁরা।
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করোনা রোগীদের জন্য এই পরিষেবা তাঁরা শুরু করেছেন ১২ মে থেকে। ইচ্ছে আছে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন।
তারপরও যদি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে পরিকল্পনা বাড়ানো হতে পারে। জানিয়ে দিলেন দুর্জয়বাবু।
শিলিগুড়ি পুলিশ, বিভিন্ন নামী সংস্থা খাবারের বন্দোবস্ত করছে। লাঞ্চ কিংবা ডিনার। কিন্তু মাঝে শরীরী চাহিদায় চিকেন স্ট্যু খেতে বলছেন চিকিৎসকরা।
সে দিকটা অনেকেরই নজর এড়িয়ে যাচ্ছে। সেই জায়গা থেকে তাঁরা এই ভাবনা আমদানি করেছেন। এতে শরীর ভালো থাকছে, পাশাপাশি প্রোটিনের চাহিদা মিটছে।
নিজের রুজি বন্ধ, তবু তো জমানাে কিছু টাকা আছে। খাবারটা বাড়ির লোকের মুখে তুলে দিতে পারছি। অনেকের তো সে সামর্থ্য নেই।
পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা সাফ মানা করে দিয়েছেন রান্না বান্নার দিকে যেতে না। এমন পরিস্থিতি থেকে সকলে বেরিয়ে আসুক সুস্থ হোক এটাই চাইছি। জানালেন দুর্জয়বাবু।
দুর্জয় ঘোষের আরও একটা পরিচয় আছে। তিনি জাতীয় স্তরের ক্যারাম খেলোয়াড়। একাধিকবার নিজের বিভাগে রাজ্য সেরা।
তাই স্পোর্টিং মনোভাব ভরপুর তাঁর মধ্যে। তাই তাঁর দাবি, যতদিন পারবো এ ভাবে চালাবো। শহর জীবিত থাকলে আমরাও জীবিত থাকবো।
কাউকে বাদ দিয়ে কেউ ভালো থাকতে পারে না। তাঁর সদর্থক ওয়েভ ছড়িয়ে গিয়েছে পরিবারের মধ্যেও সমর্থন করছেন স্ত্রী ও ছেলেও।
শিলিগুড়ি এলাকার মধ্য়ে যত আবেদন আসবে, তাঁরা চেষ্টা করবেন স্টু পৌঁছে দিতে। তবে এখনই বেশিদূর পরিষেবা দিতে পারছেন না।
তিনি রেস্তোরাঁয় অবশ্য এ ধরণের কোনও স্টু তৈরি করেন না। ফলে সম্পূর্ণ নতুন এই ডিশ তিনি তৈরি করছেন করোনা আক্রান্তদের জন্যই
তবে যদি আরও কিছু সাহায্য পান, কেউ এগিয়ে আসে, তাহলে আরও কিছু খাবার পরিষেবায় আনতে পারেন বলে জানান।
লকডাউনে তাঁর কাজ এখন এই কাজে সারাদিন ব্যস্ত থাকা এবং ক্যারাম অনুশীলন। ইন্ডোর গেম হওয়ায় তাতে কোনও অসুবিধা নেই।