২০১৪ সালে আত্মপ্রকাশ করে নতুন জেলা আলিপুরদুয়ার। এতদিন জলপাইগুড়ি জেলার অংশ হিসেবে ছিল এটি। এই জেলা ভারত থেকে ভুটানে প্রবেশদ্বার। পাশাপাশি এক জেলাতেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, একাধিক জঙ্গল ঐতিহাসিক এলাকা রয়েছে। শুধু এই জেলাটিই ঘুরতে পর্যটকদের অন্তত ১০ দিন সময় লাগবে। খরচও খুব বেশি নয়। বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে সড়কপথে যাওয়া যায়। তার চেয়ে ভাল শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ধরে চলে যান সোজা আলিপুরদুয়ার জংশন। তারপর সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে সুবিধামতো ঘুরুন। পাহাড়ের চেয়ে অনেক সস্তায় ঘুরতে পারবেন। যে কোনও সময়ই ঘোরা যায়, তবে জঙ্গলে ঢুকতে চাইলে জুন থেকে সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত জঙ্গল বন্ধ থাকে।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প
আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা পাহাড়কে বক্সা জাতীয় উদ্যান অবস্থিত। এটি একটি ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র। এই উদ্যানে বাঘ, সিভেট ও রেড জঙ্গল ফাউল দেখা যায়। বক্সা দুর্গকে ঘিরে ইতিহাস ও মিথ জড়িয়ে আছে। ব্রিটিশ আমলে বন্দিশালা ছিল এই দুর্গ।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান একশৃঙ্গ গণ্ডারের বাসভূমি। তোর্সা নদীকে কেন্দ্র করে বনাঞ্চলময় সুবিস্তীর্ণ তৃণভূমি। এই জঙ্গল প্রকৃতিপ্রেমীদের কাচে স্বর্গ রাজ্য। প্রচুর লেপার্ড, হরিণ, বাইসন, সম্বর রয়েছে এখানে। আগে নাকি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারও দেখা যেত।
চিলাপাতা জঙ্গল
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান ও বক্সা জাতীয় উদ্যানের ঠিক মাঝখানে হাতির করিডর হিসেবে চিলাপাতা বনাঞ্চল একটি গভীর বনাঞ্চল। এখানেও আগে গণ্ডারের আনাগোণা ছিল। এখন চিতাবাঘ দেখা যায়। এখানকার অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হল নলরাজা গড়। এটি খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে গুপ্ত যুগে নির্মিত স্থানীয় নল রাজাদের দুর্গ।
জয়ন্তী
বক্সার সঙ্গে একযোগে উচ্চারণ হয় জয়ন্তীর নাম। আলিপুরদুয়ার শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বক্সা জঙ্গলের ধার ঘেঁষা জয়ন্তীকে বলা হয় ডুয়ার্সের রানি। জয়ন্তীর ভাঙা ব্রিজ এখানকার পুরনো গৌরবের স্মৃতি বহন করে। নাব্যতাও এখন তেমন নেই। তবু তার সৌন্দর্য চোথ টানবেই। পুখুরি এলাকার লেক এখানকার বিশেষ দৃষ্টব্য। ছোট মহাকাল এবং বড় মহাকাল মন্দির এখানকার দ্রষ্টব্য।
রাজাভাতখাওয়া
জনশ্রুতি অনুসারে ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ কোচবিহারের রাজা বর্তমান রাজাভাতখাওয়া অঞ্চল থেকে ভুটানের রাজাকে সিংহাসনচ্যুত করার প্রতিজ্ঞা করে তারপর ভাত খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ৷ পরে ভুটানের রাজা স্বয়ং এই অঞ্চল ত্যাগ করলে মিত্রতা গ্রহণের পর এখানে ভোজনের আয়োজন করা হয় ৷ এভাবে রাজাভাতখাওয়া নামের উৎপত্তি ৷ বক্সা জঙ্গলেরই একটা অংশ এখানে বুনো সৌন্দর্য বিস্তার করে।
লেপচাখা
বক্সা দুর্গ থেকে উপরে উঠতে হবে লেপচাখায় পৌঁছতে হলে। একটা সময়ের পর ট্রেকিং ছাড়া পথ নেই। ওল্ড সিল্ক রুটের অন্যতম। এটি বক্সা-জয়ন্তী ন্যাশনাল পার্ক এর একটি অংশ। এই জায়গাটিকে ডুয়ার্সের স্বর্গ বলা হয়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পাহাড়ি এই গ্রামটি। কখনও রোদ ঝলমলে দুপুরের আকাশে হঠাতই উড়ে আসা মেঘের চাদর, ক্ষণিকের জন্য ঢেকে দিয়ে যায় লেপচাখাকে।
টোটোপাড়া
কয়েক বছর আগে পর্যন্ত টোটোপাড়া ছিল এক বিস্ময়। এটি বিশ্বের একমাত্রা টোটো গ্রাম। এ গ্রাম ছাড়া বিশ্বের অন্য কোথাও এই উপজাতির বসবাস নেই। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বার। এর উত্তরে ভুটানের সীমান্ত তাদিং পাহাড়ের পাদদেশ, পূর্বে তোর্সা নদী এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে হাওরি নদী এবং তিতি বনাঞ্চল রয়েছে। টোটোরা এখন অনেক আধুনিক হলেও তাদের জীবনযাত্রা চোখ চেয়ে দেখার মতো।