বহু প্রতীক্ষিত শিলিগুড়ি-ঢাকা সরাসরি যাত্রীবাহী ট্রেন শুরু হতে চলেছে অবশেষে। বাংলাদেশ সরকারের তরফে ট্রেনের সফরসূচি ও ভাড়া সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দিয়েছে। আর সেই সঙ্গেই উত্তরবঙ্গ দিয়ে প্রথম ট্রেন চলাচল যাত্রার সূচনা হতে চলেছে। বহু বছর আগে চলাচল করলেও তা পরে বন্ধ হয়ে যায়। ফের তা চালু হওয়ার খবরে গোটা উত্তর পূর্ব ভারতের পর্যটন অর্থনীতি বদলে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের মানুষ, অসম, ত্রিপুরার বাঙালিরাও বাংলাদেশে চলে যেতে পারবে।
মিতালি এক্সপ্রেস
এই ট্রেনের নাম রাখা হয়েছে মিতালি এক্সপ্রেস। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের রেলের তরফে ট্রেনের সফর সূচি ও ভাড়া সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। পর্যটন ব্যবসায়ীদের দাবি অতি সত্বর চালু করা হোক এই ট্রেন পরিষেবা। এর ফলে উত্তরবঙ্গে পর্যটনের আরও জোয়ার আসবে বলে আশায় বুক বেঁধেছে ব্যবসায়ীরা।
গত বছরই সূচনা হয়, চালু হয়নি
উত্তরবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ স্থাপনে শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বাংলাদেশের ঢাকা পর্যন্ত রেল চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুই দেশের সরকার। গত বছরই এই ট্রেন পরিষেবা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সে সময় পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণা হওয়ায় তা স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু তারপর থেকে করোনা সংক্রমণের কারণে এই ট্রেন পরিষেবা চালুর উদ্যোগ থমকে রয়েছে বলে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রে জানা গিয়েছে।
কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হতেই প্রক্রিয়া শুরু
অবশেষে কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই আবারও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ট্রেন মিতালি এক্সপ্রেস চালানোর ব্যপারে তোড়জোড় শুরু করেছে দু'দেশের সরকার। রেল সূত্রে খবর, খুব তাড়াতাড়ি এই পরিষেবা শুরু হবে। ইতিমধ্যে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের রেল দপ্তরে তরফে এই মিতালি এক্সপ্রেসের সফরসূচি এবং ভাড়া সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে দেওয়া হয়েছে সেদেশে। যদিও ভারতের রেল মন্ত্রকের তরফে এখনও পর্যন্ত এই ধরণের কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি।
শিলিগুড়ির সঙ্গে উপকৃত হবে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত
এমনিতেই উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে প্রচুর বাংলাদেশি প্রতি বছরই ভ্রমণে আসেন। এখন চিকিৎসার প্রয়োজনে ও এবং পাহাড়ে পড়াশোনা করতে ছাত্র ছাত্রীরা বাংলাদেশ থেকে অনেকে শিলিড়িতে আসছেন। এই ট্রেন পরিষেবা চালু হলে এই সমস্ত মানুষের অনেকটাই সুবিধা হবে।
এখন দুটি ট্রেন চালু রয়েছে
এর আগে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দুটি ট্রেন চালু রয়েছে। একটি মৈত্রী এবং অন্যটি বন্ধন এক্সপ্রেস। বন্ধন এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে বাংলাদেশের খুলনা পর্যন্ত চলাচল করে। অন্যদিকে মৈত্রী এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে ঢাকা পর্যন্ত চলাচল করে। তবে এর পরে এই দু'দেশের মধ্যে এটি হবে তৃতীয় যাত্রীবাহী ট্রেন। মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেসের মতো উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগকারী প্রথম ট্রেনটি মিতালি এক্সপ্রেস সফল হবে বলে আশায় দুই দেশ। তাছাড়াও এই ট্রেন পরিষেবা চালু হলে বাংলাদেশ থেকে উত্তরবঙ্গের প্রচুর পর্যটক ভ্রমণে আসবে। এর ফলে উত্তরবঙ্গে আরও পর্যটনের জোয়ার আসবে, সেই আশায় রয়েছে উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
কোন পথে ট্রেন
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত মোট যাত্রাপথ ৫৩০ কিলোমিটার। এই পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে ৯ ঘন্টা। পথে বাংলাদেশের রয়েছে ৪৪৬ কিলোমিটার পথ বাকিটা ভারতে। এই পথে বাংলাদেশে পড়বে পার্ব্বতীপুর, টাঙাইল সহ মোট ১৫টি রেল স্টেশন। কিন্তু কোথাও থামবে না ট্রেনটি। তবে বাংলাদেশের রেলের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ট্রেনের এই সফরে রয়েছে হলদিবাড়ি, চিলাহাটি স্টপেজ।
কবে কবে ছাড়বে, ভাড়া কত?
প্রতি সপ্তাহে দুদিন করে এই ট্রেনটি চলাচল করবে। ভারতে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার ছাড়বে এবং বাংলাদেশের ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে সোমবার এবং বৃহস্পতিবার ছাড়বে। বাংলাদেশ থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত বাংলাদেশে এই ট্রেনের ভাড়া ধার্য করা হয়েছে এসি বার্থে ৪৯০৫ টাকা, এসি সিটে ৩৮০৫, এসি চেয়ারে জনপ্রতি এর ভাড়া ধার্য করা হয়েছে ২৭০৫ টাকা।
দ্রুত চালু হওয়ার ডাক
হিমালয়ান হসপিটালিটি অফ ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, প্রতি বছরই ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রচুর ভারতীয় যায় এবং বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক উত্তরবঙ্গে আসে। এই ট্রেন পরিষেবা চালু হলে তাদের অনেকটাই সুবিধা হবে। পাশাপাশি প্রতিবছর উত্তরবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক উত্তরবঙ্গের পাহাড় , ডুয়ার্স অঞ্চল এলাকায় ভ্রমণে আসে ফলে স্বাভাবিক ভাবে এর ফলে পর্যটন শিল্পে জোয়ার আসবে। তবে এক বছর ধরে শুনছি এই ট্রেন পরিষেবা চালু হবে তাই আমরা পর্যটন ব্যবসায়ীরা চাই খুব শীঘ্রই ট্রেন যাত্রার দিন ঘোষণা করা হোক।
দ্রুত ভারতের তরফেও সূচি ঘোষণা করা হবে
অন্যদিকে এপ্রসঙ্গে উত্তর-পূরব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলেন, এখনও ভারতের তরফে এই সংক্রান্ত কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। তবে আশা করছি খুব শীঘ্রই ভারতীয় রেল এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর এই ট্রেনের যাত্রা নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে।