সূর্যকণা নিয়ে গবেষণায় নাসা ও লকহিড মার্টিনের সাথে কাজ করার ডাক পেলেন আলিপুরদুয়ার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নিউটাউন দুর্গাবাড়ির যুবক সৌভিক বসু। সৌভিকের এই কৃতিত্বে খুশির জোয়ার জেলা সদরে।
রাজ্যের প্রান্তীয় জেলা আলিপুরদুয়ার শহর থেকে ১০ বছরে ধাপে ধাপে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছেন এই গবেষক।এবার একবারে নতুন গবেষণার সাথে যুক্ত করতে চলেছেন সৌভিক।
যৌথ গবেষণায় ডাক
প্রথমে আলিপুরদুয়ারে স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়াশোনার পাঠ শেষ করে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার সাহা ইন্সটিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স, বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ অ্যাস্ট্রো ফিজিক্স, শেষে নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বছরই সূর্যকে নিয়ে গবেষণা সম্পূর্ণ করে পিএইচডি ডিগ্রি পান সৌভিক। পাশাপাশি এ বছরই নাসা ও লকহিড মার্টিনের যৌথ একটি গবেষণায় ডাক পেয়েছেন তিনি।
কখন কীভাবে কতটা পরিমান সূর্যকণা, জানা যাবে
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে নতুন বছরের শুরুতেই আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি দিচ্ছেন তিনি।প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, নতুন গবেষণাও পুরোপুরি সূর্যকেন্দ্রিক। সৌভিক বসু বুধবার তার মতো করে নতুন গবেষণার বিষয়টি জানিয়েছেন। সৌভিক বসু বলেন, মূলত সূর্য কণার থেকে আমাদের পৃথিবীর কী ক্ষতি হতে পারে, কখন কীভাবে কতটা পরিমান সূর্যকণা বেড়িয়ে আসতে পারে তা আগাম জানতে পারলে বিশ্বের সমস্ত দেশ অনেক ক্ষতি এড়াতে পারবে।
গবেষণা সফল হলে বহু ক্ষতি রোখা যাবে
সৌভিক বলেন, উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,পৃথিবীর চারদিকে মানুষের হাতে তৈরি প্রচুর স্যাটেলাইট ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে সোলার ফ্লেয়ার বা সৌরঝড়, সূর্যের মধ্যে বড়সড় বিস্ফোরণ হলে আচমকাই প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রন, প্রোটন কণা বেড়িয়ে আসে। এতে একসঙ্গে সব স্যাটেলাইট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মহাকাশ স্টেশন, সেখানে থাকা অ্যাস্ট্রোনটরা। পৃথিবীর একটি বড় অংশের পাওয়ার গ্রিড কাজ করা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এককথায় গোটা পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থাই নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এমনটা হলে গোটা পৃথিবীতে মাত্র ১ সেকেন্ডে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে।
সোলার ফ্লেয়ার নিয়ে পূর্বাভাস দেবে সাফল্য
সৌভিক জানান, আমরা এই গবেষণায় পুরোপুরি সফল হলে আগাম সোলার ফ্লেয়ার নিয়ে পূর্বাভাস দিতে পারব। যার দরুণ প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যাবে। জানা গিয়েছে, সোলার ফ্লেয়ার ও তার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চলছে। তবে এখনও সাফল্য অধরা। আমেরিকার নাসা ও লকহিড মার্টিন দুটি সংস্থাই বিশ্বব্যাপী পরিচিত। আলিপুরদুয়ারের কৃতি ছাত্র হিসেবে ইতিমধ্যেই লন্ডনের রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অফ লন্ডনের তরফে ২০২০ সালের মে মাসে তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন গবেষক তাঁর নাম প্রস্তাব করেন
এই ফেলোশিপের জন্য কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন গবেষক হেলেন মাসোন তার নাম প্রস্তাব করেছিলেন।নাসার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার সাথে ইতিমধ্যেই যুক্ত রয়েছেন সৌভিক বসু।সাম্প্রতিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্য নিয়ে নাসার গবেষকেরা টেলিস্কোপের কিভাবে উন্নতি করেছেন, তা নিয়ে বিখ্যাত এস্ট্রোনমি এন্ড এস্ট্রোফিজিক্স জার্নালে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সেই গবেষণার সাথেও তিনি যুক্ত ছিলেন।