'সোনার বাংলা গড়তে চান', ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে এই মন্ত্রেই বঙ্গবাসীর মন জয় করতে চাইছেন অমিত শাহ। গত মাসেই দু'দিনের সফর বাংলায় এসেছিলেন। ফের একবার রাজ্যে পা রাখতে চলেছেন তিনি। শোনা যাচ্ছে ভোটের আগে প্রতিমাসেই নিয়মিত বাংলায় আসবেন তিনি। শনি ও রবি রাজ্যের একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তারজন্য শুক্রবার রাতেই কলকাতায় পা রাখলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজ্য সফরের আগে বঙ্গবাসীর মন জিততে বাংলায় ট্যুইটও করলেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি। সেখানে শাহ লেখেন, "পশ্চিমবঙ্গের প্রিয় ভাই এবং বোনেদের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলাপচারিতার জন্য আমি উদগ্রীব রইলাম।"
আমার দুই দিনের সফরের জন্য আমি আজ রাতেই কলকাতায় পৌঁছে যাব।
— Amit Shah (@AmitShah) December 18, 2020
পশ্চিমবঙ্গের প্রিয় ভাই এবং বোনেদের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলাপচারিতার জন্য আমি উদগ্রীব রইলাম। https://t.co/hd4k3RnJff
শনি ও রবিবার দম ফেলার ফুরসত পাবেন না অমিত শাহ। একের পর এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবে গেরুয়া শিবিরের হেভিওয়েট এই নেতাকে। তার আগে শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে নামে তাঁর বিমান। সেখান থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাবেন নিউটাউনের ওয়েস্ট ইন হোটেলে। সেখানেই রাত কাটাবেন অমিত শাহ। শনিবার সকাল থেকে ১০টা থেকে শুরু হবে তাঁর ঠাসা কর্মসূচি।
এবার অমিত শাহের বঙ্গসফর শুরু হচ্ছে স্বামীজির হাত ধরে। এর আগেরবার এসে দক্ষিণেশ্বরে গিয়েছিলেন। এবার তাঁর গন্তব্য বিবেকানন্দ রোডে স্বামী বিবেকানন্দর বাড়ি। সেখানে স্বামীজির মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করবেন। দেখবেন বিলের মা-বাবার ঘর, শিব মন্দির। জানা গিয়েছে ১৫ মিনিটের মত স্বামীজির জন্মভিটেতে থাকবেন তিনি। রোনা আবহে তাঁর সঙ্গে সর্বাধিক ১০ জন সেখানে ঢুকতে পারবেন। দর্শন ও প্রণাম শেষে অমিত শাহের হাতে তুলে দেওয়া হবে চা, শুকনো প্রসাদ ও বই। একিইসঙ্গে তাঁকে বিশেষ প্রসাদী শাল দেওয়ারও পরিকল্পনা করেছেন কর্তৃপক্ষ।
বিবেকানন্দের বাড়ি যাওয়ার আগে অবশ্য শনিবার পৌনে ১০টা নাগাদ এনআইএ বা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সির আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। এই বৈঠকে রাজ্যে জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে এনাইএ-র রিপোর্ট খতিয়ে দেখার কথা অমিতের। তেমন বুঝলে ওই বিষয়ে তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিতে পারেন।
এদিকে বিবেকানন্দের বাড়ি হয়ে এরপর দমদম বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে অমিত শাহ পৌঁছবেন মেদিনীপরে। সেখানে সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে পুজো দেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। এরপর স্বাধীনতা সংগ্রামী ক্ষুদিরাম বসুর মূর্তিতেও মাল্যদান করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর কর্ণগড়ে দেবী মহামায়া মন্দিরে যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁর।
পুজো শেষে গতবারের মত এবারও এক তফশিলি পরিবারে মধ্যাহ্নভোজ সারবেন শাহ। জানা যাচ্ছে বেলা ২টো ১৫ নাগাদ মেদিনীপুরের বালিঝুড়ি গ্রামে ঝুনু সিংহের বাড়িতে এবার হাজির হবেন তিনি। এর পরেই দুপুর দুটো নাগাদ মেদিনীপুর কলেজ মাঠের জনসভায় হাজির হবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যে সভার দিকে এখন তাকিয়ে আছে গোটা বাংলা। শুভেন্দু অধিকারী সেই সভায় আসেন কিনা তা নিয়ে ক্রমেই উৎসাহ বাড়ছে বাংলার রাজনীতির আঙ্গিনায়। সভা সেরে বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ কলকাতায় ফিরে আসবেন তিনি।
শনিবার রাতে বালিগঞ্জের পার্ক লেনে এবং ওয়েস্ট ইন হোটেলে রাজ্য বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে অমিত শাহের। রবিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাবেন শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে। সকালে ১০টা ৫০ নাগাদ তাঁর হেলিকপ্টারে করে বোলপুরে যাওয়ার কথা। সেখানে বেলা ১১টা নাগাদ বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবনের অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দেবেন। দুপুর ১টা নাগাদ বীরভূমের পারুলডাঙায় শিল্পী বাসুদেব দাস বাউলের বাড়ি মধ্যাহ্নভোজ করার কথা রয়েছে তাঁর। এরপর দুপুর ২টো থেকে ৪টে পর্যন্ত হনুমান মন্দির থেকে বোলপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত রোড শো করবেন অমিত শাহ। এরপর রয়েছে বোলপুরে সাংবাদিক বৈঠক। সবশেষে অন্ডাল বিমানবন্দর হয়ে দিল্লি ফিরবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিকে, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনার পর যাতে নতুন করে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয় তার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিরাপত্তায় জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বৃহস্পতিবারই এ ব্যাপারে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে সিআরপিএফ। শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে সব এলাকা বা রাস্তা দিয়ে যাবেন সেখানে কীভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হচ্ছে সে ব্যাপারে চিঠিতে জানতে চেয়েছে সিআরপিএফ। অমিত শাহের সফরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করার কথা বলা হয়েছে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে। এদিন রাজ্য পুলিশের ডিজিপ ও মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকেও নিরাপত্তায় যেন কোনও ফাঁক না থাকে সেকথা মনে করিয়ে দিয়েছে নর্থব্লক।