Boycott Bangladesh: বিশ্বকাপ ফাইনালের কয়েকদিন পার হয়ে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত এই ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল। ভারতকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ষষ্ঠ বারের জন্য খেতাব জিতে নিয়েছে। তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গের হতাশা নিয়েই ভারতকে ফিরতে হয়েছে। এ সব এখন পুরনো খবর। কিন্তু ভারতের হারে বাংলাদেশ জুড়ে যে মাত্রাছাড়া এবং দৃষ্টিকটুভাবে উচ্ছ্বাস পালনের হিড়িক দেখা গিয়েছে, তাতে ক্ষিপ্ত এপার বাংলার মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের এহেন মাত্রাছাড়া উচ্ছাসকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না এদেশের একটা বড় অংশের মানুষ। এবার শুধু ক্ষোভ এবং ক্রোধই নয়, রীতিমতো বাংলাদেশি পণ্য এদেশে বিশেষ করে বাংলায় বয়কটের ডাক উঠে গিয়েছে।
কেউ কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের স্টল দিতে না দেওয়ার পক্ষপাতী হয়ে সরব হয়েছেন। কেউ আবার চাইছেন যে স্টল দিলেও তাতে যেন কেউ না যান। এমনই বিভিন্ন রকম পরামর্শ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ কোচবিহারের রাসমেলায় বাংলাদেশি পণ্য বয়কটের ডাকও। একটা বড় অংশের মানুষ চাইছেন যে কোচবিহারে বাংলাদেশের কোন স্টল দিতে দেওয়া না হোক। পাশাপাশি কেউ কেউ বলছেন যদি সরকার স্টল দিতে বাধ্য করে, তাহলে সেই স্টল যেন কেউ না যান, তাহলেই তাদের শিক্ষা হবে।
এই দাবি শুধুমাত্র লোকমুখে চলছে তা নয়, এ নিয়ে সরব হয়েছেন বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরাও। স্থানীয় নেতা-মন্ত্রীরা কেউ এটা নিয়ে সতর্ক, কেউ বিরোধিতা করেছেন, কেউ আবার পক্ষেও রয়েছেন। শুধু রাসমেলা উৎসবই নয় আলিপুরদুয়ারে ডুয়ার্স উৎসবেও একই ধরনের দাবি উঠেছে। বিশেষ করে প্রতি বছর রাসমেলায় বাংলাদেশের একাধিক স্টল থাকে। যাতে ভিড়ও থাকে প্রচুর। যদিও শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে এবং মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে কোচবিহার পুরসভার তরফে এই ধরনের পোস্ট না করার অনুরোধ করা হয়েছে।
কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অনুরোধ করেছেন, খেলা এবং সামাজিকতা দুটো আলাদা বিষয়। খেলাকে কেন্দ্র করে কে কি লিখেছে, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনও মানে হয় না। এটা কোনও সরকারি বিষয় নয়। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রীর সম্পর্ক রয়েছে। এ দেশ থেকেও ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের ব্যবসা করতে যান, বাংলাদেশ থেকেও আসেন। তাই দুপক্ষের যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয় সেটা দেখা উচিত। সকলকে অনুরোধ করেছেন এই ধরনের জনমত না গড়ে তুলতে। জানা গিয়েছে বাংলাদেশ থেকে ইতিমধ্যেই ১৩ টি আলাদা স্টলের জন্য ব্যবসায়ীরা রাস মেলায় চলে এসেছেন। প্রতিবারের মতো একই জায়গায় তারা সেখানে স্টল দিতে চাইছেন। এবং সেখানে তাদের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
তবে রবীন্দ্রনাথ বাবু এই জনমতের বিরোধিতা করলেও আলিপুরদুয়ারের ডুয়ার্স উৎসব কমিটির অন্যতম সদস্য তথা এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী অবশ্য সতর্ক বিষয়টি নিয়ে। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, উৎসবের আয়োজন এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। আলোচনা এবং বৈঠক এখনও বাকি রয়েছে। সমস্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পরই এ নিয়ে মন্তব্য করা সম্ভব।
তবে এই ধরনের বয়কটের ডাককে সমর্থন করেছেন কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক নিখিল রঞ্জন দে। তাঁর দাবি, বাংলাদেশ ভারতের জন্যই স্বাধীনতা পেয়েছে। সেই ভারতের বিরোধিতা করে যে ধরনের বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি-আচরণ-উল্লাস প্রকাশ করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু এবং খারাপ ইঙ্গিত বহন করে। যারা বয়কট করতে চাইছেন, তারা দেশকে ভালোবেসে এই ধরনের কথা বলেছেন। তিনি মনে করছেন এতে খারাপ কিছু নেই।
২৬ নভেম্বর থেকে কোচবিহারে বিখ্যাত রাস উৎসব শুরু হচ্ছে। ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হবে মেলা। এই মেলায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলা দেশের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও নেপাল-ভুটান ও বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন। প্রচুর টাকার বিকিকিনি হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্টলে বিশেষ করে শাড়ির দোকানে প্রচুর ভিড় হয়। বিশেষ করে ঢাকায় জামদানির চাহিদা রয়েছে এপারেও। এছাড়াও বাংলাদেশের গুড়-ইলিশ এ সমস্ত বিকোয় প্রচুর।