
North Bengal Durga Puja: পুজোর ছুটিতে অনেকে শহর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন ডুয়ার্স, তরাই বা পাহাড়ের পথে। কেউ হয়তো পাহাড়ে, কেউ জঙ্গলের আনাচে, আবার কেউ শহরের কোলাহল এড়িয়ে প্রকৃতির কোলে নিঃশ্বাস নিতে গিয়েছেন। তবে তাই বলে কি পাড়ার পুজোটা একেবারে মিস করতে হবে? একেবারেই নয়। উত্তরবঙ্গের বুক জুড়ে রয়েছে একের পর এক দুর্দান্ত দুর্গাপুজো। ঐতিহ্যে যেমন সমৃদ্ধ, তেমনই গ্ল্যামারে কাঁটায় কাঁটায় টক্কর দেয় সমতলের বড় পুজোগুলিকে।
উত্তরবঙ্গে ঘুরতে গিয়ে যদি ভাবেন পুজোর আমেজটা হারিয়ে যাবে, ভুল ভাবছেন। পাহাড়, নদী, জঙ্গল, সবকিছুর মাঝেই রয়েছে ঐতিহ্য মাখা দুর্গোৎসব। শুধু নজর রাখুন, সময় বার করুন, দেখবেন উৎসবের মধ্যেই রয়েছেন।
শিলিগুড়ি
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার শিলিগুড়ি। তরাই-ডুয়ার্স-পাহাড় যাঁরা ঘুরতে যাচ্ছেন, তাঁরা কমবেশি এই শহরে নামেন বা রাত্রিবাস করেন। ফলে সময় বার করলেই দেখে নেওয়া যায় এখানকার পুজো।
সেন্ট্রাল কলোনি সার্বজনীন, এনজেপির গর্ব। চম্পাসারি শক্তি সংঘ পাঠাগার, দেশবন্ধুপাড়া, দাদাভাই স্পোর্টিং, সুব্রত সংঘ, হাকিমপাড়ার উপকার অ্যাথলেটিক ক্লাব—প্যান্ডেল আর আলোর কারুকার্যে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। আশ্রমপাড়ার অগ্রগামী ক্লাব, রথখোলার স্পোর্টিং, সুভাষপল্লির সঙ্ঘশ্রী, ভারতনগরের সূর্যনগর ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন, প্রধাননগরের নবাঙ্কুর—সবক’টি পুজোতেই চোখ ফেরানো দায়।
জলপাইগুড়ি
গরুমারা, লাটাগুড়ি, চালসা, ধুপঝোরা, গজলডোবা। এই সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া জায়গা ঘুরতে গিয়ে ভুললে চলবে না পাশেই জলপাইগুড়ির দুর্দান্ত পুজোগুলি।
মালবাজারের সৎকার সমিতির পুজো হোক, ওদলাবাড়ির ডিপোপাড়া বা রথখোলার মণ্ডপ, সবই মন কাড়ে। চালসা, মেটেলি, ময়নাগুড়ি, যেখানেই যান না কেন, পুজো মিলবেই। জলপাইগুড়ি শহরের তরুণদল, রাজবাড়ির পুজো, রায়কতপাড়া, দিশারী ক্লাব, বাবুপাড়া, জয়ন্তীপাড়া, সংঘশ্রী পুজোর দিনে প্রতিটি জায়গাই রঙিন উৎসবে ভরা।
আলিপুরদুয়ার
ডুয়ার্সের ঘন অরণ্য মানেই আলিপুরদুয়ার। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প হোক বা জলদাপাড়া—প্রকৃতি তার সব রঙ মেলে ধরে এখানে।
আর শহরে? বাবুপাড়া, দত্তপাড়া, নেতাজি রোড, দুর্গাবাড়ি, শান্তিনগর, প্রতিটি জায়গাতেই পুজোর আয়োজন একেবারে মনকাড়া। শহর ছোট হলেও পুজোর বাজেট, আয়োজন, শোভা, সবই চমকে দেওয়ার মতো।
কোচবিহার
পর্যটকদের চিরচেনা গন্তব্য কোচবিহার রাজবাড়ি ও রসিক বিল। তবে দুর্গাপুজোর সময়ে এই শহরের গতি বদলে যায়।
রাজবাড়ির বড়দেবীর পুজো রাজ্যের প্রাচীনতমদের মধ্যে একটি। সঙ্গে কোচবিহার ক্লাব, মৈত্রী সংঘ, খাগড়াবাড়ি, নাট্য সংঘ, ভেনাস স্কোয়ার, শান্তিকুটির, সব পুজোতেই থাকে ঐতিহ্যের গন্ধ।
নিউ টাউনের নতুন পুজোগুলিও গ্ল্যামারে পিছিয়ে নেই। কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়েই দেখে আসতে পারেন সবক'টি।
রায়গঞ্জ
কুলিক পাখিরালয় দেখতে এসে যদি পুজোর মধ্যে পড়েন, তাহলে ভাগ্যবান বলা যায়। শিলিগুড়ি মোড়ের সুদর্শনপুর সর্বজনীন, অমর সুব্রত ক্লাব, শাস্ত্রী সংঘ, দেহশ্রী ব্যায়ামাগার, বিধাননগর বারোয়ারি, প্রতিবাদ ক্লাব, বিদ্রোহী ক্লাব, একটা একটা করে দেখে ফেলা যায় অটো বা টোটো ভাড়া করলেই।
বালুরঘাট
ডোগাছির অরণ্য, বানগড়ের প্রান্তিক সৌন্দর্য, বালুরঘাট পুজোর সময় সেজে ওঠে এক অন্য রূপে। সৃজনী, অভিযাত্রী ক্লাব, ত্রিধারা, কচিকলা ক্লাব, নিউটাউন, অমৃত সংঘ, মহামায়া প্রগতি সংঘ, প্যান্ডেল থেকে প্রতিমা, আলোকসজ্জা থেকে ভোগ, কোনও কিছুতেই কমতি নেই।
দার্জিলিং ও কার্শিয়াং
দার্জিলিংয়ে গেলে একবার ঢুঁ মারতেই হবে নৃপেন্দ্রনারায়ণ হিন্দু হলে। ১০৯ বছরের পুজো। ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা এই পুজোয় রয়েছে বিবেকানন্দ, চিত্তরঞ্জনের স্মৃতি।
অন্যদিকে, কার্শিয়াংয়ের রাজরাজেশ্বরী হলের পুজোও ইতিহাসে ঠাঁই পাবে। পাহাড়ের ধারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেপালি, গোর্খা, বাঙালি সকলে মিলে যে উৎসব হয়, তা দেখতে না পারলে পাহাড়যাত্রা অপূর্ণই থেকে যায়।