scorecardresearch
 

Darjeeling 10 Offbeat: লুকনো সৌন্দর্যের খনি এই জায়গাগুলি, দার্জিলিং পাহাড়ের ১০ অফবিট

Offbeat Spot North Bengal Darjeeling Gangtok: পাহাড় মানেই দার্জিলিং, গ্যাংটক, কালিম্পং, মিরিক নয়। তার বাইরেই হাতের কাছে একটা অজানা জগৎ রয়েছে। কোনওদিনও হয়তো নামই শোনেননি। অথচ সৌন্দর্যের খনি। এবার ঘুরে আসুন। বড় শহরের মতো একই খরচে। জেনে নিন এমন দশ ডেস্টিনেশন।

Advertisement
লুকনো সৌন্দর্যের খনি এই জায়গাগুলি, দার্জিলিং পাহাড়ের ১০ অফবিট লুকনো সৌন্দর্যের খনি এই জায়গাগুলি, দার্জিলিং পাহাড়ের ১০ অফবিট
হাইলাইটস
  • পাহাড়ের এই Virgin জায়গার নামই শোনেননি
  • এবার ঘুরে আসুন একই খরচে

Offbeat Spot North Bengal Darjeeling Gangtok: দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং, মিরিক, গ্যাংটক থেকে শুরু করে আরও বেশ কিছু জায়গা জনপ্রিয় পর্যটকদের কাছে। কিন্তু এখনও এমন কিছু ভার্জিন জায়গা রয়েছে যেগুলি সম্পর্কে খুব কম লোকই জানেন। অথচ বিখ্যাত জায়গাগুলির চেয়ে কোনও অংশে কম নয় এই জায়গাগুলি। দু-তিনদিনের ডেস্টিনেশন হিসেবে এবং অফবিটে যারা ঘুরতে ভালবাসেন তাঁদের জন্য একদম আদর্শ এই জায়গাগুলি। চাইলে সেখান থেকেই বড় শহরগুলি কিংবা বড় শহর থেকে এখানে ঘুরে আসতে পারেন। তবে একবার গেলে এই জায়গাগুলি থেকে ফিরে আসতে মন চাইবে না, তা হলফ করে বলা যায়।

কলাখাম 

কালিম্পঙ জেলার ছবির মতো সুন্দর পাহাড়ি জনপদ হল কলাখাম। মার্কেটিংয়ের বাজারে জনপ্রিয় না হলেও জেলার সবচেয়ে বেশি সুন্দর এই জায়গাটি। এই গ্রামের পশ্চিমদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা। যে কোনও হোমস্টে-র বারান্দায় বসলে দেখা যাবে দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়। একদিকে খাদ। গ্রামকে ঘিরে রয়েছে পাইন, ফার, ওক গাছের সারি। পাখির কলরবে এলাকা মুখর থাকে সব সময়। পর্যটকের ভিড় নেই বললেই চলে। কলাখাম থেকেই বরফ ঢাকা পাহাড় দেখা যায়। গ্রামজুড়ে রয়েছে ফুলের সারি। গ্রামে রয়েছে অপূর্ব ছাঙ্গে ফলস । শিলিগুড়ি জংশন থেকে গাড়ি রিজার্ভ বা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে ১১৫ কিলোমিটার দূরের এই জনপদে পৌঁছতে পারেন। শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে এই গ্রামে পৌঁছনো যায়।  আবার কালিম্পং থেকে শেয়ারেও গাড়ি পাওয়া যায়। কাঞ্চনকন্যায় এলে প্রান্তিক স্টেশন নিউ মাল জংশন স্টেশনে নামতে পারেন। সেখান থেকে কলাখাম যেতে পারেন। দূরত্ব প্রায় ৫২ কিলোমিটার। সেখান থেকেও যেতে পারেন। 

আরও পড়ুন

অফবিট টুরিজম

ইয়েলবং

ইয়েলবং গ্রামের নাম শুনেছেন? না শোনারই কথা। তাই এটি এখনও ভার্জিন ডেস্টিনেশনের তালিকাতেই রয়েছে। আগের চেয়ে কিছু লোক বেশি গেলেও ভিড় যাকে বলে, একদম নেই। পাহাড়িয়া ছোট্ট গ্রামটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভাণ্ডার। পর্যটকদের নেকনজরে না থাকায় এখনও পর্যন্ত পরিচ্ছন্নই রয়েছে এই গ্রাম। হোমস্টে-র ব্যবস্থা রয়েছে। পাহাড়ের কোলে এই ছোট্ট গ্রামে দিন দুই তিন আরামসে কাটিয়ে আসুন, ভালো লাগবেই। হোমস্টে তে খান স্থানীয় খাবার। অক্টোবর থেকে জুন মাস পর্যন্ত এখানে বেড়ানোর মরশুম থাকে। ইয়েলবং-এর নিকটবর্তী রেলস্টেশনটি হল নিউ মাল জংশন। শিলিগুড়ি থেকে গাড়িতেও যাওয়া যায়। ইয়েলবং থেকে চুইখিম, নিমবং এবং চারকোল খুব কাছে।

Advertisement

দারাগাওঁ

পাইনঘেরা পাহাড়ি গ্রাম। ছবির মতো কাঠবাড়ি। দুদিকের দেওয়ালেই জানলা। একদিকের জানলা খুলে উঁকি মারলেই নিচে এঁকেবেঁকে চলেছে তিস্তা। আর, অন্যদিকের জানলার বাইরে আকাশে টাঙানো কাঞ্চনজঙ্ঘা।
কী ভাবছেন? স্বর্গ! স্বর্গই বটে। উত্তরবঙ্গের নতুন এই স্বর্গের নাম—দারাগাঁও। কালিম্পং থেকে উনিশ কিলোমিটার। পথে পড়বে মিলিটারি ক্যাম্প। তারপর পাইনের আলো-ছায়া ঘেরা পথ দিয়ে খানিক এগোতেই রামধুরা। রামধুরা ছাড়িয়ে সোজা রাস্তা ধরে আরো খানিকটা এগোতে হবে। মিনিট দশ পরেই এসে পড়বে দারা গাঁও। ছবির মতো গ্রাম। এখনও পর্যটকদের ভিড় তেমন বাড়েনি। ফলে, হিমালয়ের সবুজ অনেক সজীব, কুমারী এখানে। হাতে গোনা সাত-আটটা হোমস্টে। রয়েছে কমলালেবুর বাগান। শীত এলেই কমলা ধরে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে গেলে গাছভর্তি কমলালেবু আর পাহাড় উজিয়ে আসা কমলা রঙের রোদ দেখে হয়তো ফিরতে ইচ্ছেই করবে না শহরে। পূর্ব হিমালয়ের অন্যতম সেরা ভিউ পয়েন্ট এই গ্রাম। শিলিগুড়ি থেকে বা কালিম্পং থেকে চলে যান দারাগাঁওতে।

মঝউলে 

সিকিম সীমানার পাহাড়ি নদীর পাশের এলাকা মঝউলে। পশ্চিমবাংলায় অংশ হলেও এই গ্রামটি সিমিকি  সংস্কৃতি বহন করে। আসলে মঝউলে থেকে সিকিমের রিষিখোলার দূরত্ব মাত্র চার কিলোমিটার। এখান থেকে সিকিমের সিল্ক রুটে ট্রেক করে যেতে পারেন। হেঁটেও গ্রাম ঘুরতে পারেন। আর এখানকার দরজা সারা বছরই খোলা থাকে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গ্যাংটকগামী গাড়িতে মঝউলে যাওয়া যায়। এখান থেকে সিকিমের পেডং, রিষিখোলা খুব কাছে। শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে গেলে সবচেয়ে ভাল। নইলে ভেঙে ভেঙে যেতে হবে।

দার্জিলিং অচেনা জায়গা
বাগোরা

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ফুটের বেশি উঁচু এই গ্রামটি। নিশ্চিন্তে ছুটি কাটানোর আদর্শ ঠিকানা। মোবাইল নেটওয়ার্ক ঠিকমতো লাগবে না। চারদিকের সবুজ প্রকৃতি চোখ জুড়িয়ে দেয়। কুয়াশা ঢাকা পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি বাগোরা গ্রামের বৈশিষ্ট্য তা ছাড়া এখানকার গাছ। বছরের যে কোনও সময়ই বাগোরা গ্রামে যেতে পারেন। সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে তো যাওয়াই যায়। নইলে শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে দার্জিলিংয়ের শেয়ার গাড়িতে উঠে দিলারাম নামতে হবে। সেখান থেকে ফের গাড়ি নিয়ে পৌঁছোতে হবে বাগোরা। বাগোরা গ্রামের মধ্য দিয়ে পায়ে হেঁটেই জিরো পয়েন্ট পৌঁছে যেতে পারেন।  এখান থেকে চিমনিগাঁও, লাটপাঞ্চোর, মংপু, চাতালপুর ঘুরে আসা যায় সহজেই। আর কোথাও না গিয়ে হাত পা ছড়িয়ে বসে থাকলেও পয়সা উসুল।

ভালুকহোপ

কালিম্পংয়েও গেলেন, কিন্তু ভিড়েও দমবন্ধ হলেন না। এমনটা চাইলে কটা দিন ডেরা বাঁধতে পারেন ভালুকহোপে। এই গ্রাম থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। সমুদ্রথেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ফিট উঁচুতে অবস্থিত এই গ্রামটি। কালিম্পংয়ের কাছে হলেও অত্যন্ত নির্জন। বছরের যে কোনও সময়ই ঘুরে আসতে পারেন। এখানেও হোম স্টেগুলি খুব ভাল। সব ব্যবস্থা আছে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে কালিম্পঙে পৌঁছে সেখান থেকে ভালুকহোপ যেতে পারেন। সরাসরিও এই গ্রামে পৌঁছনো যায়। ভালুকহোপ থেকেই কালিম্পংয়ের পর্যটনকেন্দ্রগুলি ঘুরে আসতে পারবেন। ডেলো পার্ক, বুদ্ধ মূর্তি, হনুমান মন্দির, গুরু পদ্মসম্ভবের মূর্তি।

তেনরাবং 

কালিম্পং-এর আর একটি ছোট গ্রাম তেনরাবং। অনেকে বলেন এই গ্রামটি নাকি রহস্যে ঘেরা পরিপূর্ণ। কারণ দিনে-রাতে রহস্যজনক ঘটনা ঘটে। ভুতূড়ে ঘটনাও ঘটে বলে প্রবাদ। পাহাড় ঘেরা এই গ্রাম সারা বছরই হালকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে। বর্ষাতেও হালকা কুয়াশা দেখা যায়। সারা বছরই এখানে বেড়াতে আসা যায়। হোম-স্টের ব্যবস্থা আছে। শরীর মন  থাকলে কটা দিন এখান থেকে ঘুরে যাওয়া যায়। কালিম্পং শহর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তেনরাবং গ্রামে এলে দেখতে পাবেন রং বেরঙের প্রচুর অর্কিড এবং ফুল। কালিম্পং থেকে গাড়িতে তেনরাবং পৌঁছনো যায়।

Advertisement

রঙ্গিত মাজোয়া 

খুব বেশি পর্যটকে রঙ্গিত মাজোয়া গ্রামে যেতে দেখা যায় না। বর্ষাকাল বাদে বছরের যে কোনও সময়ই এখানে বেড়াতে আসা যায়। এখান থেকে পর্বত, জঙ্গল ঘুরে পাখি, ফুল দেখে নিরিবিলিতে সময় কাটানো যায়। সারাটা দিন আলস্যে কাটানোর জন্য এই ছোট্টো গ্রামটি একেবারে আদর্শ। গ্রামের মধ্য দিয়েই বয়ে গেছে সজিখোলা নদী। নদীর ধারে খোলা মনে ঘুরে বেড়ান আনন্দে। শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে প্রথমে ঘুম এবং পরে মানেভঞ্জন হয়ে পৌঁছোনো যায় রঙ্গিত মাজোয়া গ্রামে। তবে এখানে রাস্তাঘাট খুব খারাপ। নিজেরা খবরদার গাড়ি নিয়ে আসতে যাবেন না। কাছেই কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে দার্জিলিং শহর এবং মানেভঞ্জন।

নানা রকম জায়গা

বিদ্দং

সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এই উচ্চতা প্রায় তিন হাজার ফুট। পাইন, ফারের জঙ্গলে নিরিবিলিতে ছুটি কাটানোর দারুণ ডেস্টিনেশন। কালিম্পঙের গা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া রেলি নদীর তীরেই বিদ্দং গ্রাম। কালিম্পং শহর থেকে এই গ্রামের দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার। গ্রামকে ঘিরে রয়েছে ঘন অরণ্য। সকালে পাখির কিচির মিচির এবং রাতে পোকার গুনগুনানি ছাড়া এখানে আর কোনও শব্দ পাওয়া যায় না। এখানেও মোবাইল নেটওয়ার্ক খুব উইক।পূর্ণিমা রাতে এই গ্রাম অপরূপ পরীর দেশ হয়ে ওঠে। গ্রামের প্রচুর বাঁশঝাড় রয়েছে। নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং হয়ে বছরের সব সময়ই যেতে পারেন বিদ্দং গ্রামে। কালিম্পং, লাভা, লোলেগাও, রিশপ খুব কাছেই।

লিংসে 

উত্তরবঙ্গের আরেকটি অফবিট পর্যটনকেন্দ্র হল লিংসে। কালিম্পঙের কাছেই অবস্থিত এই গ্রামটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ফিট উপরে অবস্থিত। এখানে ইকো ট্যুরিজমের ব্যবস্থা আছে। শহুরে জীবন থেকে পালাতে দুদণ্ড শান্তি পেতে লিংসে পালিয়ে যাওয়া যায়। লিংসে গ্রামের নাম না শুনলেও অনেকেই মুলখারকা হ্রদ চেনেন। সেখান থেকে হাঁটা পথে লিংসে গ্রাম। গ্রামে ঢোকার রাস্তাটি ফুলে ফুলে ভরা। ফুল আর অর্কিডের মাঝ দিয়ে হেঁটে যেতে হলে বিদেশী লোকেশনও পিছনে পড়ে থাকবে। যেন রূপকথার রাজ্য। এখানে ধান চাষ, এলাচ চাষ হয়। শিলিগুড়ি এবং কালিম্পং থেকে গাড়ি ভাড়া করে লিংসে পৌঁছে যান।

খরচ ও সতর্কতা 

খরচ সব জায়গাতেই কম বেশি একই। হোমস্টের খরচ মাথাপিছু হিসেবে ধরা হয়। ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা পড়ে প্রতিদিন। গাড়ি ভাড়া শিলিগুড়ি বা এনজেপি স্টেশন থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পড়বে গাড়িভেদে। বর্ষাকালে এলাকার সৌন্দর্য অপূর্ব থাকলেও পাহাড়ি এলাকা বর্ষাকাল এড়িয়ে চলাই ভাল, যে কোনও সময় ধস নামতে পারে রাস্তায়। ফলে বিপদ হতে পারে। সেটুকু বাদ দিলে মোহময়ী পাহাড়ের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে চলে আসুন ভার্জিন সুন্দরীদের দিকে।

 

Advertisement