

৪ দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুলে গেল শিলিগুড়ি থেকে সিকিম-কালিম্পংগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ফলে স্বস্তির নিঃশ্বাস একটা বিশাল এলাকা জুড়ে। এদিকে আপাতত আর ভারী দুর্যোগের পূর্বাভাস নেই। সেই সঙ্গে শীতের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড়ের বুকে। ফলে তাপমাত্রা খুব না পড়লেও মোটামুটি শীতের মরশুমের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন শিলিগুড়ি ছাড়িয়ে পাহাড়ের পথে পা বাড়ালেই। ইতিমধ্যেই দার্জিলিঙে ভিড় উপচে পড়েছে।
প্রবল বর্ষণের জেরে গত রবিবারই এই সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় ধস নামে। পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নেমে আসে কাদা, পাথর আর বৃষ্টির জল। তখনই সাময়িকভাবে যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। পরের দিনও ভারী বৃষ্টিতে ফের নেমে আসে নতুন ধস। ফলে শিলিগুড়ি ও সিকিমের সংযোগ রক্ষাকারী ‘লাইফলাইন’ অচল হয়ে পড়ে। তারপরই সেই সড়ক মেরামতির কাজ শুরু করে প্রশাসন। চার দিন সম্পূর্ণভাবে যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অবশেষে শুক্রবার তা খুলে গেল। শুরু হয়েছে ছোট ও মাঝারি গাড়ির যাতায়াত। বড় মালবাহী গাড়ি আপাতত ঘুরেই যাচ্ছে কালিম্পং হয়ে। এদিন তা খুলতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস পর্যটন মহলে। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, দুর্যোগের আভাস কেটে যেতেই ফের পরিস্থিতি ভাল হচ্ছে। এই মুহূর্তে দার্জিলিঙে পর্যটকের ভিড়। মোটামুটি আগামী ২ মাস পর্যটক ভর্তি। সিকিমেও উৎসাহ রয়েছে। মিরিক ও আশপাশের এলাকাতে ফের উৎসাহ দেখাচ্ছে সাধারণ পর্যটকরা। আগামী ১০-১৫ দিনে সেটাও ভরে যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন।
প্রসঙ্গত, এবারের বর্ষায় উত্তরবঙ্গ ও সিকিমে ধসের ঘটনা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। তিস্তায় ভয়াবহ বন্যা, লাচেন-লাচুং থেকে গ্যাংটক পর্যন্ত রাস্তা একাধিক জায়গায় ভেঙে পড়েছে। বহু পর্যটক আটকে পড়েছেন পাহাড়ে। রাজ্য প্রশাসন ও সেনাবাহিনী একযোগে উদ্ধারকাজ চালালেও প্রকৃতির তাণ্ডব সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে চেনা ছন্দে ফিরছে পাহাড়! ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। ফের ভিড় জমছে চেনা ম্যালে। বিদেশি পর্যটকেরাও আসা-যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন। দার্জিলিঙের মহাকাল মন্দিরে পুজো দিয়ে উত্তরে পর্যকদের আহ্বান জানালেন মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহাকাল মন্দির নিয়ে বড় ঘোষণা করার পরেই তিনি জানান, দার্জিলিঙের মহাকাল মন্দিরে খুব ভাল পুজো দিয়েছেন তিনি। আপাতত দুর্যোগের ফলে পর্যটক আসা অনেকটাই কমে গিয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ”বন্যার সময়ে প্রশাসন দায়িত্ব নিয়ে অনেক পর্যটককে প্রতিকূল অবস্থা থেকে বের করে এনেছে। প্রায় ১৫০০ পর্যটককে বের করা হয়েছিল সেই সময়ে। এখনও অনেকেই আসছেন। এখন দুটো রাস্তাই খোলা আছে। একটা তিনধারিয়া আর পাঙ্খাবাড়ি। আমি অনুরোধ করব পর্যটকরা যেন কোনও রকম ভয় না পেয়ে আবার পাহাড়ে আসে।”
এছাড়া কোন কোন রাস্তা খোলা?
প্রশাসনের তৎপরতায় বেশ কিছু রাস্তায় সংস্কারের কাজ শেষ করে গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। বর্তমানে দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি নামার দু’টি রাস্তা হিলকার্ট রোড ও পাঙ্খাবাড়ি রোড খোলা রয়েছে। পর্যটকদের জন্য হিলকার্ট রোড দিয়ে তিনধারিয়া হয়ে সুকনার দিকে নামার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, দীপাবলির মধ্যেই অনেক রাস্তা যান চলাচলের উপযুক্ত হয়ে যাবে।