ওয়েস্টবেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স এসোসিয়েশনের ডাকে একদিনের পেট্রোল পাম্প ধর্মঘট। মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সংগঠনের আওতাভুক্ত রাজ্যের প্রায় আড়াই হাজার পেট্রোল পাম্প। অগ্নিমূল্য পেট্রোল-ডিজেলে আম জনতার যেমন হাত পুড়ছে, তেমনই সমস্যায় পড়েছেন বাংলার শতাধিক ছোট তেলের পাম্প মালিক।
অনেক পাম্পই লোকসানের মুখে পড়ে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে! শুনতে অদ্ভুত লাগলেও পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ায় কেন্দ্রীয় নীতির চাপে বিগত বছর খানেক ধরেই ধুঁকছে বাংলার শতাধিক ছোট ও মাঝারি পেট্রোল পাম্প! কারণ, কেন্দ্র তেলের দাম বাড়ালেও পেট্রোল পাম্প মালিকদের কমিশন বিগত বছর চারেকে এক পয়সাও বাড়ায়নি।
তাই লিটার প্রতি পেট্রোল-ডিজেলের কমিশন বৃদ্ধি-সহ মোট দু’দফা দাবিতে আগামী ৩১ আগস্ট সারা রাজ্যের সমস্ত পাম্পে তেল কেনাবেচা বন্ধ রাখতে চলেছে পাম্প মালিকদের সংগঠন। শনিবার একটি বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন।
ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তুষার সেন জানান, পেট্রোল-ডিজেলের কমিশন বৃদ্ধির দাবির পাশাপাশি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ৩১ আগস্ট, আগামিকাল সারা রাজ্যের ওয়েস্টবেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স এসোসিয়েশনের আওতাভুক্ত রাজ্যের প্রায় আড়াই হাজার পেট্রোল পাম্পের কেনাবেচা বন্ধ রাখা হবে।
সঠিক মাপে তেল পেতে ফ্লো মিটারের দাবি জানিয়েছেন রাজ্যের পেট্রোল পাম্প মালিকরা। এছাড়া, বর্ষার সময় ইথানল মেশানো পেট্রোল কিনতে চাইছেন না তেল পাম্পের মালিকেরা। এ ক্ষেত্রে ইথানল বাদ দিয়ে তেল দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় নীতি আর তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির চাপে এই রাজ্যের, বিশেষত দক্ষিণবঙ্গের হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামের প্রায় ৫০০টি ছোট ও মাঝারি পেট্রোল পাম্প লোকসানের মুখে পড়ে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে!
হাওড়া আমতার একটি পেট্রোল পাম্পের মালিক জানান, ২০১৭ সালে কলকাতার বাজারে পেট্রোলের দাম মোটামুটি ৬৭ টাকার আশপাশে ছিল আর ডিজেলের দাম লিটার ছিল ৫৮ টাকার মতো। পরবর্তী চার বছরে তেলের দাম ৩২-৩৩ টাকা বাড়লেও পেট্রোল পাম্প মালিকদের কমিশন বাড়েনি।
তেলের দাম বাড়ায় কী ভাবে ক্ষতির মুখে পেট্রোল পাম্প মালিকরা? তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে বিনিয়োগের পরিমাণ। আগে যেখানে পাম্পের রিজার্ভার ভরতে ২৫-৩০ লক্ষ টাকা খরচ হতো, বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় ৪৫-৫০ লক্ষ টাকায় পৌঁছে গিয়েছে। ফলে এই বিপুল অঙ্কের ‘ওভার ড্রাফট’ দিতে রাজি হচ্ছে না অধিকাংশ ব্যাঙ্ক। ফলে সমস্যায় পড়ছেন পেট্রোল পাম্প মালিকরা।
তার উপর এই বছর চারেকে বেড়েছে বিদ্যুৎ, ইনসিওরেন্স, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ, বেড়েছে কর্মচারীদের বেতনও। ফলে কেন্দ্র কমিশন না বাড়ানোয় লাভের মুখ দেখতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পাম্প মালিকদের। চার বছর আগে পেট্রলিয়াম মন্ত্রক নির্ধারিত পেট্রলের লিটার প্রতি কমিশন ৩ টাকা ১৭ পয়সা আর ডিজেলের ক্ষেত্রে কমিশন ছিল ২ টাকা ১১ পয়সা। এই কমিশনের অঙ্ক প্রতি ছ’মাস পর পর বাড়ানোর কথা থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি।