ফজলি, হিমসাগর, ল্যাংড়া, লক্ষ্মণভোগ থেকে শুরু করে আরও কত নাম। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে আমের। পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির আম আছে। আমের প্রায় কয়েকশো জাত রয়েছে। আসুন দেখি কোন নামের কী ইতিহাস।
প্রথমেই আসি ফজলি আমের কথায়। শোনা যায়, ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে মালদহের কালেক্টর র্যাভেন সাহেব ঘোড়ার গাড়ি চেপে গৌড় যাচ্ছিলেন। জল তেষ্টা মেটানোর জন্য গ্রামের এক মহিলার কাছে জল খেতে চান। ফজলু বিবির বাড়ির আঙিনায় থাকা আম দিয়ে সাহেবের আপ্যায়ন করেন। সেই থেকে এই আমের নাম হয় ফজলি আম।
ল্যাংড়া- ভারতের এক খোড়া ফকিরের নামে আমটির নামকরণ হয়েছে। ফকিরের আস্তানা থেকে এই জাতের আম প্রথম পাওয়া যায়।
খিরসাপাত- ময়মনসিংহের মহারাজা সুতাংশু কুমার আচার্য্য বাহাদুর চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গড়ে তোলেন একটি আমবাগান। সেই বাগানইে অন্যান্য উৎকৃষ্ট জাতের আমের সঙ্গে চাষ হতো খিরসাপাত আম।
হাড়িভাঙা আম- এই আমগাছটির জন্ম মালদায়। এক কৃষক মাটির হাঁড়ি দিয়ে ফিল্টার বানিয়ে গাছে জল দিতেন। একদিন রাতে ওই মাটির হাঁড়িটি ভেঙে ফেলে কয়েকজন। ওই গাছে বিপুল পরিমাণ আম ধরে। সেগুলো ছিল খুবই সুস্বাদু। সেগুলো বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে গেলে লোকজন ওই আম সম্পর্কে জানতে চায়। সেই থেকে আমের নাম হয় হাড়িভাঙা।
গোপালভোগ- বাংলাদেশের সব জেলাতেই এই আম পাওয়া যায়। ল্যাংড়া আমের পরেই গোপালভোগের স্থান। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন কতটা সুস্বাদু।
আলফানসো- ভারত ও বাংলাদেশে এই আম পাওয়া যায়। পর্তুগীজ এক সামরিক বিশেষজ্ঞেরআলফানসু ডি আলবাকারকির নামানুসারে এই আমের নাম রাখা হয়
সুরমা ফজলি- নাটোরের কুরিয়াপাড়া গ্রামে আমজাদ হোসেন সুরমা ফজলি আমের চারা রোপণ করেছিলেন। এই আম তেমন পরিচিত নয়। তবে খুব সুস্বাদু।
গৌড়মতি- চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের আম এটি। আশ্বিনা ও ল্যাংড়া—এই দুই জাতের আমের মুকুলের প্রাকৃতিক পরাগায়নে এই জাতটির উৎপত্তি হয়েছে বলে আমটির নাম দিয়েছেন গৌড়মতি।
আশ্বিনা - যখন প্রায় সব আম পাকা শেষ তখন নিজের রূপ, রস, গন্ধ নিয়ে হাজির হয় আশ্বিনা। আশ্বিন মাসেই এই আম বেশি পাওয়া যায়। তাই নামও আশ্বিনা।
আম্রপালি- উন্নত জাতের আম এক গাছে এক বছর ফলে, পরের বছর ফলে না। কিন্তু আম্রপালি প্রতিবছর ফলে। 'দশেরী' এবং 'নিলম' জাতের দুটি আমের সংকরায়নের মাধ্যমে নতুন এ জাতটি উদ্ভাবন করেন। যার নাম দেয়া হয় আম্রপালি।
চোষা আম - নিজের বাসাবাড়ির ছাদে বা বাড়ির উঠোনে এই আমগাছ রোপণ করা যায়। এর ফলের সাইজ ছোটো। তাই এমন নাম।
দশেরি- প্রায় ২০০ বছর আগে ফকির মহম্মদ খান ওরফে গয়া মালিহাবাদির নেতৃত্বে একদল আফ্রিদি পাঠান আফগানিস্তানের সীমান্তে খাইবার গিরিপথের এক গ্রাম থেকে পেশোয়ার হয়ে ভারতে আসে। উত্তরপ্রদেশের ফারুকাবাদের নবাব মহম্মদ খানের বীরত্ব এবং যুদ্ধ বিদ্যা দেখে খুশি হন৷ বকশিস হিসেবে মহম্মদ খান ফলের বাগান করার অনুমতি প্রার্থনা করেন নবাব বাহাদুরের কাছে৷ সঙ্গে সঙ্গে তা মঞ্জুর হয়৷
মির্জা পসন্দ - এটি মুর্শিদাবাদের আম। শোনা যায়, নবাব নাজিম ফেরাদুন জাঁ মির্জা পদাধিকারী এক কর্মীর সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক করে আমের বাগান করেন। সেই থেকে আমের নাম হয় মির্জা পসন্দ।
হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে ভারত এবং মায়ানমারে প্রথম বন্য আম উৎপন্ন হয় বলে মনে করা হয়। আর প্রথম পাঁচ হাজার বছর আগে আমের চাষ করা হয় ভারতের দক্ষিণ অংশ, মায়ানমার এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে।