পুজোর আর মাস খানেক বাকি। কুমোরপাড়ার ব্যস্ততাই বলে দেয় মা আসছেন। মৃৎশিল্পীরা যেমন দূর্গা প্রতিমা গড়ার কাজে এখন ব্যস্ত তেমনই তাঁতের কাপড় বোনার ভরা মরশুম চলছে তাঁতিপাড়া গুলোয়। নদিয়ার নবদ্বীপের পার্শ্ববর্তী সমুদ্রগড়, নসরৎপুর, গোয়ালপাড়া, শ্রীরামপুর, জাহান্নগর, তামঘাটা, কমলনগর, পূর্বস্থলী জুড়ে এখন খালি তাঁতের ঠকাস ঠাকাস শব্দ। হস্তশিল্পীদের যেন দম ফেলার সময় নেই। ভোর হলেই তাঁতিবাড়ি থেকে বাণ্ডিল বাঁধা কাপড় ছুটছে সমুদ্রগড় গনেশ চন্দ্র তাঁত কাপড় হাটে।
পূর্ব বর্ধমান জেলার বৃহত্তম তাঁতহাঁট মানেই সমুদ্রগড়ের গনেশচন্দ্র তাঁতহাট। বর্ধমান জেলায় অবস্থিত হলেও নদীয়ার একটি বড় অংশের ব্যবসায়ীরা লক্ষ্মী লাভের আশায় ভিড় জমান সেখানে। পুজোর দুমাস আগে থাকতেই বিভিন্ন শহরের তাঁত ব্যবসায়ীরা ছুটে আসছেন এখানে। মূলত তাঁদের উদেশ্য, নতুন ডিজাইনের তাঁতের কাপড় কিনে গোডাউনে স্টক করে রাখা। হোক না লকডাউন। দূর্গাপুজোয় মায়েরা নতুন কাপড় পড়বেনা এটা তো হতে পারেনা।
যতই সরকারি বিধিনিষেধ থাকুক না কেন। মায়েদের একটিই কথা, পুজোয় চাই নতুন শাড়ি। স্থানীয় তাঁত ব্যবসায়ীদের দাবি, সমুদ্রগড়রের তাঁত জামদানির খ্যাতি সারা বাংলা জুড়ে রয়েছে। এছাড়াও নানা নকশার শাড়ি যেন কোন মায়েদেরই নজর কেড়ে নেবে। লোকাল তাঁতশাড়ির পাশাপাশি, ধনেখালি, বেগমপুরি, শান্তিপুর, ফুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া সহ বিভিন্ন অঞ্চলের কাপড় বিক্রি হয় সমুদ্রগড় তাঁত কাপড় হাটে।
সপ্তাহে দুদিন। বৃহস্পতিবার আর শনিবার। ভোর ৫টা থেকে শুরু হয় বেচাকেনা। পুজোর মরশুমে একএকদিন দু-তিন কোটি টাকার কাপড় বিক্রি হয়। দূর দুরান্তের ক্রেতারা আসেন নতুন ডিজাইনের কাপড় কিনতে। একটু বেলা বাড়লেই ক্রেতাদের গাঁট বন্দি কাপড় ছুটছে, কলকাতা, দুর্গাপুর, হাওড়া সহ নানা শহরে। এখানের ৮০০ টাকা দামের ঢাকাই প্যটার্ন জামদানি, বড় দোকানে কিনতে গেলে ২০০০ টাকা পড়ে যাবে। যদিও পাইকারি দরের পাশাপাশি খুচরো দরেরও কাপড় কিনতে পাওয়া যায় এখানে। ৩০০, ৪০০ টাকাতেও ভালো ভালো নকশার কাপড় মিলছে।