আরজি করে জুনিয়ক চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সুবিচার চেয়ে এখনও উত্তাল গোটা রাজ্য। আর এই আবহেই কৃষ্ণনগরে তরুণীকে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ঘিরে বাড়ছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। শনিবার মৃত তরুণীর বাড়িতে যান বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মৃত তরুণীর বাবা-মার সঙ্গে দেখা করেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। মৃত তরুণীর পরিজনদের সঙ্গে কথা বলার পর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন বিরোধী দলনেতা।
প্রসঙ্গত, কৃষ্ণনগরের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীর মৃত্যুতে এখনও ধোঁয়াশা অব্যাহত। সিট গঠন করে তদন্ত করছে পুলিশ। নেওয়া হচ্ছে সিআইডির সহযোগিতাও। তবে তদন্তে খুশি নন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার সকালে ‘রানিমা’ অমৃতা রায়কে সঙ্গে নিয়ে নিহতের বাড়িতে যান তিনি। ছাত্রীর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। আইনি সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, চিকিৎসকদের দিয়ে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যা বলে লিখিয়ে এনেছে পুলিশ। পরিবারের পাশে বিজেপি রয়েছে জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, যেকোনও আইনি সহায়তায় পাশে রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি।
শনিবার তরুণীর বাবা-মার সঙ্গে দেখা করার পর শুভেন্দু বলেন, “আমার সঙ্গে তরুণীর বাবা-মায়ের বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছে। সাধারণ পরিবার। প্রভাবও নেই। রাজনৈতিক যোগও নেই। আইসি ও পুলিশ মিথ্যা কথা বলে দাহ করিয়েছে। আমি যতটুকু জেনেছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাক্তারদের দিয়ে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পুলিশ আত্মহত্যা বলে লিখিয়ে এনেছে।” তরুণীকে শারীরিক নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিরোধী দলনেতা আরও বলেন, “যে রাজ্যে সন্দীপ ঘোষের মতো ডাক্তার জেলে যান। টালা থানার আইসি জেলে যান। সেখানে পুলিশকে কেউ বিশ্বাস করে না।” তাঁর বক্তব্য, পরিবার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন। কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে তাঁরা তদন্ত চাইছেন। আইনি লড়াইয়ে পরিবারের পাশে বিজেপি রয়েছে।
কৃষ্ণনগরের ঘটনায় মৃত তরুণীর মায়ের দাবি ছিল, মেয়েকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। তবে এরই মাঝে এবার উঠে আসছে অন্য এক তত্ত্ব। সেই তরুণীকে আদৌ খুন করা হয়েছিল, নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন, তাই নিয়ে ধন্দ রয়ে গিয়েছে পুলিশের মনে। আর এর নেপথ্যে তরুণীর ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া একটি অডিয়ো ক্লিপ। এই অডিয়ো ক্লিপ তরুণীর হোয়াটস্অ্যাপ স্টেটাসে পোস্ট করা হয়েছিল। সেখানে এক মহিলাকণ্ঠকে বলতে শোনা গিয়েছে যে, তাঁর মৃত্যুর জন্য তিনি নিজেই দায়ী। এই কণ্ঠস্বর তরুণীর কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, তরুণীর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এলে তবেই নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে, তিনি খুন হয়েছেন না কি, আত্মহত্যা করেছেন।
এদিকে একাধিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, কৃষ্ণনগরের সেই তরুণী জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে প্রাথমিক তদন্তের পরে। গত ১৭ অক্টোবর বিকেলে শেষ হয়েছে তরুণীর দেহের ময়নাতদন্ত। তার প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, তরুণীকে ধর্ষণের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, পরিবারের দাবি মেনে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়েছিল তরুণীর দেহের। উল্লেখ্য, গত ১৬ অক্টোবর সকালে কৃষ্ণনগরে পুলিশ সুপারের অফিস থেকে ৫০০ মিটার দূরে উদ্ধার হয় তরুণীর অর্ধনগ্ন দগ্ধ দেহ। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল অ্যাসিড ঢেলে পোড়ানো হয়েছে তরুণীকে। পরে ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে যায় ফরেন্সিক দল। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা ক্ষত পরীক্ষা করে জানান, তরুণীর দেহে আগুন ধরানো হয়েছিল মৃত্যুর আগেই। ওদিকে তরুণীকে গণধর্ষণ করে খুনের যে অভিযোগ উঠেছিল। যদিও প্রাথমিকভাবে সেই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, তরুণীকে ধর্ষণের কোনও প্রমাণ মেলেনি। তবে তরুণী নিজেই নিজের গায়ে আগুন ধরিয়েছিলেন না কি অন্য কেউ তাঁর দেহে আগুন ধরান সে ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করেননি চিকিৎসকরা।