পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় বন্যার পরিস্থিতিতে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (DVC)-র উপরেই ফের ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এবার মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, এরকম চললে DVC-র সঙ্গে রাজ্য সরকার সম্পর্ক না-ও রাখতে পারে।
'ফরাক্কা ড্রেজিং করে না, বাংলা ডোবে, বিহার ডোবে'
আজ অর্থাত্ বৃহস্পতিবারও বন্যা কবলিত এলাকায় পরিদর্শনে যান মমতা। এদিন পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি দেখে রীতিমতো দেখে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বললেন, 'ডিভিসি-র জলধারণ ক্ষমতা এখন মাত্র ৩৬ শতাংশ এসেছে। ডিভিসি-র জলে কেন বাংলা ডুববে? আমরা কৈফিয়ত চাই। ফরাক্কা ড্রেজিং করে না, বাংলা ডোবে, বিহার ডোবে। আর ডিভিসি ড্রেজিং করে না, বাংলা ডোবে। ঝাড়খণ্ডকে বাঁচানোর জন্য জল ছাড়া হয়। ডিভিসি-র সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখব কিনা, ভেবে দেখব।'
তাঁর কথায়, 'ডিভিসি কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা। ৪ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে। যা কোনও দিন হয়নি। আমরা পাঁচ লক্ষ পুকুর কেটেছি, কপালেশ্বর কেলেঘাট প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক এলাকাকে রক্ষা করেছি, ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান, যেটা পড়ে রয়েছে ১০ বছর ধরে, সেটাও আমরা বিপিআর তৈরি করছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে করে দেব। কিন্তু তা সত্ত্বেও যদি এই রেটে জল ছাড়ে, তাহলে সমস্যা। আজ যে জায়গায় জল ঢুকেছে সেগুলি সকালেও শুকনো ছিল। এত বার বলার পরেও জল ছাড়া বন্ধ করছে না ডিভিসি।'
মাইথন এবং পাঞ্চেত থেকে মোট ৮০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে
বৃহস্পতিবার ডিভিসির বিবৃতি জানাচ্ছে, মাইথন এবং পাঞ্চেত থেকে মোট ৮০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। ডিভিসি নতুন করে জল ছাড়ার ফলে দক্ষিণবঙ্গের হাওড়া ও হুগলি জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডিভিসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আবহাওয়ার পরিস্থিতির কারণে জলস্তর ক্রমাগত বাড়তে থাকায় মাইথন এবং পাঞ্চেত বাঁধের উপর চাপ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে তাই মাইথন থেকে ১০ হাজার এবং পাঞ্চেত থেকে ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে।
'যখন ৭০ শতাংশ ভরে, তখন কেন ছাড়ো না?'
বস্তুত, বুধবারও হাওড়া ও হুগলির বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে মমতা বলেছিলেন, 'ম্যান মেড ফ্লাড। মানে পরিকল্পিতভাবে বাংলাকে ডুবিয়েছে নিজেদের রাজ্যকে বাঁচাবার জন্য। বারবার বলে বলে ফেডআপ হয়ে যাচ্ছি। আরও ৩ লক্ষ কিউসেক জল রাখতে পারে। যখন ৭০ শতাংশ ভরে, তখন কেন ছাড়ো না? বাংলা কত সহ্য করবে?' গত বছরও বন্যা পরিস্থিতিতে এই একই অভিযোগ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে ত্রাণ যাতে সব বন্যা কবলিত মানুষের কাছে পৌঁছয়, সে বিষয়েও প্রশাসনকে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, 'কোনও জায়গায় যেন ত্রাণ নিয়ে একটাও অভিযোগ না আসে। আমি সরাসরি জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেব।'