বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ক্রমশ ধেয়ে আসছে স্থলভাগের দিকে। যার জেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে প্রবল দুর্যোগের সর্তকতা জারি করা হয়েছে। সুন্দরবনের উপকূলে নদী ও সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে। আজ জেলা জুড়ে কমলা সতর্কতা জারি রয়েছে। হাওয়া অফিস বলছে, শনিবার পর্যন্ত বাংলার সমস্ত জেলাতেই কমবেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
নিম্নচাপের বর্তমান অবস্থান
পশ্চিমবঙ্গ এবং সংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলের উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের উপর অবস্থিত নিম্নচাপটি আজ সকালে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলের উপর অবস্থান করছে। সাগর দ্বীপ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে, দিঘা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে, পারাদ্বীপ থেকে ১৯০ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর-পূর্বে এবং খেপুপাড়া (বাংলাদেশ) থেকে ২১০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি প্রায় উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে, আরও তীব্রতর হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে এবং আজ, ২৯শে মে, ২০২৫ তারিখ বিকেলের মধ্যে সাগর দ্বীপ এবং খেপুপাড়া (বাংলাদেশ) এর মধ্যবর্তী পশ্চিম বঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে। এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে এবং বাংলাদেশের সাগর দ্বীপ এবং খেপুপাড়ার মধ্যে স্থলভাগে আঘাত হানবে। যার ফলে পশ্চিমবঙ্গ ওড়িশায় বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টি
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে এই নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি শুরু হবে দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় জেলাগুলিতে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঝড়বৃষ্টির প্রকোপ আরও বাড়বে। এদিন ২৯ মে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এই জেলাগুলিতে তাই কমলা সতর্কতা জারি থাকবে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। সেই জেলাগুলিতে জারি থাকবে হলুদ সতর্কতা। শুক্রবার হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, কলকাতা, বর্ধমানে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কোথাও ভারী বৃষ্টি আবার কোথাও অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। হাওয়ার গতিবেগ চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার থাকবে ঘন্টায়। দক্ষিণবঙ্গের বাদবাকি জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টি হবে। বিক্ষিপ্ত ভাবে হাওয়া বইবে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে। শনিবারেও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ জেলাতে।
এদিকে নিম্নচাপের জেরে রাত থেকে টানা ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনাজুড়ে। আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে আছে। জেলার সুন্দরবন উপকূলে বৃষ্টির তীব্রতা বেশী। উপকূলে দমকা বাতাস বইছে। আজ দিনভর জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। জেলায় সর্বোচ্চ ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে অমাবস্যার কোটালের প্রভাবে সুন্দরবনের নদী ও সমুদ্রে জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ।
উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া
আগামী দু-দিনের মধ্যে বর্ষা ঢুকবে উত্তরবঙ্গে। অনুকূল পরিস্থিতিতে এগোচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। আরও কিছুটা এগিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যে ঢুকে পড়েছে বর্ষা। অসম এবং মেঘালয়ের কিছু অংশ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। জানা গিয়েছে, আগামী তিন দিনের মধ্যে উত্তরবঙ্গের কিছু অংশে ঢুকবে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু। উত্তরবঙ্গেও এদিন ভারী বৃষ্টি হবে জেলায় জেলায়। এর মধ্যে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারের কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। এই জেলাগুলিতে তাই জারি থাকবে কমলা সতর্কতা। আর উত্তরবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তাই সেই জেলাগুলিতে জারি থাকবে হলুদ সতর্কতা। শুক্রবার এবং শনিবার প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা উত্তরবঙ্গের উপরের দিকের পাঁচ জেলাতে। অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা বা প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলাতে। বিক্ষিপ্তভাবে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা। মালদা উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। রবিবারেও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা উত্তরবঙ্গে। বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা থাকবে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলাতে।
কলকাতার আবহাওয়া
২৯ মে কলকাতার আকাশ মূলত মেঘলাই থাকবে। বৃষ্টি হবে শহর জুড়ে। কলকাতায় ২৯ তারিখ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নামবে ২৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ১.৪ ডিগ্রি কম। এদিকে ২৯ মে কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকতে পারে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। কলকাতায় বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝড়ো বাতাস বইতে পারে।