মেসিকাণ্ডে মমতাকে আক্রমণ দিলীপেরশনিবার ভোরে কলকাতায় পা রাখেন লিওনেল মেসি । মেসি নামতেই শুরু হয় উল্লাস, স্লোগান, পতাকা নাড়ানো—পুরো শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আবহ।তবে যুবভারতীতে তাঁকে ঠিকমতো দেখতে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন দর্শকরা। উত্তেজিত দর্শকরা গ্যালারিও ভাঙচুর করে। ভিড়ের ঠেলাঠেলিতে নির্ধারিত সময়ের আগেই মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন মেসি। সেখানে শনিবার সন্ধ্যায় হায়দরাবাদে দেখা গেল সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। এক গাল হাসি নিয়ে গোটা মাঠ ঘুরে বেড়ালেন মেসি। কলকাতা ও হায়দরাবাদের এই ভিন্ন চিত্রের জন্য রাজ্যের তৃণমূল সরকারকেই কাঠগড়ায় তুললেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
আর্জেন্টিনার ফুটবলার লিওনেল মেসির কলকাতার অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেছেন, '... এটি একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান ছিল, এবং সারা দেশের ভক্তরা তাঁকে দেখতে এসেছিলেন। তবে, কেবল তৃণমূল নেতারা তাকে ঘিরে ছিলেন।' টাকা দিয়ে টিকিট কেটেও মেসিকে দেখতে না পাওয়া ক্ষুব্ধ দর্শকদের পাশে দাঁড়ান দিলীপ ঘোষ। মেসি কাণ্ডকে ঘিরে দিলীপ ঘোষ যে ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন, তা রাজনৈতিক মহলে নতুন করে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষ বলেন, 'বিশ্বকাপজয়ী বিশ্ববরেণ্য ফুটবলার লিওনেল মেসিকে নিয়ে যুবভারতীতে যা হয়েছে, তা শুধু একটি ব্যর্থ আয়োজন নয় এটি বাঙালির আন্তর্জাতিক অপমান।' তাঁর মতে, যারা কথায় কথায় বাঙালি অস্মিতা ও সংস্কৃতির কথা বলেন, তারাই রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাকে গোটা বিশ্বের সামনে লজ্জার মুখে ফেলেছেন।
দিলীপ ঘোষের বক্তব্য,, '... এটি একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান ছিল, এবং সারা দেশ থেকে ভক্তরা তাঁকে দেখতে এসেছিলেন। কেবল তৃণমূল নেতারা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য তাঁকে ক্রমাগত ঘিরে রেখেছিলেন এবং তাঁকে ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেননি। এটি বাংলার জন্য একটি আন্তর্জাতিক লজ্জা। ক্ষমা চাওয়া যথেষ্ট নয়, টিকিটের দাম ফেরত দিতে হবে...।'
দিলীপ ঘোষ স্মরণ করিয়ে দেন, কলকাতার ফুটবল ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই শহরে একসময় পেলে, দিয়েগো মারাদোনার মতো কিংবদন্তি ফুটবলাররা এসেছেন। এমনকি লিওনেল মেসিও অতীতে কলকাতায় পা রেখেছেন। কিন্তু কখনও এমন বিশৃঙ্খলা বা দর্শকদের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ দেখা যায়নি। তাঁর অভিযোগ, খেলাধুলা নিয়ে বাঙালির আবেগকে পুঁজি করেই রাজনীতি করার দুর্বুদ্ধির ফল এই ঘটনা। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হিসেবে দিলীপ ঘোষ বলেন, হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটেও সাধারণ দর্শকরা মেসিকে দেখতে পাননি। অথচ মাঠে মেসিকে ঘিরে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও তাঁদের ঘনিষ্ঠরা। সাধারণ মানুষের প্রতি এই অবিচারই দর্শকদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তাঁর কথায়, 'যারা টিকিটের জন্য সর্বস্ব খরচ করলেন, তারা গ্যালারিতে বসে শুধু বড় পর্দায় দেখলেন। আর রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের সেলফির হিড়িক চলল মাঠে।'
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি আক্রমণ করে দিলীপ ঘোষ বলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব বিষয়েই রাজনৈতিক লাভ খোঁজেন। আইপিএলে কেকেআর জেতার পরেও সেটাকে রাজনৈতিক মঞ্চ বানানো হয়েছে। নাচ-গান করে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করা হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের ছোট মন নিয়ে বড় আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান সফল হয় না।' দিলীপ ঘোষের মতে, এই ঘটনার ফলে শুধু কলকাতার নয়, গোটা বাংলার বদনাম হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, 'এই অপমানের জন্য দায়ী যারা, তাদের ধিক্কার জানাই।'