সাম্প্রতিককালে বাবরেবারই আলোচনায় উঠে এসেছে দেউচা পাঁচামি কয়লা খনি। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও বারেবারে উঠে আসে এই কয়লাখনির প্রসঙ্গ। সম্প্রতি সেখানে পাথর তোলার কাজ শুরু হয়। কিন্তু হঠাৎই বিপত্তি। দেউচা পাঁচামিতে কয়লা খনি প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিল স্থানীয় আদিবাসীরা। বিক্ষোভ দেখান আদিবাসী মহিলারা৷ তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য সরকার প্রতিশ্রুতি মতো কাজ করছে না, তাই খনি হোক তাঁরা চান না। এরপরেই খননের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রশাসনের লোকজনকে এলাকা ছাড়া করে আদিবাসী নিয়মে কেটে দেওয়া হয় চড়কা।
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন থেকে বীরভূমের দেউচা পাঁচামি কয়লা খনি প্রকল্পে কাজ শুরুর কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় কাজ। কয়লার উপরে মজুত পাথর উত্তোলনের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু প্রথম দিনই স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল প্রশাসনকে। প্রথম থেকেই খনি বিরোধী আন্দোলন করে আসছে স্থানীয়দের একাংশ। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই সাগরবান্দি গ্রামের আদিবাসী মানুষজন। তাঁদের বেশিরভাগই মহিলা।
এই দেউচা-পাঁচামিতে ৩৪০০ একর জমিজুড়ে মজুত রয়েছে কয়লা। ওই এলাকায় কমপক্ষে ২০ টি গ্রাম আছে। সেখানে প্রায় ২১ হাজার মানুষের বাস৷ এছাড়া রয়েছে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, জলাভূমি, চারণভূমি। কয়লার উপরের স্তরে ৬৭৫ মিলিয়ন টন ব্যাসল্ট শিলার স্তর রয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীরা নিজেদের এলাকা ছাড়তে রাজি নন। যদিও, রাজ্য সরকার জমিদাতাদের জন্য চাকরি, আর্থিক প্যাকেজ সহ একাধিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। তা সত্ত্বেও আদিবাসী মানুষজন তাঁদের ভিটেমাটি ছাড়তে নারাজ। পাশাপাশি। তাঁদের অভিযোগ, সরকার প্রতিশ্রুতি মতো কাজ করছে না। আর সেই অভিযোগেই দেউচার খনন কাজ বন্ধ করে দেয় আদিবাসী মানুষজন। বিশেষ করে আদিবাসী মহিলারা একত্রিত হয়ে খনিতে নেমে কাজ বন্ধ করে দেন। খনন কাজ চালিয়ে যাওয়া জেসিবি, পে লোডারগুলি খনি থেকে তুলে দেওয়া হয়। খনন কাজের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের লোকজনকে তাড়িয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।
তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, খনি হতে দেব না। বিক্ষোভকারী মহিলারা বলেন, 'আমরা খনি চাই না৷ আমরা জমি দেব না৷ প্রতিশ্রুতি মতো সরকার কিছুই করেনি৷ আমাদের কাছ থেকে জমি নিয়ে নেবে, পরবর্তীতে আমাদের ছেলেমেয়েদের কী হবে? তাদের ভবিষ্যৎ কী? এইরকম তো আমরা বাইরে গিয়ে পাব না৷ তাই জমি ছাড়ব না।' জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, শীর্ষ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটে যাবে।
রিপোর্টার-শান্তনু হাজরা