সুব্রত ঠাকুর নতুন মতুয়া মহাসংঘের সূচনা করলেনবছর ঘুরলেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই রাজ্যে শুরু হচ্ছে SIR অর্থাৎ বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া। যা নিয়ে মতুয়া গড়ে চিন্তার কালো মেঘ। আর এই আবহেই ঠাকুরবাড়ির রাজনীতিতে ফের নতুন অধ্যায়। ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ’ নামে আগে থেকেই দুটি সংগঠন সক্রিয় ছিল। এবার সেই একই নামে আরও একটি নতুন সংগঠন গঠনের কথা ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের দাদা ও বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর।
প্রসঙ্গত, বহুদিন ধরে ফিসফাস চলছিল, ঠাকুরনগরে দুই ভাইয়ের সম্পর্কে নাকি চিড় ধরেছে। সেই জল্পনাই এবার সত্যি হল। গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন নতুন মতুয়া সংগঠন—‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ’-এর নতুন কমিটি। উল্লেখ্য, ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘে’র নামে এত দিন দু’টি আলাদা কমিটি চলত। একটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকে সঙ্ঘাধিপতি হিসাবে মানে, অন্যটি তৃণমূলের মমতাবালাকে। দাদা সুব্রত এত দিন ছিলেন ভাই শান্তনুর অনুগামী গোষ্ঠীর মহাসঙ্ঘাধিপতি। নামসর্বস্ব পদ। নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিই ছিল বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনুর হাতে। সেই বন্দোবস্তে আর থাকলেন না গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত। এবার সুব্রত আনুষ্ঠানিক ভাবে বেরিয়ে গেলেন শান্তনুর ছত্রছায়া ছেড়ে। মতুয়া মহাসঙ্ঘের তৃতীয় সমান্তরাল কমিটি তৈরি করলেন গাইঘাটার বিধায়ক।
সুব্রতর এই ঘোষণা কার্যত ঠাকুরবাড়ির অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে আরও গভীর করল। তবে শান্তনুর মতো সুব্রতও বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকেই ‘প্রধান সেবায়েত’ পদে রেখেছেন। তার চেয়েও বড় চমক দিয়েছেন ‘প্রধান উপদেষ্টামণ্ডলী’ ঘোষণা করে। তাতে প্রথম নামটি রয়েছে শুভেন্দু অধিকারী, বিরোধী দলনেতা, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। উল্লেখ্য, শান্তনু ঠাকুর বর্তমানে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এবং একটি ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ’-এর সংঘাধিপতি। বাস্তবে অধিকাংশ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন শান্তনুই এমন অভিযোগ সুব্রতর ঘনিষ্ঠদের। এই ক্ষমতার দ্বন্দ্বই ধীরে ধীরে ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কে তীব্র বিভাজন তৈরি করেছে। দিন কয়েক আগেই সিএএ শিবির নিয়ে ঠাকুরবাড়িতে দুই ভাইয়ের প্রকাশ্য বিরোধ দেখা দেয়। শান্তনু যেখানে কেন্দ্রের নাগরিকত্ব আইন কার্যকরে সক্রিয়, সেখানে সুব্রত অভিযোগ করেন, মতুয়াদের নাম ভাঙিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে রাজনীতি করা হচ্ছে। সেই ঘটনার পর থেকেই ঠাকুরবাড়িতে একেবারে স্পষ্ট হয়ে ওঠে দুই গোষ্ঠীর দূরত্ব। সেই সময়ে ঠাকুরবাড়ির অপর পক্ষের প্রতিনিধি তথা তৃণমূল রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর প্রকাশ্যে সুব্রতের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। যদিও সুব্রত ও শান্তনু দু’জনেই বিজেপির সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু দলীয় কর্মসূচিতে তাঁদের একসঙ্গে দেখা যায় না। ফলে সুব্রতের নতুন সংগঠন ঘোষণা বিজেপির অন্দরে অস্বস্তি তৈরি করেছে।
নতুন সংগঠন ঘোষণা করে সুব্রত ঠাকুর বলেছেন, 'কোটি কোটি মতুয়া রয়েছেন! তিনটে কেন, প্রয়োজনে পাঁচটি কমিটি হবে। সমাজের জন্য কাজ করতেই এই নতুন সংগঠন।' দুই ভাইয়ের দূরত্বের প্রশ্নে তাঁর মন্তব্য, 'দূরত্ব ভাইদের মধ্যে নয়, সংগঠনের দালালদের সঙ্গে। তাদের সরাতে না পেরে নতুন সংগঠন গড়তে হয়েছে।' এ ব্যাপারে শান্তনু ঠাকুরের প্রতিক্রিয়া, 'ঠাকুরবাড়িতে প্রত্যেকেরই নিজের সংগঠন গড়ার অধিকার রয়েছে। আমি চাই না কেউ বঞ্চিত হোন। নতুন সংগঠন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠুক, সেই কামনা করি।' তবে ভাই বনাম ভাইয়ের এই লড়াই বিধানসভা নির্বাচনের আগে অন্য মাত্রা নেবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।