বাংলার পর্যটনকেন্দ্রগুলির আবহাওয়াডিসেম্বরের শেষে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা বাংলাজুড়ে। শীতের দাপটে কাঁপছে শহর থেকে গ্রাম, সমতল থেকে পাহাড়। কার্যত জবুথবু অবস্থা গোটা বঙ্গের। সোমবার শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, হাওয়া অফিস বলছে যা স্বাভাবিকের থেকে ০.৩ ডিগ্রি কম। এরই মধ্যে বর্ষবরণের মুখে বড়সড় পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া দফতর। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারির মধ্যে দার্জিলিং সহ উত্তরবঙ্গের উঁচু এলাকাগুলিতে বৃষ্টি এবং সঙ্গে বরফ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নতুন বছরের শুরুটা পাহাড়ে আরও ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্য দিয়েই হতে চলেছে।
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গের পার্বত্য জেলা দার্জিলিং ও কালিম্পং-এর পাশাপাশি আলিপুরদুয়ার জেলাতেও চলতি সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রবল ঠান্ডার সঙ্গে বৃষ্টি ও তুষারপাতের জেরে পাহাড়ি এলাকায় পর্যটকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন। একইসঙ্গে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় ঘন কুয়াশার সতর্কবার্তাও জারি করা হয়েছে। এদিকে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষশেষের দিনগুলি শীতের আমেজেই কাটবে। নববর্ষে শুরুতে সামান্য বাড়তে পারে তাপমাত্রা।
দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া
আগামী দু-দিন প্রায় একই রকম থাকবে দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা । বর্ষশেষের বাকি দিনগুলোতে জমিয়ে শীতের পরিস্থিতি। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে ফের বছরের শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে পারদ। ৩১ ডিসেম্বর থেকে ঊর্ধ্বমুখী হবে পারদ। তবে বড়সড় ও পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। নতুন বছরের শুরুতে ২ ডিগ্রি থেকে ৩ ডিগ্রি বাড়তে পারে তাপমাত্রা। বর্তমানে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পশ্চিমের জেলাগুলির তাপমাত্রা। আগামী কয়েকদিন পশ্চিমের জেলাগুলিতে ৯ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। উপকূলের জেলাগুলিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকতে পারে ১৩ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলাতেও আগামী কয়েকদিন ঘন কুয়াশার দাপট দেখা যেতে পারে। ফলে ভোরের দিকে যান চলাচলে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। দক্ষিণবঙ্গের সর্বত্রই আপাতত শুকনো আবহাওয়া থাকবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
কোথায় কত তাপমাত্রা?
সোমবার বাঁকুড়ায় ৯.৩ ডিগ্রিতে নেমে গিয়েছে তাপমাত্রা। এটাই দক্ষিণবঙ্গে সর্বনিম্ন। গত কয়েক দিনেও দক্ষিণবঙ্গের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বাঁকুড়ায়। এ ছাড়া, আসানসোলে ৯.৫, বর্ধমানে ৯.৪, শ্রীনিকেতনে ১০, বহরমপুরে ১০, কলাইকুণ্ডায় ১০.৮, মেদিনীপুরে ১১.৫, কাঁথিতে ১১.২, পানাগড়ে ১১.৬, পুরুলিয়ায় ১১, কল্যাণীতে ১১.৮, ব্যারাকপুরে ১২.৪, দিঘায় ১২, কৃষ্ণনগরে ১২.৬, উলুবেড়িয়ায় ১২.৪, সল্টলেকে ১৩.৮, দমদমে ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে পারদ।
উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি
দার্জিলিং-সহ উত্তরবঙ্গের উঁচু এলাকায় ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারির মধ্যে বৃষ্টি ও তুষারপাতের সম্ভাবনা। হালকা বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা দার্জিলিং, কালিম্পং এবং আলিপুরদুয়ার জেলায়। ঘন কুয়াশার সতর্কবার্তা রয়েছে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে। আজ ও কাল পার্বত্য এলাকা সহ কয়েকটি জেলায় ঘন কুয়াশা থাকবে কিছু এলাকায়। দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহারে ঘন কুয়াশার সতর্কবার্তা রয়েছে বেশিরভাগ জায়গায়। দৃশ্যমানতা ৫০ মিটারের কাছাকাছি নেমে আসতে পারে। কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদাতেও বিক্ষিপ্তভাবে ঘন কুয়াশা। দৃশ্যমানতা ২০০ মিটারের কাছাকাছি নেমে আসতে পারে। খুব সকালে কুয়াশার সম্ভাবনা বেশি। পরে পরিষ্কার আকাশ, কোথাও কোথাও দিনভর আংশিক মেঘলা আকাশ ও কুয়াশার সম্ভাবনা। দার্জিলিং জেলা সহ-সংলগ্ন পার্বত্য এলাকায় তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ৫ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকবে। পার্বত্য এলাকা এবং ওপরের দিকের পাঁচ জেলাতে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকবে। মালদা ও সংলগ্ন জেলাতে অর্থাৎ উত্তরবঙ্গের নিচের দিকে ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকবে তাপমাত্রা। দার্জিলিঙে সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হয়েছিল ৫.৪, গোটা রাজ্যে এটাই সবচেয়ে কম। এ ছাড়া, আলিপুরদুয়ারে ৯ ডিগ্রিতে নেমেছিল পারদ।
কলকাতাতেও জমিয়ে শীত
সোমবার সকালে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রার তেমন কোনও পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। ফলে শহরবাসীকে আরও কিছুদিন কনকনে ঠান্ডার সঙ্গেই দিন কাটাতে হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আকাশ মূলত পরিষ্কার এবং মেঘমুক্ত থাকবে। সকালের দিকে কোথাও কোথাও কুয়াশা থাকতে পারে। অনেকেই মনে করছেন বড়দিনের মতই কলকাতায় কনকনে ঠান্ডা থাকবে বর্ষশেষে।