রাতে বাড়িতে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালানোর পাশাপিশ ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে চলল দেদার লুঠপাঠ। ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া -১ ব্লকের সরগ্রাম অঞ্চলে। বাড়িতে ছয়-সাত জন দুষ্কৃতী ঢুকে পড়ে লুঠপাট চালায় বলে অভিযোগ। মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ও গলায় ধারাল অস্ত্র ধরে চলে গয়না, নগদ লুঠ। শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর এই ঘটনায় অভিযোগ দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জড়িত সন্দেহে দু'জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ধৃতদের আদালতে তোলা হবে।
জানা গিয়েছে শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর রাতে পেশায় জ্যোতিষীর বাড়িতে এই ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে। পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া -১ ব্লকের সরগ্রাম অঞ্চলের পুইনি গ্রামের বাসিন্দা নিবাস দাস। তিনি পেশায় জ্যোতিষী। অভিযোগ, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর রাতে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে, গলায় ধারালো অস্ত্র ধরে সশস্ত্র ডাকাতদল লক্ষাধিক টাকার গয়না, নগদ লুঠপাট করার পাশাপাশি বাড়ির পোষ্যকেও অপহরণ করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। মুখ ঢেকে বাড়িতে ঢোকে ৬-৭ জন ডাকাত। বাড়ির বাকি লোকজন সেই সময় বাইরে ছিলেন। বাড়িতে ছিলেন দুই বৃদ্ধা এবং এক যুবক। জানা গিয়েছে ,শুক্রবার ঘটনার সময় নিবাসবাবু বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে হুগলির জয়রামবাটি বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। বাড়িতে ছিলেন নিবাসবাবুর শাশুড়ি খুকুদেবী, খুকুদেবীর এক দিদি সীমাদেবী এবং নিবাসবাবুর ছেলে রাকেশ।
রাকেশ জানিয়েছে, প্রতিদিন রাতে বাড়ির সদস্যদের খাওয়া দাওয়ার পর কুকুরটিকে খাওয়ানো হয়। তারপর শৌচকর্মের জন্য কুকুরটিকে একবার বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার রাত প্রায় পৌনে এগারোটা নাগাদ তিনি যখন পোষ্যকে বাইরে ঘোরাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবে সদর দরজা খুলেছেন, সেই সময় ৬-৭ জনের সশস্ত্র ডাকাতদল হুড়মুড়িয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে ৷ প্রত্যেকের মুখ বাঁধা ছিল। হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, হাঁসুয়া ছিল। প্রথমে ঢুকেই রাকেশকে পিস্তল দেখিয়ে আটকে রাখে একজন। একজন ডাকাত তাঁকে লক্ষ্য করে গুলিও চালায় বলে অভিযোগ ৷ তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় সে প্রাণে বেঁচে যায়। রাকেশের পিঠের পাঁজর ছুঁয়ে যায় গুলি । তিনি প্রতিরোধ করলে অন্য এক ডাকাত তাঁর হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপ বসিয়ে দেয় বলে অভিযোগ ৷ এরপর ঘরে ঢুকে আলমারি ভেঙে গয়না লুটপাটের পাশাপাশি টাকা কোথায় আছে জানতে চায়। তারপর ৭ ভরি সোনা ও ৩৫ ভরি রুপোর গয়না সহ নগদ ৫০ হাজার টাকা লুটপাট করে পালায় ডাকাতদল। পালানোর সময় বাড়ির পোষা কুকুরটিকে পর্যন্ত তারা অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কাটোয়া থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। তদন্ত শুরু হয়। বাড়ির পোষ্য কুকুরটি উদ্ধার হয় চাষের জমির আলের ধার থেকে। সম্ভবত সেটিকে কোনও ঘুমের ওষুধ বা অন্য কিছু খাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে ঘোরের মধ্যে ছিল। এদিকে এই দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘিরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। জানা গিয়েছে,নিবাস দাসের বাড়ি কাটোয়া থানার ঘোড়ানাস গ্রামে। পুইনি গ্রামে তাঁর শ্বশুরবাড়ি। প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি পরিবার নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করছেন। বাড়ির পাশেই পারিবারিক মন্দির চত্বরে বসেই তিনি জ্যোতিষ চর্চা করেন। বাড়িতে রয়েছেন, বৃদ্ধ বিধবা শাশুড়ি খুকুদেবী, স্ত্রী চায়নাদেবী, এক ছেলে রাকেশ এবং এক মেয়ে প্রতিমা। ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে। স্ত্রী গৃহবধূ। এদিকে খবর পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন নিবাস দাস । ডাকাতির ধরন দেখে নিবাসবাবুদের অনুমান যে দুর্বৃত্তদের ওই দলটি দীর্ঘদিন ধরেই তাদের বাড়ির উপর নজর রাখছিল। তবে এই ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ সন্দেহ ভাজন ২ জনকে গ্রেফতার করেছে।
সংবাদদাতাঃ সুজাতা মেহেরা