East Midnapore Corpse Incident: কবর থেকে পুরনো দেহ তুলে সেলফি তুলছিল যুবক, কেন? কাঁথিতে রহস্য

খবর যায় কাঁথি থানায়। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। কিন্তু ততক্ষণে জনতার ক্ষোভ তুঙ্গে। পুলিশ যখন যুবককে উদ্ধার করতে এগোয়, তখন বাঁধে খণ্ডযুদ্ধ। একপক্ষ চায় যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হোক, অন্যপক্ষ দাবি তোলে কঠোর শাস্তির।

Advertisement
কবর থেকে পুরনো দেহ তুলে সেলফি তুলছিল যুবক, কেন? কাঁথিতে রহস্যMan tries to take selfie with corpse dug out of grave in East Midnapore
হাইলাইটস
  • মৃতদেহ টেনে তুলে তাকে দাঁড় করিয়ে সেলফি
  • কবর থেকে দেহ তুলে তন্ত্রসাধনা?
  • যুবক মানসিকভাবে অসুস্থ বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে

সকাল তখন ঠিক দশটা। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির শ্রীরামপুর গ্রামের মানুষজন তখনও নিজেদের কাজে ব্যস্ত। হঠাৎই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এক অদ্ভুত খবর—এক যুবক নাকি কবর খুঁড়ে মৃতদেহ তুলেছে! প্রথমে কেউ বিশ্বাস করতে চাননি। কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যেই ছবিটা একেবারে স্পষ্ট হয়ে যায়। গ্রামের শ্মশানঘাটের পাশে কবরের ভিতর থেকে এক যুবক সত্যিই একটি মৃতদেহ টেনে তুলে তাকে দাঁড় করিয়ে সেলফি তুলছিল বলে অভিযোগ। আর তা চোখে পড়তেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা।

কবর থেকে দেহ তুলে তন্ত্রসাধনা?

দেখতে না দেখতেই জনতা হুমড়ি খেয়ে পড়ে ওই যুবকের উপর। কে সে? কেন কবর থেকে মৃতদেহ বের করল? কোনও প্রশ্নেরই সদুত্তর মেলেনি যুবকের কাছ থেকে। বরং তার আচরণে ছিল এক ধরনের অস্বাভাবিকতা। তাতেই সন্দেহ আরও গাঢ় হয়। কেউ বললেন তন্ত্রসাধনা, কেউ বললেন অঙ্গ পাচার চক্রের সদস্য। কিছু মানুষ বললেন, এই ঘটনাই প্রমাণ করে ছেলেটি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে। উত্তেজিত জনতা রেহাই দেয়নি তাকে। বেধড়ক মারধর করা হয় যুবককে। পরে একটি ঘরে আটকে রাখা হয় তাকে।

খবর যায় কাঁথি থানায়। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। কিন্তু ততক্ষণে জনতার ক্ষোভ তুঙ্গে। পুলিশ যখন যুবককে উদ্ধার করতে এগোয়, তখন বাঁধে খণ্ডযুদ্ধ। একপক্ষ চায় যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হোক, অন্যপক্ষ দাবি তোলে কঠোর শাস্তির। পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্যত হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। অবশেষে, কমব্যাট ফোর্স নামিয়ে যুবককে উদ্ধার করে কাঁথি থানার পুলিশ। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় দারুয়া মহকুমা হাসপাতালে। 

যুবক মানসিকভাবে অসুস্থ বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যুবকের নাম প্রভাকর সিট। বয়স ৩৩। তার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরেরই এগরা থানার অন্তর্গত এলাকায়। কাঁথি মহকুমার পুলিশ সুপার দিবাকর দাস জানিয়েছেন, যুবক মানসিকভাবে অসুস্থ বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। তাই এখনও জেরা শুরু করা যায়নি। তবে জিজ্ঞাসাবাদের পরই স্পষ্ট হবে, সে আদৌ কোনও ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা, নাকি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এমন কাজ করেছে। জনতার মারধরে তার অবস্থা গুরুতর। তাই ঠিক কী কারণে সে এই কাজ করছিল, তা জানার জন্য জেরা করা যাচ্ছে না। এতটাই আহত যে, কথা বলার সামর্থ্য নেই।

Advertisement

কবর খুঁড়ে মৃতদেহ তুলে সেলফি?

এদিকে, গোটা শ্রীরামপুর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এক অদ্ভুত আতঙ্ক আর বিস্ময়। কেউ কেউ বলছেন, 'দিনের আলোয়, এভাবে কবর খুঁড়ে মৃতদেহ তুলে সেলফি? এ তো সিনেমাকেও হার মানায়!' আরও অনেকে বলছেন,  'রাত হলে তবু বুঝতাম তন্ত্রসাধনার চেষ্টা। কিন্তু এমন দিনে-দুপুরে? এটা নিঃসন্দেহে উদ্দেশ্যমূলক।' স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল বেগের কথায়, 'আমাদের এই গ্রামে কবরস্থান, পাশে শ্মশান, লক্ষ্মীমন্দির, সব কিছু রয়েছে। আমরা মিলেমিশে থাকি। কিছু দিন আগে পাশের লক্ষ্মী মন্দিরের কিছু জিনিস চুরি হল। আজ সকালে দেখলাম, কবরস্থানে মাটি খুঁড়ে দেহ তোলা হয়েছে। এক ব্যক্তি বাঁশের সঙ্গে সেই দেহ বেঁধে ছবি তুলছে।'

পুলিশ এখন পুরো ঘটনা ঘিরে তদন্ত শুরু করেছে। যুবকের মানসিক অবস্থার মেডিক্যাল রিপোর্টের অপেক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় থানায় জমা পড়েছে একাধিক অভিযোগ।

শেষ পর্যন্ত প্রভাকর ঠিক কী উদ্দেশ্যে এমন কাজ করল, তা এখনও ধোঁয়াশায়। তবে যা ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে পূর্ব মেদিনীপুরের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এক অত্যন্ত রহস্যজনক ও অস্বাভাবিক ঘটনা।

POST A COMMENT
Advertisement