ভোট যতই এগিয়ে আসছে, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা আরও জোরদার করছে। একদিকে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালি আবেগকে হাতিয়ার করে বিজেপি-কে নিশানা করছে, বিজেপি-ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারকে কোণঠাসা করতে কোনও কসুর রাখছে না। যার নির্যাস, বাংলায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) অনুযায়ী বিশেষ ক্যাম্পের আয়োজন করল বিজেপি। আর সেই ক্যাম্প ঘিরেই প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ক্যাম্প খুলে ঠকানো হচ্ছে বাংলার মানুষকে।
বাগদায় সিএএ আবেদন ক্যাম্প
উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী এলাকা বাগদায় ক্যাম্প খুলেছে বিজেপি। এই বিশেষ ক্যাম্পটি বাগদার কোনিয়াড়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় চৌহাটিয়া বাজারে আয়োজন করা হয়। স্থানীয় বিজেপি নেতা তথা বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা সৌরভ গায়লি এই উদ্যোগ নেন ক্যাম্প খোলার। দেখা যায়, সকাল থেকেই লম্বা লাইন। বিজেপির দাবি, প্রায় ১০০ জন মানুষ এই ক্যাম্পে নাগরিকত্বের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন। এক আবেদনকারী যুধিষ্ঠির মণ্ডলের কথায়, 'আমরা ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছি। আমাদের কাছে তখনকার কিছু প্রমাণপত্র রয়েছে। তাই এখন আমরা CAA-র আওতায় আবেদন করছি।' এদিন ক্যাম্পে আবেদনকারী অমলানন্দ ব্রহ্মচারী জানান, 'মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন CAA আবেদন দরকার নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আবেদন করতে। তাই আমরা আবেদন করছি।' বিজেপি-র তরফে সৌরভ গায়লির বক্তব্য, সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্যই এই ক্যাম্প। সিএএ তো এখন আইনে পরিণত হয়ে গিয়েছে।
মানুষকে ঠকানো হচ্ছে, দাবি তৃণমূলের
ক্যাম্পের তীব্র নিন্দায় সরব শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের দাবি, ভুয়ো ক্যাম্প বানিয়ে মানুষকে ঠকানো চলছে। তৃণমূলের অফিসিয়াল X হ্যান্ডলে লেখা হয়েছে, 'বাগদায় পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী নেতা একটি ভুয়ো CAA ক্যাম্প চালাচ্ছেন। নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া দেখভালের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের। স্থানীয় বিজেপি নেতাদের এতে কী অধিকার আছে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কি বিষয়টি স্পষ্ট করবে?'
তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রসেনজিৎ ঘোষের কথায়, 'বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেই তো বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ এখানেই তারা CAA নিয়ে নাটক করছে। মহারাষ্ট্রে চারজন মতুয়া শরণার্থীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যাঁদের কাছে বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর স্বাক্ষরিত কার্ড ছিল। এটা সম্পূর্ণ প্রতারণা। মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে।'
ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রভাব?
এই ক্যাম্পের সময়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যার ফলে অনেকেই মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গেও ভোটার তালিকা সংশোধন দ্রুত আসছে। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন, সেই প্রেক্ষিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার এই আগ্রহ বাড়ছে বলেই অনেকে মনে করছেন।