
১০০ দিনের কাজ শুরু হচ্ছে বাংলায়ভোটমুখী বাংলায় বড়সড় ধাক্কা খেল কেন্দ্রীয় সরকার। গত ৩ বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা ১০০ দিনের কাজের টাকা এবার পশ্চিমবঙ্গকে দিতেই হবে কেন্দ্রকে। বাংলায় ১০০ দিনের কাজ শুরু হওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা রইল না। কেন্দ্রের আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ, বকেয়া টাকাও কেন্দ্রকে মিটিয়ে দিতে হবে।
বাংলাকে ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে বাংলাকে ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের টাকা বণ্টনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি করা হয়েছিল বলে আদালতে দাবি করেছিল কেন্দ্র। পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, মালদহ, দার্জিলিং মতো একাধিক জেলায় সমীক্ষা করে দুর্নীতির প্রমাণ উঠে এসেছিল। সেই অভিযোগেই কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দেয়। এদিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'কলকাতা হাইকোর্ট ১ অগাস্ট থেকে ১০০ দিনের কাজের টাকা দিতে হবে। কলকাতা হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। ৩০ সেকেন্ডে আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। বিজেপি নেতাদের গালে দুটি বড় বড় থাপ্পড় পড়ল।'

হাইকোর্ট আগেই নির্দেশ দিয়েছিল
এর আগে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ স্পষ্ট জানায়, কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া যায় না’। তিনি বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ আলাদাভাবে তদন্ত হোক, কিন্তু সাধারণ মানুষের কাজ বন্ধ রাখা যাবে না। হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, প্রয়োজনে কেন্দ্র সরাসরি শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারে। একই সঙ্গে দুর্নীতির তদন্ত চলতে পারে।
'আপনারা মামলা তুলবেন, না কি আমরা খারিজ করব?'
হাইকোর্টের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে যায় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সোমবার বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ শুনানিতে কেন্দ্রকে কড়া ভাষায় প্রশ্ন করে, 'আপনারা মামলা তুলবেন, না কি আমরা খারিজ করব?' মিনিট তিরিশেরও কম সময়ের শুনানিতেই মামলাটি খারিজ করে দেয় আদালত। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বড় আইনি জয় পেল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, 'এর আগে হাইকোর্ট থাপ্পড় মেরেছিল, এবার সুপ্রিম কোর্টেও ধাক্কা খেল কেন্দ্র। এখন যদি টাকা না দেয়, তবে নিজেরাই বাংলা-বিরোধী তকমা পাবে।'
এই মামলায় পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতিও ছিল পক্ষভুক্ত। সংগঠনের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, 'আদালতের নির্দেশের ফলে হাজার হাজার গরিব মানুষের ঘরে ফের কাজের সুযোগ আসবে।'
২০২১ সাল থেকে বন্ধ থাকা ১০০ দিনের কাজ নিয়ে রাজ্য সরকারের ধারাবাহিক দাবি ছিল, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। কেন্দ্রের যুক্তি, প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে, তাই অর্থ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু আদালতের স্পষ্ট বার্তা, দুর্নীতি রোধের ব্যবস্থা আলাদা বিষয়, তাতে প্রকল্প বন্ধ রাখা যায় না। ফলে তিন বছরের অচলাবস্থা কাটিয়ে ফের গতি পেতে চলেছে ১০০ দিনের কাজ।