জীবিত হয়েও ভোটার তালিকায় মৃত ৬৬ বছরের মহিলাফের SIR-র এনুমারেশন ফর্ম নিয়ে গণ্ডগোল। পরিবারের যিনি মৃত তাঁর নামে ফর্ম এলেও জীবিত সদস্যের ফর্ম আসেনি। আর তা নিয়েই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বর্ধমান পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বড় নীলপুর মোড় এলকায়। এখানকার বাসিন্দা ৬৬ বছরের অর্চনা রায়। তাঁর পরিবারের সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটেছে। বৃদ্ধার বড় ছেলে এতে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন।
অর্চনা রায় বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার ২৩৭ নম্বর পার্টের ভোটার। তাঁর দুই ছেলে, যাঁদের মধ্যে ছোট ছেলে মারা গিয়েছেন। বর্তমানে বাড়িতে ছোট ছেলের স্ত্রী , তাঁর সন্তান ও বড় ছেলে এবং তিনি রয়েছেন। পরিবারের ৪ জন ভোটার। SIR-র এনুমারেশন ফর্ম এসেছে চারজনের নামেই। আশ্চর্যের বিষয় ছোট ছেলে মারা গেলেও তাঁর নামেও ফর্ম এসেছে, কিন্তু জীবিত অর্চনা রায়ের নামে ফর্ম আসেনি। তিনি নাকি ভোটার তালিকায় মৃত, এমনটি জানাচ্ছে। বড় ছেলে সুদীপ্ত পেশায় আইনজীবী। তিনি জানান, বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভায় ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন তাঁর মা। ২০০২ সালে ভাতার ২৬৮ বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার ছিলেন। তারপর বর্তমানে তিনি বর্ধমান দক্ষিণের বাসিন্দা ও ভোটার। তা সত্ত্বেও তাঁর এবারে SIR ফর্ম আসেনি।
2৩৭ নম্বর পার্টের বিএলও সুকান্ত মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাঁদের বলেন, আপনার মা মৃত তাই এসআইআর এনুমারেশন ফর্ম আসেনি। এই বিষয়ে ভোটার তালিকায় মৃত অর্চনা রায় বলেন, আমার নাম অর্চনা রায়। আমি জীবিত, আমাকে মৃত দেখিয়ে আমার নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে। BLO বাড়িতে এলো, সকলের ফর্ম দিল । আমি বললাম আমার ফর্মটা দাও। বলল আপনার ফর্ম নেই। আপনি মৃত। আমি বললাম আমি তো মৃত নই। আমি তো গত লোকসভা নির্বাচনেও ভোট দিয়েছি, ২০০২ সালেও আমার ভোটার লিস্টে নাম আছে। নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে ভোটার লিস্টে আমার নাম তুলুন। তৃণমূল কাউন্সিলরের নামে আমি একটা মামলা করেছিলাম। ও আমার জায়গা দখল করতে চেয়েছিল। আমরা জিতি। কোর্ট আমাদের জায়গা ফিরিয়ে দেয়। সেই রাগেই আমার নামটা কেটে দিয়েছেন কাউন্সিলর।
অর্চনা রায়ের বড় ছেলে সুদীপ্তের অভিযোগ, যেহেতু আমার মা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসবিহারী হালদারের নামে ২০২৪ সালে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা করেন জায়গা সংক্রান্ত। রাজনৈতিক মোটিভেটেড হয়ে আমাদের জায়গা কাউন্সিলর দখল করে নিতে চেয়েছিলেন। সেখানে আমরা মামলা করি। পরবর্তীতে মামলায় আমরা আমাদের জায়গা ফিরে পাই। সেই রাগে উনি তাঁর প্রভাব বিস্তার করে আমার মায়ের নামটা ভোটার লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন। মা ৬৬ বছর বয়স্ক একজন বৃদ্ধ মানুষ। তাঁকে হেনস্তা করার জন্য এই কাজ করেছেন। আমরা বিভিন্ন মহলে অভিযোগ জানিয়েছে বিষয়টা। সিইও এবং আমাদের ওয়েস্ট বেঙ্গল অবজারভার সুব্রত গুপ্তকে আমরা জানিয়েছি। ইতিমধ্যে বাধ্য হয়ে ৬ নম্বর ফর্ম মা নিজে ফিলাপ করেছে। ২০২১ সালে আমার ভাই মারা গিয়েছে, অথচ তাঁর SIR ফর্ম এলো । কিন্তু আমার মা যিনি জীবিত রয়েছেন তাঁর ফর্ম এলোনা। আমরা তৃণমূল বিরোধী রাজনৈতিক দল করি বলেই আমরা এরকম হেনস্তার শিকার হয়েছি। আমরা চাই আমার মায়ের নামটা ভোটার লিস্টের সংযোজন করা হোক এবং যথাযথ তদন্ত করা হোক।
যদিও কাউন্সিলর রাসবিহারী হালদার তাঁর বিরুদ্ধে আনা অর্চনা রায় ও তাঁর ছেলে সুদীপ্ত রায়ের সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা বলে জানান। তিনি বলেন ভোটার লিস্ট থেকে নাম কেটে দেওয়ার ক্ষমতা একজন কাউন্সিলরের কি থাকে? এতে সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারে রয়েছে। তিনি আরও বলেন পরিবারের যদি তাঁর কোনও সাহায্যের দরকার হয় তিনি তা করতে রাজি আছেন।
রিপোর্টারঃ সুজাতা মেহেরা