তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক পরিকাঠামোয় এক নতুন সমীকরণ ধরা পড়ছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর মধ্যে দৃঢ় সমন্বয় গড়ে উঠেছে, যা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
শনিবার দলের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে সুব্রত বক্সী স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, "অভিষেক আমাদের নেতা, আমাদের সবার নেতা, আমার নেতা।" রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি তৃণমূলের নবীন-প্রবীণ বিতর্কে বড় পরিবর্তন আনবে এবং অভিষেকের সাংগঠনিক সংস্কারের পথ সুগম করবে।
অভিষেকের সাংগঠনিক পরিবর্তনের পরিকল্পনা
দীর্ঘদিন ধরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের ভেতরে একাধিক সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করেছেন। তাঁর মত, "এক ব্যক্তি, এক পদ" নীতি কার্যকর হওয়া উচিত এবং ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা নেতাদের নির্বাচনে টিকিট না দেওয়াই ভালো। তাছাড়া, পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে পদবন্টনের উপরও তিনি জোর দিয়েছেন। এইসব সিদ্ধান্ত দলের একাংশের স্বার্থে আঘাত হানতে পারে বলে বিরোধিতা হচ্ছিল।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সুব্রত বক্সীর সমর্থন অভিষেকের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। অভিষেকের যুক্তিতে তিনি সম্পূর্ণ একমত, এমনটাই জানা গেছে সূত্র মারফত।
বক্সীর সমর্থনে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্বের অবসান?
তৃণমূলের রাজ্য সভাপতির পদে সুব্রত বক্সী এক দীর্ঘ সময় ধরে রয়েছেন, যা ভারতীয় রাজনীতিতে বিরল ঘটনা। তাঁর মূল ইউএসপি হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি অটুট আস্থা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অভিষেকের সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুব্রত বক্সীর মতামত দলের প্রবীণ নেতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি নবীন নেতৃত্বকে সমর্থন করেন, তাহলে দলের অন্য প্রবীণ নেতাদেরও অভিষেকের নেতৃত্বকে মেনে নিতে হবে। অর্থাৎ, অভিষেকের সাংগঠনিক সংস্কারের পথে আর কোনও বড় বাধা থাকছে না।
সংগঠনে আসছে নতুন রদবদল
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করতে চান। সেই পরিকল্পনায় সুব্রত বক্সীর সমর্থন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দলীয় সংগঠনে ব্যাপক সংস্কার এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস কীভাবে আগামী দিনে সংগঠনকে ঢেলে সাজাবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। তবে এই সমীকরণ স্পষ্ট করছে যে, দলের অভ্যন্তরে শক্তিশালী একটি নতুন অক্ষ তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে তৃণমূলের গতিপথ নির্ধারণ করবে।