একই এপিক নম্বরে দুই জায়গায়দু'জনের নাম একই ৷ বাবার নামও এক ৷ এমনকি একই এপিক নম্বর ৷ একজনের বদলে ভোটার তালিকায় আরেকজন নাম তুলেছেন বলে অভিযোগ ৷ ভোটাধিকার হারিয়ে এসআইআর-এর আবহের মাঝে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন পুলিশকর্মীর ছেলে অনিমেষ বিশ্বাস ৷ তিনি নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের শিবনিবাস গ্রাম পঞ্চায়েতের হালদারপাড়ার বাসিন্দা ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনিমেষ বিশ্বাসের দাদু অনিল বিশ্বাস দীর্ঘদিন শিবনিবাস গ্রাম পঞ্চায়েতের হালদারপাড়ার বাসিন্দা। তিনি ছিলেন পুলিশ কর্মী। আর ঠাকুমা কল্যাণী বিশ্বাস গৃহকর্ত্রী। তাঁদের একমাত্র সন্তান বিশ্বজিৎ বিশ্বাস। কর্মরত অবস্থায় বাবার মৃত্যুর পর তাঁর চাকরি পান ছেলে বিশ্বজিৎ। বিশ্বজিতের স্ত্রী রেখা বিশ্বাস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পাঁচ বছর আগে বিশ্বজিৎ পুলিশে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের এক ছেলে এবং এক মেয়ে। তাঁরা কোনওরকমে সংসার চালান। বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের ছেলে অনিমেষ বিশ্বাস ২০১৮ সালে ভোটের তালিকায় নাম তোলেন। ২০১৯ সালে ভোটও দেন। তবে অনিমেষ বাবুর ২০২১ সালে কোনও এক অজানা কারণে ভোটার লিস্ট থেকে তাঁর নাম বাদ যায়। এরপর অনিমেষ বিশ্বাস পুনরায় ভোটে নাম তোলার জন্য আবেদনপত্র জমা দেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর হেয়ারিং হয়। হেয়ারিং হওয়ার পরেও অনিমেষের ভোটে নাম না ওঠায় তৎকালীন সময়ে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের দ্বারস্থ হন। তবে তাঁদের তরফে জানানো হয় কোনও কারণবশত হয়তো নামটা বাদ গিয়েছে, ফের আবার আবেদন করার পরামর্শ দেন তাঁরা।
বর্তমানে SIR শুরুর পরে অনিমেষ বিশ্বাস BLO-র কাছে তাঁর ফর্ম না পাওয়ায় তিনি ব্যাপারটা জানতে চান। তখন স্থানীয় বিএলও তাঁর এপিক নাম্বার দেখে অনিমেষকে জানান এই নাম্বারের SIR- এর ফর্ম রানাঘাটে উত্তর-পূর্বের মাঠ পাড়ার BLO-র ওইখানে আছে। স্থানীয় বিএলও'র কথা শুনে অনিমেষ সেখানে যান ৷ সেখানকার বিএলও'র সঙ্গে তাঁর এসআইআর ফর্ম নিয়ে কথা বলেন ৷ তখন ওখানকার বিএলও আবার তাঁকে জানান, তাঁর ফর্ম ইতিমধ্যে ফিল-আপ করে জমা পড়ে গিয়েছে । এটি জমা দিয়েছেন রানাঘাট উত্তর-পূর্ব বিধানসভার বস্তা প্রাইমারির মাঠপাড়ার বাসিন্দা অনিমেষ বিশ্বাস নামে আরেকজন ৷ যেহেতু তাঁদের দু'জনের নাম ও বাবার নাম এবং এপিক নম্বর এক, তাই বিএলও ফর্ম রানাঘাটের বাসিন্দা অনিমেষ বিশ্বাসকে দিয়ে দিয়েছেন । তিনি ফর্ম ফিল-আপ করে জমা দিয়ে দিয়েছেন ৷ এই শুনে তো আকাশ থেকে পড়েন শিবনিবাস গ্রাম পঞ্চায়েতের হালদারপাড়ার বাসিন্দা এই অনিমেষ বিশ্বাস ৷ তিনি বুঝে উঠতে পারেন না, কী করে এমনটা হল ৷ তাঁর নাম, বাবার নাম থেকে এপিক নম্বর একই কী করে হল দু'জনের ৷ ভারতের নাগরিক ও স্থানীয় বাসিন্দা হয়েও তিনি নির্বাচনী বিষয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ! নিজের নামে এসআইআর-এর ফর্ম না-পাওয়ায় আতঙ্কে তিনি এবং এই নিয়ে চিন্তায় তাঁর পরিবারও।
শিবনিবাসের বাসিন্দা সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, এদের পূর্বপুরুষরা সকলেই ভারতে বসবাস করতেন। এখনও করছেন। অনিমেষের দাদু পুলিশে চাকরি করতেন। এর বাবা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, তিনিও পুলিশে চাকরি করতেন। তাঁর ছেলে অনিমেষ বিশ্বাস ভোটে নাম তোলার পরেও সে ভোট দিয়েছে। তাঁর কাছে কার্ড রয়েছে অথচ তাঁর কার্ড অন্যত্র গেল কী করে? কার গাফিলতিতে এই ঘটনা ঘটেছে সেটা প্রশাসনের দেখা উচিত। অনিমেষের সমস্ত কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁর SIR ফর্ম অন্যত্র যায় কী করে? এই ঘটনার পর থেকেই পরিবারটি আতঙ্কে রয়েছে। আমরা চাই যে অন্যায় ভাবে এর এপিক নম্বর ব্যবহার করে এসআই এর ফর্ম ফিলাপ করেছে তাকে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। শিবনিবাস গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিকাশ দাস বলেন, যাঁর ঠাকুর দাদা, বাবা পুলিশের চাকরি করতেন তাঁর ছেলে ভোটে নাম ওঠার পরেও তাঁর এপিক নম্বর ব্যবহার করে অন্যজন SIR-এর ফর্ম ফিলাপ করেছে। এটার তদন্ত হওয়া দরকার। কী করে একজন ভারতীয় নাগরিকের এপিক নম্বর অন্যজন ব্যবহার করে SIR-এ ফর্ম ফিলাপ করে। তিনি বলেন, আমরা চাই যাতে অনিমেষ বিশ্বাস তাঁর নিজের এপিক নম্বর ব্যবহার করতে পারে ও ভোটার তালিকায় তার নাম উঠুক। যাতে ভারতীয় নাগরিক হয়েও সে ভোট থেকে বঞ্চিত না হয়। এটা নির্বাচন কমিশনের উচিত গুরুত্ব দিয়ে দেখা।
রিপোর্টারঃ সুরজিৎ দাস