'বাংলা(Bengali) কোনও ভাষা নয়’, অমিত মালব্যর মন্তব্য ঘিরে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। আর তার দিন কয়েক পরেই 'Bangla Bhasa' বন্দনায় মজলেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান। ২২ শ্রাবণ উপলক্ষে, দীর্ঘ পোস্টে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানালেন অমিত মালব্য। লিখলেন, 'বাংলা ভাষাকে আজকের এই মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছেন ঠাকুর।' তাঁর পোস্ট জুড়ে একাধিকবার 'Bangla Bhasa'-র উল্লেখ। বললেন, 'বিশ্বমানের সাহিত্যসম্ভার, সঙ্গীত, দর্শন, সবকিছুর মাধ্যমে বাংলা ভাষার সম্মান বহুগুণ বৃদ্ধি করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।' এর পাশাপাশি অমিত মালব্য এও দাবি করলেন, 'মোদি সরকারই ৩ অক্টোবর ২০২৪-এ বাংলা ভাষাকে ‘শাস্ত্রীয় ভাষা’র মর্যাদা দিয়েছে।'
মালব্যর বক্তব্যে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, রবীন্দ্রনাথের অবদান এবং বাংলা ভাষার মর্যাদার বিস্তৃত বিবরণ। তবে এর মধ্যে 'ড্যামেজ কন্ট্রোলে'রই চেষ্টা দেখছে তৃণমূল কংগ্রেস। কুণাল ঘোষের পাল্টা কটাক্ষ, 'বাংলা নিয়ে নিজেদের অপমানজনক কাজ ও কথার ড্যামেজ কন্ট্রোলে আজ কবিগুরুকে নিয়ে টুইট করেছেন।'
Today is Baishey Shrabon (22e Shrabon), the death anniversary of Gurudev Rabindranath Tagore—India’s tallest polymath: poet, writer, playwright, composer, social reformer, philosopher, painter, and educator—who continues to inspire Indians across the length and breadth of our… pic.twitter.com/5GzEtKZg6V
— Amit Malviya (@amitmalviya) August 8, 2025
কুণালের আরও দাবি, 'নোবেল পুরস্কারের অংশ পড়লেই বোঝা যাচ্ছে বিষয়টি তিনি জানেন না... মূল বিষয়গুলি না জেনে লোক দেখানো পোস্ট করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়েছেন মালব্য।'
বিতর্কের সূত্রপাত দিল্লি পুলিশের এক চিঠি ঘিরে। বঙ্গভবনের অফিসার ইনচার্জকে পাঠানো সেই চিঠিতে লেখা ছিল, নয়াদিল্লির লোধা কলোনিতে আটক আটজনের নথিতে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ পাওয়া গিয়েছে। সেই কারণে বাংলাদেশি ভাষায় দক্ষ অনুবাদক চেয়েছিল দিল্লি পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস প্রশ্ন তোলে, বাংলা ভাষাকে কেন ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলা হল? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অভিযোগ করেন, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশ বাংলাকে অপমান করছে।
এর পরেই দিল্লি পুলিশকে সমর্থন করে আসরে নামেন অমিত মালব্য। এক্স-এ পোস্ট করে জানান, 'বাংলা(Bengali) নামে কোনও ভাষা নেই। ‘বাঙালি’(Bengali) বলতে বোঝায় জাতিসত্তা, ভাষাগত অভিন্নতা নয়। দিল্লি পুলিশ শুধু অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার জন্যই ‘বাংলাদেশি ভাষা’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বাংলার কোনও যোগ নেই।' তিনি যুক্তি দেন, বাংলাদেশের সরকারি ভাষা উচ্চারণ ও উপভাষায় ভারতের বাংলা থেকে আলাদা।
যদিও অমিত মালব্যর সেই যুক্তি ধোপে টেকেনি ঘাসফুল শিবিরের কাছে। এমনিতেই বাঙালি অস্মিতাকে হাতিয়ার করে আসরে নেমেছে TMC। তার উপর অমিত মালব্যর এই পোস্ট যেন আগুনে ঘি ঢালে। ৫ অগাস্ট কামারপুকুরে রামকৃষ্ণ মঠের অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'বাংলা ছাড়া ভারত হয়? পৃথিবী হয়? জাতীয় সঙ্গীতের ভাষা কে লিখেছিলেন? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আমাদের ভাষাকে অসম্মান করার চেষ্টা করবেন না।'
অমিত মালব্য বাংলা নিয়ে নিজেদের অপমানজনক কাজ ও কথার ড্যামেজ কন্ট্রোলে আজ কবিগুরুকে নিয়ে টুইট করেছেন। সেখানে নোবেল পুরস্কারের অংশ পড়লেই বোঝা যাচ্ছে বিষয়টি তিনি জানেন না।
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) August 8, 2025
1) নোবেলজয় করেছিল 'সং অফারিংস' যেটা বিশ্বকবির নিজে ইংরেজিতে লেখা। রুটিন অনুবাদ নয়।
2) 'সং অফারিংস' শুধু… https://t.co/ElKsdeRyvQ
গত বুধবার সংসদের মকরদ্বারের সামনে বিক্ষোভে নামেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা। সংসদে মালব্য-মন্তব্যের প্রতিবাদে নোটিসও দেওয়া হয়।
এরই মাঝে অমিত মালব্যর 'বাংলা ভাষা' নিয়ে লম্বা পোস্ট সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ। এটা কি নিছকই কবিগুরুর বন্দনা? নাকি 'ড্যামেজ কন্ট্রোলে'র (কুণালের কথা মতো) চেষ্টা? তার উত্তর অবশ্য বিশ্লেষকরাই ভাল দেবেন।