শুক্রবারই তাঁর জামিন হয়ে গিয়েছিল দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত থেকে। কিন্তু আইনি কাগজপত্র সংক্রান্ত জটিলতায় জেলমুক্তি পিছিয়ে যায়। ২০২২ সালের ১১ অগাস্ট বোলপুরে নিজের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। অবশেষে দেড় বছর পরে তিহাড় জেল থেকে মুক্তি পেলেন অনুব্রত মণ্ডল। পুজোর আগেই জেলমুক্তির খবরে ইতিমধ্যেই নিজভূম বীরভূমে উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে অনুব্রত অনুগামীদের মধ্যে।
সোমবার রাতে তিহাড় জেল থেকে বেরিয়ে গেলেন অনুব্রত মণ্ডল। মুক্তি পেলেন কেষ্ট। তিহাড় জেলের ৩ নম্বর গেট থেকে বের হলেন অনুব্রত ওরফে কেষ্ট মণ্ডল। ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হল তাঁকে। গরু পাচার মামলায় ইডির মামলাতেও জামিন পেয়েছেন তিনি। মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলও অপেক্ষা করছিলেন তিহাড় জেলের বাইরে। এদিকে মঙ্গলবারই কলকাতায় ফিরতে পারেন কেষ্ট মণ্ডল। আইনজীবীদের গাড়িও রয়েছে তাঁদের সঙ্গে। মেয়ে একটি হাওয়াই চটি নিয়ে এসেছিলেন। জেলের চটি ফেলে দিয়ে সেটা অনুব্রত পরে নেন। জেল থেকে বেরিয়ে দিল্লি বিমানবন্দরের দিকে রওনা দিয়েছেন কেষ্ট মণ্ডল। ১৮ মাস পরে মুক্তি পেলেন তিনি। সিবিআইয়ের পর ইডির মামলাতেও জামিন পেয়েছেন তিনি। তিহাড় থেকে বেরিয়েই তিনি এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দেন। মঙ্গলবারই বাড়ি ফিরবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ইডি-র দায়ের করা গরু পাচারের মামলায় জামিন পেয়েছেন তিনি। ১০ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পেয়েছেন তিনি। এর আগে সিবিআই-র মামলায় জামিন পেয়েছিলেন বীরভূমের কেষ্ট। তৃণমূল নেতার জামিন মঞ্জুর করেছে বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চ। এবার ইডি-র মামলাতেও জামিল মেলাতে তিহাড় জেল থেকে ছাড়া পেতে চলেছেন। কয়েকদিন আগেই অনুব্রতর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলও জামিন পেয়েছেন।
কয়েকটি শর্ত দিয়ে অনুব্রততে জামিন দিয়েছে আদালত। সেগুলি হল-অনুব্রত মণ্ডল পশ্চিমবঙ্গে কোথায় থাকবেন সে বিষয়ে তদন্তকারী সংস্থাকে জানাতে হবে। এর সঙ্গে মোবাইল নম্বরের তথ্যও দিতে হবে। আদালত বলেছে যে অনুব্রত মণ্ডল এমন কোনও পদক্ষেপ নেবেন না, যা তদন্তকে প্রভাবিত করবে। তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারবেন না।
এর আগে বার বার জামিন চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন অনুব্রত। তাঁর আইনজীবী সওয়াল করার সময় বার বার জানান, গরু পাচার মামলায় অন্য অভিযুক্তেরা ছাড়া পেলেও তাঁর মক্কেলকে আটকে রাখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে অনুব্রতের জামিনের বিরোধিতা করা হয় বার বার। সওয়ালে তারা জানায়, এই মামলায় অনুব্রতই মূল অভিযুক্ত। জামিন পেলে তিনি সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে পারেন। সেই যুক্তিতে বেশ কয়েক বার অনুব্রতের জামিন খারিজ হয়ে যায়। অবশেষে সিবিআই এবং ইডি, দুই মামলাতেই জামিন মঞ্জুর হয় কেষ্টর।
বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রশংসা শোনা গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। ভোটের আগে জনসভায় মমতা বলেছিলেন, 'বীরভূমে চক্রান্ত চলছে। কেষ্টকে কতদিন ধরে জেলে ভরে রেখেছে। কিন্তু মানুষের মন থেকে ওকে দূর করতে পারেনি। আমি তো আসতে আসতে দেখছিলাম, তরুণ প্রজন্ম ওর কথা বলছে। আমি কাউকে শিখিয়ে দিইনি। আমি মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখছিলাম। ও কাজ করেছে, ও কাজ করতে জানে।'