যুগ যুগ ধরে পৌরোহিত্য ও শাস্ত্রীয় আচার আচরণ পুরুষরাই করে আসছেন। সমাজ সেটা মেনেও নিয়েছে। আর তাই মহিলা ঢাকি, মহিলা টোটো চালক, মহিলা বাস কন্ডাক্টর, দেখা গেলেও মহিলা পুরোহিত প্রায় নেই বললেই চলে। তবে এখন অবশ্য মেয়েরা সংস্কৃত ভাষা ও বিষয় নিয়ে চর্চা করছেন। কাজেই মেয়েরা যে পৌরোহিত্যের কাজ যবেন না তেমনটা আর বলা যায় না। আর সেটাই এবার বাস্তব হতে দেখা গেল সালানপুরে। স্থানীয় চতুষ্পাঠী টোলে পৌরহিত্যের পাঠ নিচ্ছেন বৈশাখী চট্টরাজ।
সিনেমাতেও দেখা যায় প্রথা ভাঙার দৃশ্য। এমনকী কোনও কোনও সময় শহরাঞ্চলেও দেখা যায় তেমনটা। তবে এবার গ্রামবাংলাতেও ঢুকে পড়ল প্রথা ভাঙার ধারা। রীতিমত সংস্কৃত চতুষ্পাঠী টোলে গিয়ে দুর্গাপুজোর পাঠ নিচ্ছেন বৈশাখী চট্টরাজ। পুজোর ফলমূল কাটা বা সাজসজ্জার দায়িত্বে থাকা বৈশাখীর স্বপ্ন এবার পুরোহিতের আসনে বসে মা দুর্গার আবাহন করা।
সালানপুরের এথোড়া গ্রামে চক্রবর্তীদের দুর্গামন্দিরে শুরু হয়েছে এই চতুষ্পাঠী টোল। আর সেই টোলের পণ্ডিত কার্তিক মুখোপাধ্যায়ের কাছেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তাঁর মেয়ে বৈশাখী। পণ্ডিতমশাই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন বছর সাতেক আগে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই বীরভূম থেকেও সালানপুরে প্রশিক্ষণ নিতে আসছেন বৈশাখী। টোলে যেমন শিল্পাঞ্চলের পুরোহিতরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তেমনই তাঁদের পাশে বসিয়ে নিজের মেয়েকেও চণ্ডীপাঠ, দুর্গাশ্লোকের শিক্ষা দিচ্ছেন কার্তিবাবু। টোল-সংস্কৃতির পাঠশালায় বাড়তি অলঙ্কার এখন বৈশাখী চট্টরাজ। যাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন শ্বশুর বাড়ির লোকজনও। তাঁদের ইচ্ছে বাড়ির দুর্গাপুজোয় পৌরহিত্য করুন গৃহবধূ বৈশাখী।
পশ্চিম বর্ধমানের একমাত্র চতুষ্পাঠীর টোল শিক্ষক কার্তিক মুখোপাধ্যায়। বেদ, বেদান্ত, সংস্কৃতির পাঠ ছিল তাঁর। চাকরী জীবনে ছিলেন খনিকর্মী। অবসর নেওয়ার পর সেই শিক্ষা ছড়িয়ে দিতেই চতুষ্পাঠী টোল খোলেন তিনি। শুধু পুরোহিতরা নন, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, এমনকী বিজ্ঞানের ছাত্ররাও ছুটে যাচ্ছেন তাঁর টোলে। পুজোর প্রাক্কালে পৌরহিত্য বার্তা ও চণ্ডীপাঠে গমগম করে উঠছে মন্দির চত্বর।
সারা বছর নিত্যপুজো করেন বাংলার যে পুরোহিতরা তাঁরাও বোধ হয় প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছেন। কারণ বিয়ে পৈতে শ্রাদ্ধ, সবেতেই একই সুর আর শুনতে চাইছেন না কেউ। তাই সময়ের দাবি মেনে তাঁরাও এখন যাচ্ছেন টোল-সংস্কৃতির পাঠশালায়। পেশাদার পুরোহিতরা তো আছেনই, তার সঙ্গে সংস্কৃতে অনার্স পাঠরত বা প্রাক্তন মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার এমনকী পেশাদার কীর্তনীয়াও যাচ্ছেন টোলে। চাল কলা বিদ্যা ছেড়ে প্রকৃত সংস্কৃত শিক্ষাই এখন লক্ষ্য আধুনিক পুরোহিতদের।