দুর্গাপুজার আগে বাংলাদেশের ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সাম্প্রতিক অন্তর্বর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার। পদ্মার ইলিশ, যাকে বাঙালির রন্ধনশৈলীতে মাছের রাজা বলা হয়, এবার নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতীয় বাজারে পৌঁছানোর পথ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার আমলে শুরু হওয়া এই ‘ইলিশ কূটনীতি’ এবার নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে।
বাংলাদেশ সরকার কেন এই পদক্ষেপ নিলো?
বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার জানান, “আমরা ইলিশ রপ্তানি করার অনুমতি দিতে পারি না, যখন আমাদের নিজেদের লোকজন এগুলো কিনতে পারে না।" বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় ভোক্তাদের জন্য পর্যাপ্ত ইলিশ সরবরাহ নিশ্চিত করতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আগে দুর্গাপূজার আগে ভারতে ইলিশ রপ্তানির যে প্রথা চালু ছিল, সেটাও এবার বন্ধ হল।
ইলিশ কূটনীতি ও এর প্রভাব
ইলিশ কূটনীতি ছিল বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শেখ হাসিনার উদ্যোগে ইলিশের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ দুর্গাপুজার উপহার হিসেবে ভারতে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানি করেছিল। কিন্তু এবার নতুন সামরিক-সমর্থিত সরকারের অধীনে এই প্রথার ধারাবাহিকতা রোধ করা হয়েছে, যা ভারতীয় বাজারে ইলিশের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করেছে। পশ্চিমবঙ্গ, মুম্বাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু সহ বিভিন্ন স্থানে ইলিশের চাহিদা তুঙ্গে থাকলেও, এবার দাম বেড়ে যাবে।
ভারতীয় বাজারে ইলিশের মূল্য বৃদ্ধি
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কিছু উপায়ে ইলিশ ভারতীয় বাজারে পৌঁছেছে, বিশেষ করে মায়ানমারের মাধ্যমে। দিল্লির সিআর পার্ক মার্কেটের মাছ বিক্রেতাদের মতে, বাংলাদেশ থেকে আসা ইলিশের দাম এখন ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা প্রতি কেজি, যা আগের তুলনায় বেশ বেশি। যদিও দুর্গাপুজার সময় কিছু ইলিশ পাওয়া যাবে, তবে সরবরাহের ঘাটতির কারণে দাম আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পদ্মার ইলিশের বিশেষত্ব
পদ্মার ইলিশের স্বাদ ও গঠন অন্য সব ইলিশের তুলনায় ব্যতিক্রমী। বাংলাদেশ থেকে গঙ্গা নদীর শাখা পদ্মা থেকে আহরণ করা এই ইলিশ বাঙালি রন্ধনপ্রণালীতে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বলা হয়ে থাকে, পদ্মার ইলিশের ঘন ও রসালো মাংস এর স্বাদে আলাদা বৈশিষ্ট্য যোগ করে, যা অন্য কোনো ইলিশে পাওয়া যায় না। এই ইলিশ দুর্গাপুজার সময় বাঙালির খাদ্যতালিকার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হয়ে থাকে।
নিষেধাজ্ঞার ভবিষ্যৎ প্রভাব
বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় ভারতের বাজারে ইলিশের চাহিদা মেটাতে অন্য উৎসের উপর নির্ভর করতে হবে। ওডিশা, গুজরাট এবং মায়ানমার থেকে ইলিশের আমদানি বাড়ানো হতে পারে, কিন্তু পদ্মার ইলিশের স্বাদে মিল নেই। ফলে, ইলিশ প্রেমী বাঙালিদের এবার বেশি অর্থ খরচ করতে হতে পারে।