শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে বারবার গোষ্ঠী সংঘর্ষের অভিযোগ তুলে থাকেন বিরোধীরা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে যা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ। আর এই আবহেই সোমবার রাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বসিরহাট। গতকাল রাতে বসিরহাটের শাঁকচূড়া বাজারের কাছে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়ের কাছে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চলে। এই সংঘর্ষ তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বলেই জানা যাচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়ের কাছে চলা গুলিতে জখম হয়েছেন এক পুলিশকর্মী । গুরুতর আহত অবস্থায় ওই পুলিশকর্মীকে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । জানা গিয়েছে, ধেয়ে আসা গুলি থেকে এক তৃণমূল ছাত্র নেতাকে বাঁচাতে গিয়েই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বসিরহাট থানার অনন্তপুর ফাঁড়ির পুলিশ কনস্টেবল। এই ঘটনায় এক তৃণমূল নেতার ছেলে-সহ ৪১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২ রাউন্ড গুলি। রাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাফ নামানো হয়।
জানা যাচ্ছে, সোমবার সন্ধ্যায় শাঁকচুড়ার বাজারের কাছে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা শুরু হয় । রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । অভিযোগ, দুই গোষ্ঠীর লোকজন গালিগালাজ শুরু করে । তার থেকেই দুই গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে হাতাহাতি লেগে যায় । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বসিরহাট থানার অনন্তপুর ফাঁড়ির পুলিশ । এরপর আচমকাই সেখানে গুলির আওয়াজ শোনা যায় । অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে । আহত পুলিশকর্মীকে প্রথমে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে । এই ঘটনার পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি চালান হয় । ঘটনাস্থলে আসেন বসিরহাটের পুলিশ সুপার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
কী কারণে এমন ঘটনা
স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার দাবি, তাঁদের দলের এক নেতা বাজার থেকে ফিরছিলেন। সেই সময়ে তাঁকে কেউ বন্দুক দেখায় । তখনই পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে । সেই সময় গুলি চললে গুলিবিদ্ধ হন এক পুলিশ কর্মী । জানা গিয়েছে সিরাজুল বেশে নামক এক ব্যবসায়ী সোমবার রাতে শাঁকচূড়া বাজার এলাকায় তার কার্যালয়ে একটি ঝামেলায় জড়ায়। সেই ঝামেলা মেটাতে যায় বাজারে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা ও উত্তর ২৪ পরগণা জেলার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান বুলবুল। তার দাবি তখনই এক দুষ্কৃতী তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। সেই ধেঁয়ে আসা গুলি দেখতে পেয়ে কনস্টেবল আশরাফুজ্জামান বুলবুলকে নীচে বসিয়ে দেয়। তখনই সেই গুলি এসে লাগে ওই পুলিশকর্মীর বাঁ কাঁধে। তারপর তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তারপরেই শুরু হয় বচসা। এই ঘটনায় তৃণমূল নেতার ছেলে-সহ ৪১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২ রাউন্ড গুলি। ২ তৃণমূল নেতা শাহানুর মণ্ডল, সিরাজুল বেশের মধ্যে ‘বিবাদ’ থেকেই এই গন্ডগোল। শাহানুর ঘনিষ্ঠ টিএমসিপি নেতা আশরাফুজ্জামান বুলবুলকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়।
তণমূল পার্টি অফিসে তল্লাশি
ঘটনার পর স্থানীয় তৃণমূল পার্টি অফিসে তল্লাশি চালায় পুলিশ। সূত্রের খবর সেখান থেকে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। স্থানীয় এক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুতুবুদ্দিন গাজীর জানিয়েছেন, ঘটনার পর পুলিশ তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে একাধিক অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস নেতা নিজেই অস্ত্রমজুত রাখার কথা বলছে। তাতে রীতিমত আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বসিরহাটে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তেজনা বেড়েছে।
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে দিলীপ
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বসিরহাটে পুলিশ কনস্টেবল গুলিবিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, আমি আগেই বলছিলাম পুলিশের এখন বড় কাজ হচ্ছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানো। টাকা পয়সা তুলে দেওয়া, সংগঠনের কাজ করা, ভোট জেতানো। এখন তৃণমূলের মধ্যে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে সেটা পুলিশকে দিয়ে মেটাতে হচ্ছে এবং পুলিশকে গুলি খেতে হচ্ছে। সমস্ত সমাজবিরোধীদের নিয়ে তৃণমূল পার্টিটা আছে, গন্ডগোল মারপিট হবেই, পুলিশের ক্ষমতা নেই সমাজবিরোধীদের গায়ে হাত দেওয়া ।পুলিশ পার্টিটাকে চালিয়ে ভোট জিতিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে, জানিনা আর কতজনকে শহিদ হতে হবে।