স্বপ্ন ছুঁয়েও বাস্তবে ফেরা হল না। এভারেস্টে পৌঁছনোর পরও আচমকাই শেষ হয়ে গেল পর্বতপ্রেমী সুব্রত ঘোষের সফর। শৃঙ্গ ছুঁয়ে নেমে আসার সময়েই মৃত্যু হয়েছে রানাঘাটের বাসিন্দা এই শিক্ষকের। নামার পথে সাউথ সাইটের কাছে কোনও একটি এশে অন্ধকারে আটকে পড়েছিলেন সুব্রত। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। খবরটি জানিয়েছেন এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী দেবাশিস বিশ্বাস। এভারেস্ট সামিট শুরু হতেই নতুন করে এই মৃত্যুর খবরে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের শীর্ষে পৌঁছন সুব্রত ঘোষ। সঙ্গে ছিলেন রানাঘাটের আরও একজন শিক্ষিকা রুম্পা দাস। সন্ধ্যাতেই ক্যাম্প করে নেমে আসেন তাঁরা। প্রথমে রুম্পার অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর মেলেছিল। কিন্তু শৃঙ্গ ছোঁয়ার সময়ে সুস্থই ছিলেন সুব্রত ঘোষ। যদিও আবহাওয়া সে সময়ে ছিল প্রতিকূল। সূত্রের খবরহ, শৃঙ্গে পৌঁছতে অনেকটাই সময় লাগে যায় সুব্রত ঘোষের। তাঁর অক্সিজেনও ফুরিয়ে গিয়েছিল বলে দাবি।
পর্বতারোহণের নিয়ম বলে সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে শৃঙ্গ ছুঁয়ে ১০টার মধ্যেই নেমে আসতে হয়। সূত্রে খবর, শৃঙ্গ জয় করতে বেরোনোর সময়ই দেরি করেন সুব্রত ঘোষ। রাত ১১টায় বেরিয়ে প্রায় দুপুর ২টো নাগাদ শৃঙ্গ ছুঁয়ে তারপর নামার জন্য রওনা হন। অতিরিক্ত সময় লাগায় ফুরিয়ে গিয়েছিল অক্সিজেন। সঙ্গে থাকা শেরপা জানিয়েছেন, হিলারি স্টেপের কাছে এসেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন সুব্রত। তাঁকে নামানোর অনেক চেষ্টা করেও পারেননি শেরপা। ওখানেই মৃত্যু হয় পর্বতপ্রেমী শিক্ষকের।
রাতে সুব্রত ঘোষের বেসক্যাম্পে না ফেরা নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন পরিবার ও ক্লাবের সদস্যরা। পরে সকাল হতেই তাঁর মৃত্যুর খবর মেলে। শোকে ভেঙে পড়ে পরিবার। বৃহস্পতিবারই এভারেস্ট ছোঁয়ার সুখবর পেয়েছিলেন তাঁরা। বাড়িতেস ছিল উৎসবের মেজাজ। অথচ সেই আনন্দ মুহূর্ত পরিণত হল বিষাদে।
রানাঘাট তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন সুব্রত ঘোষ। বাগদা ব্লকের কাপাসাটি মিলন বিথি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। ৪৫ বছর বয়সি এই শিক্ষকের বহুদিনের স্বপ্ন ছিল এভারেস্ট ছুঁয়ে দেখার। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্বতারোহী বসন্ত সিংহ রায়ের মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ কৃষ্ণনগরের সদস্য ছিলেন সুব্রত ঘোষ। তবে সূত্রের খবর, এবারের অভিযানে ক্লাবের তরফে শুধু রুম্পা দাস এবং অসীম কুমার মণ্ডলকেই পাঠানো হয়েছিল। সুব্রত ঘোষ অভিযানে সামিল হয়েছিলেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে।
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, হিলারি স্টেপের কাছে রয়েছে সুব্রত ঘোষের মৃতদেহ। ভোর ৪টের সময় বেসক্যাম্প-৪-এ এসে তাঁর মৃত্যু সংবাদ দেন শেরপা। এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে মৃতদেহ নামানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।