'সবকা সাথ সবকা বিকাশ' বক্তব্য নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পাশে দাঁড়ালেন প্রবীণ বিজেপি নেতা তথাগত রায়। এনিয়ে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে নন্দীগ্রামের বিধায়কের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তথাগত রায় লিখেছেন, 'শুভেন্দু, গতকাল তুমি সায়েন্স সিটির মঞ্চ থেকে যা বলেছ তা অগণিত বিজেপি কর্মীর হৃদয়ের কথা। আমারও। অভিনন্দন।'
২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসে 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ' মন্ত্র দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা ভোটের পর দলের পর্যালোচনা বৈঠকে সেই মন্ত্রই বদলের ডাক দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার তিনি বলেন,'রাষ্ট্রবাদী মুসলিম, সবকা সাথ সবকা বিকাশ বলব না। যাঁরা আমাদের সঙ্গে আছে, তাঁদের সঙ্গে আমরা থাকব। সংখ্যালঘু মোর্চার দরকার নেই'।
কেন 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ' নিয়ে আপত্তি শুভেন্দুর?
তাঁর ব্যাখ্যা নিজেই দিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা বলেন,'২৬-এ আমাকেও ভোট দিতে দেবে না। তার কারণ আমি হিন্দু। আমার বাড়ির সামনে সকাল থেকে ৫০ জন জেহাদি বসে থাকবে। পুলিশ দর্শকের আসন গ্রহণ করবে। এক্ষুণি আমাদের জাগতে হবে। এই সায়েন্সসিটিতে বসে আছি। ১০ কিলোমিটার দূরে ঘটকপুর ও ভাঙড়ে চারটে হিন্দু অঞ্চল আছে। দুটো অঞ্চলের হিন্দুদের ভোট দিতে দেয়নি। বাদুড়িয়া, হাড়োয়া, ক্যানিং পশ্চিমে দেড় লক্ষ-দুলক্ষ ভোটে জেতে ওরা। বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়ে ইসলামাবাদ হয়ে গিয়েছে। মানিকতলায় বেঙ্গল কেমিক্যাল লাগোয়া এলাকায় একটা হিন্দুকে ভোট দিতে দেয়নি। ভোটারকার্ড নিয়ে ভোট হয়নি, স্লিপে ভোট হয়েছে। আমরা গণতন্ত্র চাই বাংলায়। পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষে থাকবে না। ভয়ঙ্কর অবস্থা! ধনেখালি, কেশপুর, ইন্দাস, পাত্রসায়র, শীতলকুচি হিন্দু বলে ভোট দিতে দেয়নি। সংখ্যা ৫০ লক্ষ'। বাংলায় উপদ্রুত এলাকা ঘোষণা করার দাবি করেছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়,'কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকে প্রবেশ পথে। ভোটারকার্ড দেখার শক্তি তাদের নেই। উপদ্রুত এলাকায় আইন লাগু করে ভোট করাতে হবে। গুন্ডাদের ভোটের দিন বাড়়িতে তালাচাবি দিয়ে আটকে রাখতে চাই। আমরা চাই ভোটারকার্ড দেখার ক্ষমতা দেওয়া হোক কেন্দ্রীয় বাহিনী। রাজ্যপালের কাছে গিয়েছি। রাষ্ট্রপতিকে মেল করেছি। পশ্চিমবঙ্গের সংবিধান শেষ করে দিয়েছে, এটা বলতে চাই। আমরা সংবিধান বাঁচাতে চাই। সাংগঠনিক দুর্বলতা, নেতৃত্বের সংকট পরের কথা জেহাদিদের দিয়ে ভোট লুঠ করছে।'
শুভেন্দুর কথায়,'আমরা ২১টা পেলে খুশি হতাম। বিরোধী দলনেতা আমি। সংগঠনের দায়িত্বে নেই। সংবাদমাধ্যমে এমন শব্দ প্রয়োগ করি না, যাতে বুথের কর্মী হতাশ হয়। আমি এটা চালিয়ে যাব। আমি জাতীয়তাবাদী পরিবার থেকে এসেছি। মুকুল রায়ের মতো আমি সব কেড়ে নেওয়ার পর বিজেপিতে আসিনি। সব ফেলে বিজেপিতে এসেছি। বিজেপি, সনাতন এবং জাতীয়বাদেই আমার অবসর হবে।'
শুভেন্দুর ওই বক্তব্যের পরে বিজেপিতে তীব্র আলোড়ন পড়ে যায়। নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়কের মন্তব্যে রীতিমতো ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হল রাজ্য বিজেপিকে। সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বললেন, 'আমাদের রাজনীতি ১৪০ কোটি মানুষকে নিয়েই। শুভেন্দু আবেগ থেকে বলেছেন। তিনি বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।'
পরে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন শুভেন্দু। বলেন, 'এই স্লোগান (সব কা সাথ, সব কা বিকাশ) প্রধানমন্ত্রীর, থাকবে স্লোগান। বিজেপির সদস্য হিসাবে যন্ত্রণা থেকে বলেছি যে, যারা বিজেরির সঙ্গে থাকবে না, তাদের সঙ্গে থাকব না। এটা রাজনৈতিক বক্তব্য। এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর স্লোগানের কোনও সম্পর্ক নেই। সরকার আর রাজনীতি, দুটো আলাদা।' এই নিয়ে এক্স হ্যান্ডলে পোস্টও করেছেন বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু আরও বলেছেন, 'বিজেপি কর্মী হিসাবে বলেছি। এটা সত্য, সনাতনী হিন্দুরাই বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। মুসলিমরা ভোট দেননি। এতে এই স্লোগানের কোনও সম্পর্ক নেই। আমি বলেছি বিজেপি তাদের সঙ্গেই থাকা উচিত, যে আমার সাথে আছে আমি তার সাথে আছি।'