দেহের পাশ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নোট। ফের SIR-এর কাজের চাপে বিএলওর আত্মহত্যার অভিযোগ। ঘটনাস্থল বাঁকুড়ার রানিবাঁধ। রবিবার সকালে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম থেকে উদ্ধার হল এক প্রধান শিক্ষকের ঝুলন্ত দেহ। মৃত ব্যক্তি ওই এলাকারই বুথ লেভেল অফিসার (BLO)। দেহের পাশ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নোট। সেখানে স্পষ্ট লেখা, 'আমি আর চাপ নিতে পারছি না।'
মৃতের নাম হারাধন মণ্ডল। তিনি বাঁকুড়ার রানিবাঁধ বিধানসভার রাজাকাটা এলাকার মাঝেরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পাশাপাশি রাজাকাটার ২০৬ নম্বর বুথের BLO হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল সাড়ে ন’টা থেকে দশটার মধ্যে কিছু ভোটারের শুনানির নথিপত্র সংগ্রহের কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন হারাধন। এরপর দীর্ঘ সময় তাঁর কোনও খোঁজ না পেয়ে পরিবারের লোকজন স্কুল চত্বরে যান। সেখানে গেট খোলা অবস্থায় পাওয়া যায়। একটি ক্লাসরুমে ঢুকতেই চোখে পড়ে সিলিং ফ্যানে ফাঁস লাগানো দেহ। মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে চাঞ্চল্য।
খবর পেয়ে রানিবাঁধ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে পাঠায়। স্কুল থেকেই উদ্ধার হয় একটি হাতে লেখা চিঠি। সেই চিঠিতে লেখা ছিল, 'আমি আর চাপ নিতে পারছি না, বিদায়। এই BLO কাজের জন্য আমিই দায়ী। এর সঙ্গে কারও যোগ নেই। ভুল আমার। আমার ছেলে কোনও কাজ করতে দেয়নি। আমি কাউকে বিশ্বাস করিনি। সব ঠিক করে ভুল করলাম। ক্ষমা কর আমাকে।' চিঠির নীচে তারিখ দিয়ে স্বাক্ষরও রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।
পরিবারের অভিযোগ, এসআইআর সংক্রান্ত কাজের চাপেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন হারাধন মণ্ডল। মৃতের ছেলে সৌহম মণ্ডল বলেন, 'কোনও ট্রেনিং ছিল না, কোনও নির্দিষ্ট গাইডলাইন ছিল না। আজ বলা হত এটা করতে, কাল বলা হত ওটা করতে। আবার বলা হত, আপনার কাজ আপনি বুঝে করুন। বাবা রাতভর জেগে কাজ করত। SIR-এর চাপ আর নিতে পারছিল না।' পরিবারের দাবি, সেই মানসিক চাপই শেষ পর্যন্ত এমন চরম সিদ্ধান্তে ঠেলে দিয়েছে তাঁকে।
এই ঘটনাকে ঘিরে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, অক্টোবরের শেষদিকে রাজ্যে এসআইআর ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। কমিশনের তরফে বারবার বলা হয়েছিল, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকা বা পরিবারের কারও নাম থাকলে উদ্বেগের কারণ নেই। কিন্তু বাস্তবে এসআইআর প্রক্রিয়া ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন ভয় তৈরি হয়েছে, তেমনই মাঠপর্যায়ের কর্মীদের উপরও বেড়েছে চাপ। ভোটারদের শুনানি, নথি সংগ্রহ, রিপোর্ট আপডেট; সব মিলিয়ে সীমিত সময়ের মধ্যে বিপুল কাজের বোঝা চেপেছে BLO-দের উপর।
এর আগেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসআইআর সংক্রান্ত কাজের চাপ নিয়ে অসন্তোষের খবর সামনে এসেছে। এমনকি ‘দেশছাড়া হওয়ার ভয়’-এর কথা বলে সাধারণ মানুষের আত্মহত্যার অভিযোগও উঠেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সুইসাইড নোট, পারিবারিক বয়ান এবং কাজের চাপ; সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।