ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে এখন হাওয়া গরম। এরমাঝেই ১৩ নভেম্বর রাজ্যের ছ’টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন রয়েছে। নৈহাটি, হাড়োয়া, মেদিনীপুর, তালডাংরা, সিতাই এবং মাদারিহাট ভোট হবে আগামী বুধবার। আরজি কর কাণ্ডের পর এই উপনির্বাচন শাসক শিবির তৃণমূলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা বলাইবাহুল্য।
প্রসঙ্গত, এই ৬টি কেন্দ্রের মধ্যে বর্তমানে মাদারিহাট ছাড়া সবকটি আসন তৃণমূলের দখলে রয়েছে। গতবার তৃণমূল কংগ্রেস মাদারিহাটে ভোট পেয়েছিল ৬১ হাজারের কিছু বেশি। সেই জায়গায় বিজেপির ভোট ছিল ৯০ হাজারের বেশি। নৈহাটিতে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল ৭৭ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে। হাড়োয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ১ লক্ষ ৩০ হাজারের বেশি ভোট। সেই জায়গায় বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৩৮ হাজার ভোট। মেদিনীপুরে তৃণমূল কংগ্রেস ১ লক্ষ ২১ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিল, সেই জায়গায় বিজেপি পেয়েছিল ৯৬ হাজারের বেশি ভোট। তালড্যাংরাতে তৃণমূল কংগ্রেস ৯২ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিল। একইভাবে সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রেও ১ লক্ষ ১৭ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস।
আরজি করের ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি অনেকটাই নষ্ট হয়েছে। এই অবস্থায় উপনির্বাচনে জিতে তাতে প্রলেপ দেওয়া তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নৈহাটি কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের পার্থ ভৌমিক। হাড়োয়া থেকে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম। মেদিনীপুর থেকে জয়ী হয়েছিলেন ঘাসফুল শিবিরের জুন মালিয়া। বাঁকুড়ার তালডাংরা থেকে জয়ী হন তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তী। সিতাই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন তৃণমূলের জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্রে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গা।
কেন্দ্র ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী প্রার্থী এবং দল
নৈহাটি পার্থ ভৌমিক (তৃণমূল)
হাড়োয়া হাজি নুরুল ইসলাম (তৃণমূল)
মেদিনীপুর জুন মালিয়া(তৃণমূল)
তালডাংরা অরূপ চক্রবর্তী(তৃণমূল)
মাদারিহাট মনোজ টিগ্গা(বিজেপি)
সিতাই জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া (তৃণমূল)
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই ৬ জন বিধানসভার সদস্যই নিজের দলের হয়ে ভোটে লড়েন এবং জয়ী হন। সাংসদ হিসেবে শপথগ্রহণের আগে তাঁদের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল। ফলে এই বিধানসভা কেন্দ্রগুলি বিধায়ক শূন্য হয়ে পড়ে। লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান হাজি নুরুল ইসলামের।
এবার চতুর্মুখী লড়াই
শাসক শিবিরের পক্ষে সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন সঙ্গীতা রায়। মাদারিহাট কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পো। নৈহাটিতে প্রার্থী করা হয়েছে সনৎ দে-কে। হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শেখ রবিউল ইসলাম। মেদিনীপুরে তৃণমূলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সুজয় হাজরা। তালড্যাংরা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে ফাল্গুনী সিংহবাবুকে। এদিকে রাজ্যের ছয় আসনে উপনির্বাচনে সবার আগে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে বিজেপি। তবে প্রার্থিতালিকায় আপাত ভাবে কোনও চমক ছিল না। বরং প্রার্থী হিসাবে স্থানীয়দেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হয়েছে ন দীপক কুমার রায়। মাদারিহাট কেন্দ্রে পদ্মশিবিরের প্রার্থী রাহুল লোহার। নৈহাটিতে প্রার্থী করা হয়েছে রূপক মিত্রকে। হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী বিমল দাস। মেদিনীপুরে বিজেপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শুভজিৎ রায়। তালড্যাংরা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে অনন্যা রায় চক্রবর্তীকে। এদিকে এবার উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের জোট হয়নি। ফলত ভোটের ময়দানে লড়াই হতে চলেছে চতুর্মুখী। কোচবিহারের সিতাই কেন্দ্রে এবার বামেদের প্রার্থী হয়েছেন অরুণ কুমার বর্মা। ফরওয়ার্ড ব্লকের তরফে এখানে প্রার্থী করা হয়েছে। মাদারিহাট( এসটি) কেন্দ্রে বামফ্রন্টের প্রার্থী পদম ওঁরাও। তিনি আরএসপি দলের নেতা। নৈহাটিতে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের দেবজ্যোতি মজুমদার বামেদের প্রার্থী হয়েছেন। মেদিনীপুরে বামফ্রন্টের প্রার্থী হয়েছেন সিপিআইয়ের মণি কুন্তল খামরুই। আর তালডাংরা থেকে বামফ্রন্টের প্রার্থী সিপিআইএমের দেবকান্তি মোহন্তি। ৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেসও। সিতাই আসনে কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হরিহর রায়সিংহ। মাদারিহাটে হাত শিবিরের প্রার্থী হয়েছেন চম্প্রমারি। নৈহাটি আসনে কংগ্রেস প্রার্থী পরেশনাথ সরকার। হাড়োয়া আসনে কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হাবিব রেজা চৌধুরী। মেদিনীপুর আসনে শ্যামল কুমার ঘোষকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। আর তালডাংরা আসনে কংগ্রেসের টিকিটে লড়ছেন তুষারকান্তি সন্নিগ্রাহী। এদিকে হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রে
প্রার্থী দিয়েছে আইএসএফ। উপনির্বাচনে এই একটি মাত্র আসনেই প্রার্থী দিয়েছে তারা। এই কেন্দ্রে আইএসএফের প্রার্থী হয়েছেন পিয়ারুল ইসলাম।
এই উপ নির্বাচন রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। রাজ্যের গত ৫ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, উপ নির্বাচনে একচেটিয়া দাপট দেখিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। কিন্তু আরজি করের ঘটনা আদৌ ভোটবাক্সে কোনও প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।