বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের পর শিল্পোন্নয়নের গতি বাড়াতে নবান্নে শিল্প বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার এই বৈঠকে তিনি রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করা লালফিতের দৌরাত্ম্য এবং প্রশাসনিক গাফিলতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেন। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, শিল্পায়নের পথে কোনও ধরনের দেরি সহ্য করা হবে না এবং ফাইল অনুমোদনে অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্টেট লেভেল সিনার্জি কমিটি গঠনের ঘোষণা
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, রাজ্যে শিল্পসংক্রান্ত কাজ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য স্টেট লেভেল সিনার্জি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি প্রতি চার সপ্তাহ অন্তর বৈঠক করবে এবং শিল্পায়ন সংক্রান্ত ফাইল আটকে থাকার সমস্যা সমাধান করবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'গড়িমসির জন্য বাংলার ভবিষ্যৎ যেন বিপন্ন না হয়।'
দুর্নীতির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি
অনেক ক্ষেত্রেই শিল্পপতিদের কাছ থেকে সরকারি অনুমোদনের নামে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এই বিষয়ে কড়া বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'টাকা ছাড়া একপয়সাও এগোয় না, শুনেছি আমি অনেকের কাছে। কেউ টাকা চাইলে সরাসরি অভিযোগ করুন। সরকারি কাজে টাকা চাওয়া অপরাধ।' তিনি জানান, প্রশাসনিক স্তরে স্বচ্ছতা আনতে কড়া নজরদারি চালানো হবে।
ফাইল নিষ্পত্তিতে অনলাইন ব্যবস্থার ওপর জোর
মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, শিল্পসংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্র ও ফাইল অনুমোদনের প্রক্রিয়া অনলাইন পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে হবে, যাতে লালফিতের সমস্যা এড়ানো যায় এবং দুর্নীতির সুযোগ কমে। তাঁর মতে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করলে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হবে এবং শিল্পপতিরা আরও বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন।
বিনিয়োগ আকর্ষণে পরিকাঠামো উন্নয়ন
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে একাধিক শিল্পপতি বাংলায় বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাই রাজ্যে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, দ্রুত অনুমোদন ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি আনতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বসতি উচ্ছেদ নয়, বিকল্প জমির ব্যবহার
বিভিন্ন জায়গায় বহুতল নির্মাণের কারণে বসতি উচ্ছেদের অভিযোগ উঠছে। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানান, বসতি উচ্ছেদ না করে ফাঁকা জমি ব্যবহার করেই নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে হবে।
শিল্প বিকাশের পথে স্বচ্ছতা ও গতির বার্তা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য স্পষ্ট— পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নের গতি বাড়াতে কোনও অনিয়ম সহ্য করা হবে না। বিনিয়োগ আনতে হলে স্বচ্ছতা ও দ্রুততার বিকল্প নেই, তাই প্রশাসনিক স্তরে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাঁর এই উদ্যোগ রাজ্যে শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।