নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) কার্যকর হওয়ার পরেই বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। CAA নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, সিএএ-তে যখনই দরখাস্ত করলেই আপনি নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবেন। রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতার মন্তব্য, 'আমরা থাকতে কারও অধিকার ছিনিয়ে নিতে দেবো না। এর জন্য আমি জীবন দিতেও তৈরি।' স্লোগান তুললেন, 'CAA আমরা মানছি না, মানবো না।'
'সিএএ আসলে পুরোপুরি ভাঁওতা, কোনও স্পষ্টতা নেই'
হাবড়ার সভা থেকে সতর্ক করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, সিএএ আসলে পুরোপুরি ভাঁওতা। কোনও স্পষ্টতা নেই। ২০১৯ সালে এই ভাবেই অসমে ১৩ লক্ষ বাঙালি হিন্দুকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনের আগে প্রতারণা, ছলনা, বঞ্চনা, নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত। মমতার কথায়, 'তার মানে এখন যাদের দরখাস্ত করতে বলা হচ্ছে, তার মানে যারা দরখাস্ত করবেন, নাগরিক থাকা সত্ত্বেও বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবেন। কোনও অধিকার থাকবে না। এটা অধিকার কাড়ার খেলা। এটা হল বিজেপির লুডো খেলা। ভাবছে খেললে ছক্কা, আসলে ওটা হল পুট মানে জিরো। যখনই আপনারা দরখাস্ত করবেন, আপনাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে চলে যাওয়া হবে। একটা মানুষ যদি অধিকার পায় খুশি হবো, কিন্তু কারও নাগরিকত্ব গেলে আমি রুখে দাঁড়াবো। মণিপুরে কত চার্চ পুড়িয়েছে, জানেন আপনারা? মণিপুরের মেয়েদের উলঙ্গ করে নৃত্য করানো হয়েছে,কোথায় ছিলেন? যারা এই সময় সিএএ আবেদন করবেন, আপনার সব অধিকার কেড়ে নেবে। ভোট দিয়েছেন কি দেননি এতদিন? আধার কার্ড ছিল কি ছিল না? জমি আছে কি নেই? তাহলে বুঝুন, এই আইনে যেই দরখাস্ত করবেন, আপনি অবৈধ নাগরিক হয়ে যাবেন। ২-৩টে আসনের জন্য বিজেপি এই খেলা খেলছে।'
ইচ্ছে করেই গতকাল বাছা হয়েছে সিএএ বিজ্ঞপ্তি জারির জন্য
CAA-তে কেন শুধুমাত্র বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকেই বেছে নেওয়া হল নাগরিকত্বের জন্য, কেন মুসলিম সম্প্রদায়কে বাদ রাখা হল, সেই প্রশ্নও তুললেন মমতা। বস্তুত, সোমবার অর্থাত্ ১১ মার্চ সন্ধ্যায় কেন্দ্র সিএএ লাগুর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এই নির্দিষ্ট দিনটি নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর বক্তব্য, ইচ্ছে করেই গতকাল বাছা হয়েছে সিএএ বিজ্ঞপ্তি জারির জন্য। কারণ গতকাল রমজান মাস শুরু হয়েছে। বললেন, 'আফগানিস্তান কেন এল? ভারতের বর্ডার নয়, মায়ানমার কেন এল না? সিএএ এনআরসির সঙ্গে যুক্ত। কোর্টে গিয়েও চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন না। শুধুমাত্র, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা বাদ, মুসলিমরাও বাদ। এটা ভারতীয় সংবিধানে আঘাত।'
মেয়ে বাপের আসতে পারবে না, ছেলে শ্বশুরবাড়ি যেতে পারবে না
দম্পতিদের সতর্ক করে মমতা বক্তব্য, 'এপার বাংলা, ওপার বাংলার অনেক বিয়ে হয়েছে, তাদের কী হবে। তার মানে মেয়ে বাপের আসতে পারবে না, ছেলে শ্বশুরবাড়ি যেতে পারবে না। রাষ্ট্রহীন হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক কনভেশনে পরিস্কার বলা আছে, অনুপ্রবেশকারীরা যেন বৈধ কারণ ছাড়া রাষ্ট্রহীন হয়ে না পড়ে। শরণার্থীরাও আশ্রয়হীন হলে রাষ্ট্র বাধ্য থাকে তাদের আশ্রয় দিতে। খবরদার এই পথে যাবেন না। কোনও সুযোগ সুবিধা পাবেন না। আপনাকে আগে বেআইনি হতে হবে। তারপর আদৌ আপনি আইনি হবেন কিনা, কোনও গ্যারান্টি নেই। এটা বিজেপির জুমলা। অধিকার ডিএম-এর হাতে দিন। যেটা আগে ছিল। এখন যারা নাগরিক ছিলেন, তাঁরাও হয়ে যাবেন বেআইনি। এর কোনও স্পষ্টতা নেই। আমি আইনজীবীদের মত নিয়েছি। কেন নমঃশূদ্রদের আধার কার্ড বাতিল করেছিলেন। করতে হলে, একবছর সময় নিয়ে করতে পারতেন। আপনার সব অধিকার কেড়ে নিল। ফর্মে এক জায়গায় বলা হয়েছে, বাবার বার্থ সার্টিফিকেটও নিয়ে আসতে হবে। আমার তো নেই। আমি মা-বাবার জন্মদিন কবে জানি না। আমরা থাকতে কারও অধিকার ছিনিয়ে নিতে দেবো না, এর জন্য আমি জীবন দিতেও তৈরি।'