ঘূর্ণিঝড় অশনি শক্তি বাড়িয়েই চলেছে। সমুদ্রে এই ঘূর্ণিঝড় ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার বেগে এগিয়ে আসছে উপকূলের দিকে। আর এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে রাজ্য়ের উপকূলবর্তী এলাকায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হাওয়া অফিসের শেষ পাওয়া আপডেট অনুযায়ী শক্তি বাড়িয়ে বিশাখাপত্তনমের দিকে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় অশনি। মঙ্গলবার রাতের দিকে ঢুকবে ওড়িশা উপকূলে। ঘূর্ণিঝড়ের জেরে, আগামী কয়েকদিন দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
অশনি আছড়ে পড়ার আগেই ক্রমশ উত্তাল হচ্ছে সমুদ্র। এই আবহে প্রশাসনের তরফে আগামী ৪৮ ঘণ্টা দিঘার সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যে ফিরতে হবে মৎস্যজীবীদের।
— IMD Kolkata (@ImdKolkata) May 9, 2022
এখন কোথায় অবস্থান করছে অশনি?
আবহাওয়া দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী বর্তমানে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম উপকূলের ৪১০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে এবং ওড়িশা থেকে ৫৯০ কিমি দক্ষিণে রয়েছে ঘূর্ণিঝড় অশনি। তবে মঙ্গলবার দিক পরিবর্তন করে অন্ধ্র থেকে ওড়িশার দিকে বাঁক নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। এর ফলে মঙ্গলবার বাংলার বেশ কিছু জেলায় প্রবল বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টির তীব্রতা বাড়বে মূলত উপকূলের জেলাগুলিতেই।
বৃষ্টির সতর্কতা বাংলা জুড়ে
সাইক্লোন অশনির প্রভাব ইতিমধ্যে বাংলাতে পড়তে শুরু করেছে। সোমবার সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ ছিল। বেলা বাড়তেই প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। হাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, আগামী ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টির পরিমান বাড়বে। এই অবস্থায় সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে দিঘা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা জুড়ে বিশেষ সতর্কতা রয়েছে প্রশাসনের তরফে। সমুদ্রে কাউকে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিভিন্ন জায়গাতে মানুষকে সতর্ক করে মাইকিং করা হচ্ছে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, অশনির প্রভাবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা এবং নদিয়া জেলাতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সোমবার রাত থেকেই ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। সোমবার রাত থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও নদিয়া জেলায়।
ভারী বৃষ্টি কলকাতাতেও
শুধু উপকূলবর্তী এলাকাগুলিই নয়, কলকাতাতেও রয়েছে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। শুক্রবার পর্যন্ত এই বৃষ্টি চলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে শহরে যাতে জল না জমে তার জন্য খালগুলিকে পরিস্কার করার কাজ শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। পাশাপাশি দফায় দফায় পুর আধিকারিকরা বৈঠক করছেন। মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বে এই বৈঠক চলছে। পাম্পিং স্টেশনগুলিকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। আগামী দুদিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকবে শহরের ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ। বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে বিমানবন্দরেও। ঘূর্ণিঝড় অশনি র আশঙ্কায় ছুটি বাতিল করা হল কলকাতা বিমানবন্দরের কর্মীদের।
মৎস্যজীবীদের জন্য সতর্কতা
অশনি শক্তি বাড়ানোর পরই সমুদ্র ফুঁসতে শুরু করেছে। ঢেউের উচ্চতা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে সমুদ্রে নামা নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। ওড়িশার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও সমুদ্র উত্তাল হয়ে গিয়েছে। ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশেও হাইঅ্যালার্ট রয়েছে। সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস হবে, তা ঢেউ আকারে আছড়ে পড়বে উপকূলে। তবে অশনির বাংলাতে ল্যান্ডফলের সম্ভাবনা নেই। উত্তর-পূর্ব দিকে টার্ন নিয়ে স্থলভাগের সমান্তরালভাবে এগিয়ে যাবে সমুদ্র বরাবর। এর প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠবে। যার জেরে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে মূলত বৃষ্টি চলবে ৯ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, সমুদ্রেই তাণ্ডব চালিয়ে ধীরে ধীরে শক্তিক্ষয় করবে অশনি। ঘূর্ণিঝড় থেকে গভীর নিম্নচাপ, তারপর নিম্নচাপ হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটাবে। আর ঝড়-ঝঞ্জার কথা মাথায় রেখে উপকূল সংলগ্ন নদী এবং সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের মৎস্যজীবীদেরও মাঝ সমুদ্র ছেড়ে ডাঙায় ফিরে আসার নির্দেশ জারি করেছে প্রশাসন। নির্দেশ মেনে সমুদ্রে মাছ ধরার ট্রলার ডিঙি নৌকা ধীরে ধীরে ফিরেও আসছে। অশনি আবহে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত জারি রয়েছে এই সতর্কতা। অশনির হাত থেকে যাতে কৃষকরা নিজেদের ফসল রক্ষা করতে পারেন, তার জন্য পথে নেমেছো রাজ্যের কৃষি দফতর। কৃষকদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে অতি ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার আগেই ফসল ঘরে তুলে নেওয়ার জন্য।