হাসপাতালে ফের দালাল-চক্রের অভিযোগ উঠল। এবার এই অভিযোগ উঠল মালদার হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচণ্ডী আর এন রায় গ্রামীণ হাসপাতালে। রোগীর আত্মীয়দের ভুল বুঝিয়ে রক্ত-সহ একাধিক পরীক্ষা করানোর অভিযোগ উঠল দালালদের বিরুদ্ধে। সুশান্ত সিংহ নামে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই রোগীর আত্মীয়র পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। ঘটনায় তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।
জানা গিয়েছে, মালদহের নয় মাইল এলাকার বাসিন্দা দময়ন্তী বর্মন তাঁর স্বামীর জ্বর হওয়ায় বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নেমে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকতেই দালালরা ঘিরে ফেলেন ওই রোগীর আত্মীয়কে। এরপরই তড়িঘড়ি ভর্তি করে দেওয়া হবে এবং তাঁর স্বামীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে একাধিক পরীক্ষার কথা বলা হয়। ওই দালালরা নিজেদের হাসপাতালের কর্মী বলে পরিচয় দেন বলে দাবি।
এরপরেই একটি ল্যাবে ওই রোগীর একাধিক পরীক্ষা করানো হয়। বিনিময়ে ৬৭০ টাকা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে বিষয়টি জানার পর অভিযোগ দায়ের করেন রোগীর স্ত্রী।
এবিষয়ে রোগীর স্ত্রী দময়ন্তী বর্মণ বলেন, 'আমরা সকালে এসেছিলাম। সারারাত গাড়িতে করে এসেছিলাম। সিরিয়াস ছিল পেশেন্ট। এরপর হাসপাতালে ঢুকতেই দেখি ওই লোকটাকে। আমি ভেবেছি হাসপাতালেরই লোক। আমি বলেছিলাম, আগে ডাক্তার দেখবে, তারপর রক্ত পরীক্ষা করবে। কিন্তু ও বলে আগে পরীক্ষা করানো থাকলে পেশেন্ট তাড়াতাড়ি ভর্তি হতে পারবে। এরপর রক্ত পরীক্ষা-সহ অন্য টেস্টের জন্য ৬৭০ টাকা নেয়।'
এদিকে বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতালের পাশাপাশি মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও দালাল চক্রের অভিযোগ উঠেছে। মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেই রোগীর আত্মীয়দের বেআইনিভাবে ওষুধ বিক্রির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যদিও বিষয়টি নিরাপত্তা রক্ষীদের নজরে আসতেই ওই ব্যক্তির পিছু ধাওয়া করতেই ওষুধ ফেলে পালিয়ে যান ওই ব্যক্তি। তবে দুটো ঘটনারই তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সুদীপ্ত ভাদুড়ি। তিনি বলেন, 'বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতালের বিষয়টি নিয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক খতিয়ে দেখছেন। গ্রামীণ হাসপাতালের রোগীর আত্মীয়রা ছাড়াও বহিরাগতরা প্রবেশ করছে। হাসপাতালে চারিদিকে বাউন্ডারি ওয়াল নেই। যার ফলে অনেকেরই আনাগোনা হচ্ছে।' অন্যদিকে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওষুধ বিক্রির দালাল চক্র প্রসঙ্গে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই দু'বার জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।পাশাপাশি বিষয়টি মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
আর এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপির উত্তর মালদহের সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত জানান, তৃণমূলের মদতে এই দালাল চক্রগুলি গজিয়ে উঠছে। সেক্ষেত্রে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনকে বলব অবিলম্বে এই দালাল চক্র বন্ধ হওয়া দরকার। পাল্টা রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী জানান, হাসপাতালগুলিতে দালাল চক্র গজিয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না। আমাদের পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট সজাগ রয়েছে এই বিষয়ে।
মিল্টন পাল।