জনের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ তৃণমূল
বিজেপি সাংসদ জন বারলা যাই বলুন না কেন, বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ জনবাবুকে সমর্থ করুন না কেন, তাঁদের এই দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়েছে উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজেপি কিংবা জন বারলার উদ্দেশ্য নিয়ে মতভেদ থাকলেও বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে তারা কোনও রকম চক্রান্ত মেনে নেবেন না বলে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তৃণমূলের মধ্যে উদ্দেশ্য নিয়ে মতভেদ, লক্ষ্য নিয়ে একতা
কেউ বলছেন, এটা জনের পাবলিসিটি স্টান্ট। আবার কেউ বলছেন কেন্দ্রীয় সরকারে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রকে কিছু রদবদল হতে পারে। এই খবর জানতে পেরে জন লাইমলাইটে বা প্রচারের আলোয় থাকতে এই ধরণের বিতর্কিত বিষয়কে সামনে তুলে আনছে। আবার অনেকে এর পিছনে বিজেপির প্রত্যক্ষ মদত দেখতে পাচ্ছেন। তাঁদের মতে ভোটে হেরে গিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে উত্তরবঙ্গ দখল করে আলাদা রাজ্য তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীত্ব পেতে চায় বিজেপি।
পাল্টা আন্দোলনের হুমকি তৃণমূলের
সব মিলিয়ে বিজেপির যাঁরা জন বারলাকে সমর্থন করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ফুঁসছে তৃণমূল। নেতৃত্ব এমনকী প্রয়োজনে প্রতিটি বিজেপি বিধায়ক, সাংসদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন কেউ কেউ।
উদয়ন গুহর ক্ষোভ
উত্তরের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহ বলেন, রক্ত দিয়ে হলেও বাংলা ভাগ আমরা রুখবো। বিজেপির এই দাবির কোনও সারবত্তা নেই। তারা দুটো আসন বেশি পেয়ে উত্তরবঙ্গে ভাবছেন আলাদা রাজ্য করে মুখ্যমন্ত্রীত্ব অর্জন করবেন। কিন্তু এভাবে তা হয় না। তাঁর দাবি, ক্ষমতা থাকলে সবাই পদত্যাগ করুন। নতুন করে ভোট হোক শুধুমাত্র আলাদা রাজ্যের ইস্যুতে। তাহলে পরিষ্কার হয়ে যাবে কারা আলাদা রাজ্যের পক্ষে, কারা আলাদা রাজ্যের বিরুদ্ধে। বিজেপি শূন্য হয়ে যাবে, এই মুহূর্তে তা হলফ করে বলতে পারি।
রবীন্দ্রনাথের পাল্টা
প্রাক্তন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা কোচবিহারের অন্যতম শীর্ষ নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দাবি করেছেন, জম্মু-কাশ্মীরের মত উত্তরবঙ্গে পিছনের দরজা দিয়ে দখল করতে বিজেপি এই ধরনের প্রস্তাব তুলছে। নিজেদের লোকদের কাজে লাগিয়ে অভিযোগ তুলছে, যাতে এখানে দখল নিয়ে এনআরসির মতো আইন লাগু করে ইচ্ছেমতো দমন-পীড়ন চালাতে পারে। হার তাঁরা সহ্য করতে পারছে না। সে কারণে ঘুরিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, গত দশ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে উন্নয়ন হয়েছে উত্তরবঙ্গে তারপর অনুন্নয়নের কথা মানায় না।
অলক চক্রবর্তীর মন্ত্রীত্বের থিওরি
অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের চা বাগান শ্রমিক আন্দোলন থেকে উঠে আসা জন বারলাকে হাড়ে হাড়ে চেনেন একদা আইএনটিইউসির সর্বভারতীয় সম্পাদক ও বর্তমানে তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের আইএনটিটিইউসি কো-অর্ডিনেটর অলক চক্রবর্তী। তিনি বলেন, জন বারলা বরাবরই ক্ষমতা এবং ফোকাসে থাকতে পছন্দ করে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারে অনগ্রসর শ্রেণি এবং তপশিলি উপজাতি ও জাতি মন্ত্রকে কিছু মন্ত্রিত্বে রদবদল হতে পারে বলে খবর আছে। সম্ভবত সেই খবর পেয়েই গরম বক্তব্য রেখে তপশিলি উপজাতি থেকে মন্ত্রিত্ব পেতে চায় সে। এ কারণেই আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা করছে। এর ফলে যদি কোনও রকম আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে কিংবা এর ভিতর যদি বিজেপি কোনও রকম পদক্ষেপ করার চেষ্টা করে তাহলে প্রতিটি বিজেপি নেতা বিধায়ক সাংসদের বাড়ির সামনে ধরণা বিক্ষোভ শুরু হয়ে যাবে।
সৌরভের প্রতিরোধের হুঁশিয়ারি
আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বারলার বাংলা ভাগের চক্রান্তকে যোগ্য জবাব দিতে তৈরি হচ্ছে ঘাসফুল শিবির।
আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সৌরভ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সাংসদ জন বারলার এই বক্তব্য উত্তরবাংলার মানুষ প্রত্যাখান করেছে। সাংসদের বাংলা ভাগের চক্রান্তে তৃণমূল পথে নামবে। উত্তরবঙ্গের প্রতি জেলায় তৃনমুল কর্মীরা বিজেপির বিরোধিতা করবে। সৌরভ বলেন, সাংসদের বাংলা ভাগের চক্রান্তকে তারই দলের জেলা সভাপতি মেনে নিতে পারেনি। তাই তিনি তৃণমূলে যোগদান করেছেন। সৌরভ বলেন, আলিপুরদুয়ারের মানুষ তৈরি হয়ে আছেন তিনি জেলায় ঢুকলে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
সঞ্জিতের লজ্জা
আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত ধর বলেন, রাজ্যের মানুষের কাছে আমাদের লজ্জা যে আমাদের সাংসদ বাংলা ভাগের চক্রান্ত করছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মদতেই সাংসদ পাগলের প্রলাপ বকছেন। নির্বাচনে রাজ্যের ক্ষমতা না পেয়ে বিজেপি এখন এই সব চক্রান্ত করছে। আলিপুরদুয়ার জেলার মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়ে এখন আফসোস করছে৷ মানুষ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।