
'রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহাধুমধাম, ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম'। পুরী না দিঘা, লোকারণ্য আর মহাধুমধামে এবারের রথযাত্রায় এগিয়ে থাকবে কে? এই নিয়ে চলছে জোর চর্চা। তবে ভক্তের ঢল যে দুই ক্ষেত্রেই নামবে, তা বলার অবকাশ রাখে না। কিন্তু পুজোর নিয়ম? তা-ও কি এক না দিঘা এবং পুরীতে রথযাত্রা পালন হবে আলাদা আলাদা রীতিতে? তথ্য অনুসন্ধান করল bangla.aajtak.in।
উদ্বোধনের পর থেকেই জনপ্রিয়তার নিরিখে পুরীকে টেক্কা দিতে শুরু করেছে দিঘার জগন্নাথ মন্দির। আবার চিরাচরিত ঐতিহ্যের বিচারে পুরীর দ্বাদশ শতাব্দীর জগন্নাথ মন্দিরকেই এগিয়ে রাখছেন ভক্তরা। মূর্তি তৈরির নিমকাঠ থেকে শুরু করে জগন্নাথধাম নাম নিয়ে দুই মন্দির কর্তৃপক্ষের মধ্যে বেজায় বিতর্ক চলেছে। এবার পালা রথযাত্রার। সেক্ষেত্রেও কি তবে ভিন্ন নিয়ম দেখা যাবে দিঘা এবং পুরীতে? কী বলছেন ইসকন কলকাতার ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমন দাস?
bangla.aajtak.in-কে তিনি বলেন, 'একই দিনে দিঘা এবং পুরীতে উৎসব পালন করা হলেও রথযাত্রার যে বিধিগুলি রয়েছে তা সম্পূর্ণ আলাদা। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে রথযাত্রা উৎসব পালন করা হচ্ছে বৈষ্ণব ধর্মের রীতি মেনে। পুরীতে আলাদা মন্ত্র পড়া হয়। দিঘাতে রথযাত্রার মন্ত্রচ্চারণ আলাদা। ওখানে পুরীর শঙ্করাচার্যের নিয়ম অনুযায়ীই রথযাত্রার রীতি পালন হবে।'
সূত্রের খবর, রথযাত্রা অর্থাৎ ২৭ জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের সামনে সোনার ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা ঝাঁট দেওয়ার কথা। যে রাস্তা দিয়ে রথ যাবে ওই রাস্তাই ঝাঁট দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা খরচে দিঘা থানা সংলগ্ন পুরনো জগন্নাথ মন্দিরকে মাসির বাড়ি হিসেবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। সেখানেই রথযাত্রার দিন রথ চেপে যাবেন জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা। পুরীর রথযাত্রার মতোই এখানেও তিনটি সুবিশাল রথ রাখা হয়েছে মন্দির চত্বরে। দারুব্রহ্ম রথে করে মাসির বাড়িতে গেলেও পাথরের বিগ্রহ থেকে যাবে দিঘা জগন্নাথ ধামে।
এদিকে, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রাচীণ প্রথা অনুযায়ী, হিন্দু ছাড়া অন্য কোনও ধর্মের মানুষকে জগন্নাথধামে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এ প্রসঙ্গে রাধারমন দাস বলেন, 'ইসকনের সদস্যরাও প্রবেশ করতে পারেন না পুরীর মন্দিরে। তবে দিঘার মন্দিরে জাত-পাতের কোনও ব্যাপার নেই। জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সকল ভক্ত এখানে পুজো দিতে আসতে পারবেন, রথযাত্রার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন।'
দুই মন্দিরে রথযাত্রা পালনের এই ভিন্ন নিয়মের কথা শুনে ভক্তদের অধিকাংশই আওড়াচ্ছেন, 'পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব--হাসে অন্তর্যামী।'