দুর্গাপুরে ২৩ বছরের এক মেডিক্যাল ছাত্রীর ওপর নৃশংস গণধর্ষণের ঘটনায় মূল পলাতক অভিযুক্তকে ধরিয়ে দিয়েছে তার বোন। পুলিশের কাছে যা, সাহস ও সততার এক বিরল দৃষ্টান্ত। তাঁর উদ্যোগেই মূল অভিযুক্ত সফিককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটেছিল গত শুক্রবার রাতে। ওড়িশার বালাসোরের বাসিন্দা ওই ছাত্রী দুর্গাপুরের এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। অভিযোগ, কলেজ চত্বরের কাছের একটি জঙ্গলে তাঁকে জোর করে টেনে নিয়ে গিয়ে পাঁচজন যুবক মিলে গণধর্ষণ করে।
এরপর থেকেই শুরু হয় পুলিশি অভিযান। একে একে ধরা পড়ে কয়েকজন অভিযুক্ত, তবে মূল অভিযুক্ত সফিক ছিল অধরা। তখনই দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেন তার বোন রোজিনা। তিনি জানতেন ভাই কোথায় লুকিয়ে আছে, এবং সোমবার সকালে নিজেই পুলিশের সঙ্গে নিয়ে যান আন্দাল ব্রিজের নিচে, যেখানে সফিক আসবে বলে তিনি জানতেন। সাফিক পৌঁছনোর মুহূর্তেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
রোজিনা বলেন, 'আমরা গরিব, কিন্তু আত্মসম্মান আমাদের কাছে সবার আগে। ভাই অপরাধী হলে তার শাস্তি হওয়া উচিত। নির্যাতিতার বিচার পেতেই হবে।' তিনি আরও জানান, গ্রেফতার করার সময় সফিক ভয়ে কাঁপছিল। নিজের ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া সহজ ছিল না, কিন্তু রোজিনা জানতেন ন্যায়ের স্বার্থে এটাই সঠিক পথ।
পুলিশ কমিশনার সুনীল চৌধুরী জানিয়েছেন, মোট পাঁচজন অভিযুক্ত, সাফিক, রিয়াজউদ্দিন, অপু বড়ুই, ফিরদৌস এবং নাসিরুদ্দিন। বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছে। তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন, অপহরণ ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রোজিনার পরিবার নিয়ে সমাজে নানা আলোচনা হলেও তিনি বলেন, 'প্রতিদিন পুলিশ বাড়িতে আসছিল, যা পরিবারের জন্য লজ্জার ছিল। কিন্তু ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানদের কোনও দোষ নেই। ওরা শান্তিতে থাকুক।'
এদিকে, নির্যাতিতার চিকিৎসা দুর্গাপুরেই চলছে, পাশাপাশি তাঁর মানসিক অবস্থার ওপর বিশেষ নজর রাখছেন চিকিৎসকরা। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নিজে ফোন করে নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।