স্বামীর খুনের ঘটনায় স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বেরিয়ে এল প্রাক্তন প্রেমিকের নাম। তবে খুনের পিছনে আসলে কে, আসলে কী কারণ, তা নিয়ে এখনও রয়েছে ধোঁয়াশা। পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের ঘটনা। স্বামীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হন স্ত্রী। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রামনগর থানার চন্দনপুর পাটনা গ্রামে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর থানার চন্দনপুর পাটনা গ্রামে গৌতম বেরা নামের এক যুবকের অস্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়ার ঘটনাকে ঘিরে ছড়ায় চাঞ্চল্য। পুলিশি তদন্তে এটি একটি পরিকল্পিত অপরাধ বলে প্রমাণিত হয়েছে। আর এই অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ প্রথমে গৌতমের স্ত্রী অরণ্যাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সে তার প্রাক্তন প্রেমিক অমলেন্দু প্রধানের জড়িত থাকার কথা জানায়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে শনিবার ভোররাতে এগরা থানা এলাকায় অমলেন্দুর দিদির বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই অপরাধের পরিকল্পনা গৌতমের স্ত্রী ও তার প্রাক্তন প্রেমিকের পূর্বপরিকল্পিত ছিল।
পরিবার সূত্রে খবর, চিংড়ি চাষে লোকসানের কারণে গৌতম ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ঋণের বোঝা কমাতে স্ত্রীর গয়নাও বন্ধক রেখেছিলেন তিনি। তা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়শই ঝগড়া হত। ঋণ শোধের জন্য গৌতম কিছুদিন ভিনরাজ্যেও চলে যান। জানা গিয়েছে, গৌতমের অনুপস্থিতিতে অরণ্যা তার প্রাক্তন প্রেমিক অমলেন্দুর সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ শুরু করে। কিছুদিন আগে গৌতম বাড়ি ফেরার পর বিষয়টি জানতে পারেন এবং অশান্তি আরও বেড়ে যায়। অরণ্যা ডিভোর্সের দাবি করলেও গৌতম ডিভোর্স দিতে রাজি ছিলেন না। আর সেই রাগেই অরণ্যা তার প্রাক্তন প্রেমিক অমলেন্দুর সঙ্গে মিলে স্বামীকে মেরে ফেলার প্ল্যান করে।
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমে ঘুমের ওষুধ গুঁড়ো করে গৌতমকে খাওয়ানো হয়। পরে ভোররাতে গৌতমকে মেরে ফেলা হয়। এরপর নিজের দোষ ঢাকতে অরণ্যা চিৎকার চেঁচামেচি ও কান্নাকাটি শুরু করে সে। বাড়ির লোকজন গৌতমকে উদ্ধার করে দিঘা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। গৌতমের বাবা সুবলচন্দ্র বেরার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। গৌতমের পরিবারের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে তাঁর স্ত্রী অরণ্যাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরে অমলেন্দুকে গ্রেপ্তার করে রামনগর থানার পুলিশ। কাঁথি আদালত তাদের ৩ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। ধৃতদের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোটা বিষয়টি জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে হোমিসাইড বলেই উল্লেখ করা হয়। মৃত যুবকের গলায় দাগ পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পুলিশের অনুমান, গলা টিপে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে ওই যুবককে।
রিপোর্টার- প্রসেনজিৎ সাহা